ভারতীয় ধনকুবেরদের হলটা কী! ২০২৩ সালের শুরুতেই যেন ঝটকা! কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন দেশের নামী শিল্পপতিরা। যার জেরে তাঁদের সম্পত্তির অঙ্কটাও কমেছে। এই বিত্তবানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে চর্চিত, তিনি গৌতম আদানি। তবে শুধু আদানি নন, তার সংস্থার বিপুল লোকসানের গুঁতোয় মুকেশ অম্বানী, রাধাকিষান দামানির মতো শিল্পপতিরাও লোকসানের মুখোমুখি হলেন।
দেশের অন্যতম ধনকুবের গৌতম আদানি। এ বছরের শুরুতেই তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। আমেরিকার লগ্নি গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী নাকি কারচুপি করে নিজেদের শেয়ারের দর বাড়িয়েছে। এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশে।
আমেরিকার সংস্থার এই দাবি প্রকাশ্যে আসার পরই রাতারাতি লোকসানের মুখে পড়েছেন আদানি। মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার।
বছরের শুরুতে সেরা ১০ ধনকুবেরের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন আদানি। আমেরিকার সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর এই তালিকায় ৩০তম স্থানে নেমেছেন এই শিল্পপতি।
চলতি বছরে ৮০৬০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে আদানির। এই বিপর্যয় সামলে এখন ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তিনি।
ক্ষতির মুখে পড়েছেন আরও এক ধনকুবের মুকেশ অম্বানী। রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান তিনি। দেশ তো বটেই এশিয়ারও অন্যতম ধনী ব্যক্তি অম্বানী। তবে চলতি বছরের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি তাঁর।
অস্থির শেয়ার বাজারে গত ২ মাসের মধ্যে ৪৪ হাজার ৬১৮ কোটিরও বেশি টাকার লোকসান হয়েছে অম্বানীর। এর জেরে মুকেশের মোট সম্পত্তির অঙ্কটাও কমেছে।
ব্লুমবার্গের এক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, বর্তমানে মুকেশ অম্বানীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮১৭০ কোটি ডলার। সেরা ১০ ধনকুবেরের তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছেন তিনি।
আদানি, অম্বানীদের মতোই দেশের আরও এক ধনকুবের তিনি। তাঁর নাম রাধাকিষান দামানি। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ডি-মার্টের প্রতিষ্ঠাতারও এই বছরের শুরুটা ভাল হয়নি।
গৌতম, মুকেশদের মতো দামানিও লোকসানের মুখোমুখি হয়েছেন। তার মূল কারণ অবশ্যই অস্থির শেয়ার বাজার। ফলে তাঁরও সম্পত্তির অঙ্কটা কমেছে। দেশে ধনকুবেরদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন। কিন্তু লোকসানের কারণে সেই জায়গা খোয়াতে হয়েছে দামানিকে।
ব্লুমবার্গের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে দামানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ।
ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে যে, মোট ২২ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে দামানির। যার জেরে বিশ্বে ধনকুবেরদের তালিকায় ৯৭তম স্থানে ঠাঁই হয়েছে তাঁর।
এই মুহূর্তে দামানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৬৭০ কোটি ডলার। এই ক্ষতি সামলে আবার লাভের মুখ দেখতে মরিয়া এই শিল্পপতি।
তবে দামানির তুলনায় আদানি এবং অম্বানীদের লোকসান অনেক বেশি। বিশেষ করে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার জেরে বিপাকে পড়েছে ওই শিল্পগোষ্ঠী।
কখনও লাভ, আবার কখনও ক্ষতি— বণিক মহলে এটা ঘটেই থাকে। কিন্তু একই সঙ্গে দেশের এই নামী শিল্পপতিরা লোকসানের মুখোমুখি হলেন। তাই অনেকেই বলছেন, এ বছরটা নাকি ভারতীয় শিল্পপতিদের জন্য ‘পয়া’ নয়। এখন দেখার, এই লোকসান সামলে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ান এই ধনকুবেররা।