দিন কয়েক আগেই মধ্যপ্রদেশের কুর্সিতে বসেছেন তিনি। তবে শাসনে আসার পর থেকেই বিতর্ক যেন তাঁর পিছু ছাড়ছে না। প্রথমে মাইক ব্যবহার, আমিষ খাবার নিয়ে নিষেধাজ্ঞার পরে এ বার সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের ভোট নিয়ে নতুন করে আলোচনার মুখে তিনি।
সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন মোহন যাদব। মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী গো-হারা হেরেছেন। সদ্য নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মোহনের এই রূপ ফল কেউ আশা করেননি।
৫০ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র পাঁচ জনের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন মোহন।
প্রাক্তন কুস্তিগির মোহন মধ্যপ্রদেশ কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হলেও বৃহস্পতিবার দিল্লি যাননি।
প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর জন্য ভোপালেই ছিলেন। নির্বাচনে ব্রিজভূষণ সমর্থিত প্রার্থী হলেও প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি।
সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সহ-সভাপতির পদ চারটি। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে সব থেকে বেশি ৪৪টি ভোট পেয়েছেন পঞ্জাবের কর্তার সিংহ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২টি ভোট পেয়েছেন বাংলার অসিতকুমার সাহা।
তৃতীয় এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি হয়েছেন মণিপুরের এন ফোনি (৩৮টি ভোট) এবং দিল্লির জয়প্রকাশ (৩৭টি ভোট)। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সেই অর্থে লড়াই করতেই পারেননি।
কয়েক দিন আগে মোহনের উপরেই আস্থা রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৬৩টি আসনে জিতেছে। শিবরাজ সিংহ চৌহানের পর মোহনকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগে গত জুলাই মাসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মোহন। গত অগস্টে হওয়ার কথা ছিল সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচন।
কিন্তু পঞ্জাব-হরিয়ানা হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের জন্য নির্বাচন পিছিয়ে যায়। মোহনের পরাজয় অবশ্য সংস্থায় ব্রিজভূষণের নিয়ন্ত্রণে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কারণ, অধিকাংশ আসনেই জয় পেয়েছেন ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠ প্রার্থীরা।
সম্প্রতি তাঁর রাজ্যে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন তিনি। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এই বিধিনিষেধ সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘‘ভারত সরকার যে ‘খাদ্য নিরাপত্তা বিধি’ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে খোলাবাজারে মাছ, মাংস বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করার কথা বলেছে, আমরা তা কঠোর ভাবে অনুসরণ করব।’’
মধ্যপ্রদেশে এই বার শিবরাজ সিংহ চৌহানের বদলে ‘অচেনা’ মুখকে তুলে এনে চমক দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
উজ্জয়িনী-দক্ষিণ কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক মোহন। ভোপালে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে দলের বিধায়কদের নিয়ে এক বৈঠকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়।
শৈশব অনটনের মধ্যে দিয়েই কেটেছে মধ্যপ্রদেশের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মোহনের। তাঁর বাবা পুনমচাঁদ যাদব একটি কারখানায় কাজ করতেন। খুব সচ্ছল পরিবারে বড় হননি তিনি। অনটনের মধ্যেও নেতা হওয়ার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তিনি।
২০ বছর আগে ২০০৩ সালে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ার জন্য টিকিট পেয়েছিলেন মোহন। উজ্জয়িনীর বড়নগর আসনে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে।
কিন্তু সেখানকার তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক শান্তিলাল ধাবই মোহনকে টিকিট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তাঁর চাপের মুখে পড়ে শেষমেশ মোহনকে প্রার্থিপদ থেকে সরিয়ে শান্তিলালকে ভোটে লড়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
সে দিন সেই ঘটনার কোনও পাল্টা প্রতিবাদ করেননি মোহন। বরং হাসিমুখেই বিষয়টিকে মেনে নিয়েছিলেন।
তবে, সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচনে তাঁর হেরে যাওয়ার ফল কী ভাবে তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এই ফলাফলে জিতে সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি পদে বসেন সঞ্জয় সিংহ, যিনি ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠ। সেই প্রতিবাদে কুস্তিগির সাক্ষী মালিক কুস্তি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।