মাঝে আর দুটো মাস, অযোধ্যার নবনির্মিত রামমন্দিরে তার পরেই ফিরবে ঈশ্বরের বিগ্রহ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ‘রামলালা’ আসবেন তাঁর জন্য কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে বানানো মন্দিরে। অযোধ্যা তাই সাজতে শুরু করেছে সেই শুভদিনের প্রস্তুতিতে।
রামলালা ফিরবেন। সেই ফেরা তো সাধারণ হতে পারে না! এত দিন তাঁর নিত্যপুজো চলছিল কিছু দূরের একটি অস্থায়ী মন্দিরে। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে আসা হবে নতুন মন্দিরের গর্ভগৃহে। অযোধ্যার মন্দির কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, সেই কাজের ভার তাঁরা দেবেন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
অর্থাৎ শিশু রামের মূর্তিকে নিজে হাতে বহন করে এনে অযোধ্যার নতুন রামমন্দিরে প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আগামী ২২ জানুয়ারি, মকর সংক্রান্তির ঠিক এক সপ্তাহ পরে, অযোধ্যার রামমন্দিরে রামের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার দিন।
ওই দিনই অস্থায়ী মন্দির থেকে শিশু রামের মূর্তিকে নিয়ে আসার কথা মূল মন্দিরে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, শীঘ্রই সেই দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ করে প্রস্তাব যাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে।
অযোধ্যার মূল মন্দির যেখানে তৈরি হচ্ছে, সেখানে থেকে আধ কিলোমিটার দূরে অস্থায়ী মন্দিরটি।
মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে রাজি হলে ওই আধ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে আসতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
শিশু রামের মূর্তি হাতে থাকলে জুতো পরতে পারবেন না মোদী। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রোটোকল ভেঙেই ওই রাস্তা খালি পায়ে হেঁটে আসতে হবে তাঁকে। তার পর মূর্তিটিকে গর্ভগৃহে রাখবেন তিনি।
নতুন মন্দিরের গর্ভগৃহে শিশু রামের মূর্তি রাখা হবে একটি পবিত্র স্থানে। তবে এই বিগ্রহটি সারা বছর দেখতে পাবেন না দর্শনার্থীরা। অযোধ্যা মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এটি রামের ‘চল মূর্তি’। বিশেষ দিনেই মন্দিরে আনা হবে এই মূর্তিকে।
আর মন্দিরে সারা বছর রামের যে মূর্তি থাকবে, সেটি ‘অচল মূর্তি’। ২২ জানুয়ারি সেই মূর্তি গর্ভগৃহে স্থাপন করে তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
ইতিমধ্যেই রামমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচ ফুট উচ্চতার তিনটি নতুন মূর্তি তৈরি করানো হয়েছে রামমন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে।
তবে তার মধ্যে কোনটি গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।
সূত্রের খবর, তিনটি মূর্তির মধ্যে দু’টি মূর্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে অযোধ্যা রামমন্দিরের অছি পর্ষদ।
এর মধ্যে একটি রাজস্থানের শ্বেতমর্মরে তৈরি মূর্তি। অন্যটি তৈরি করা হয়েছে কর্নাটকের গাঢ় রঙের গ্রানাইটে।
এর মধ্যেই একটি মূর্তিতে ওই দিন প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য পুজো করা হবে। অন্য মূর্তিটিও রেখে দেওয়া হবে। পরবর্তী কালে মন্দিরের দ্বিতীয় তল রাম দরবার তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে সেখানে রাখা হবে দ্বিতীয় মূর্তিটিকে।
নতুন মন্দিরের গর্ভগৃহে চক্ষুদান করা হবে রামলালার নতুন মূর্তিতে। সেই উপলক্ষে বড় পুজোর আয়োজন করেছেন রামমন্দির কর্তৃপক্ষ।
তবে পুজোর আগের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হবে আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি, মকর সংক্রান্তির ঠিক পর দিন থেকেই।
নতুন রামলালার মূর্তিকে সয়যূ নদীর জল এবং হিন্দু ধর্মে পবিত্র বলে গণ্য হওয়া অন্যান্য নদীর জলে স্নান করানো হবে সেই দিন। তার পর সেই মূর্তি নিয়ে অযোধ্যা শহর ভ্রমণ করা হবে প্রতীকী ভাবে।
এর পরের দিনগুলিতেও মূর্তি নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করার পর ২২ জানুয়ারি বৈদিক মতে পুজো এবং প্রার্থনা-সহ প্রাণপ্রতিষ্ঠার পুজো হবে।
প্রধানমন্ত্রী নিজে বসবেন সেই পুজোয়। তিনিই হবেন মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার পুজোয় যজমান। তাঁর সঙ্গে পুজোয় বসবেন দেশের বিভিন্ন মন্দিরের প্রধান পূজারীরাও।
সংবাদ সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মূল পুজোর পর প্রার্থনা পর্ব শেষে শিশু রামের পুরনো মূর্তি বা চল মূর্তিকে রাখা হবে পবিত্র স্থানে। আর গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করা হবে অচল মূর্তি।
গোটা প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন হবে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিশু রামের চল মূর্তিটি মূল মন্দিরে নিয়ে আসার সময়ে মোদীর সঙ্গী হবেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতও।
এ ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ যাবে ৮০০০ অতিথির কাছে। যার মধ্যে ৩৫০০ জন দেশের বিভিন্ন সন্ন্যাসী এবং বিভিন্ন মঠ মন্দিরের প্রধান পদাধিকারী। বাকিদের মধ্যে থাকবেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা।
দেশের গণ্যমান্যদের আমন্ত্রণ জানানো হবে ওই অনুষ্ঠানে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে শিল্পপতিরাও থাকবেন সেই অনুষ্ঠানে।
আমন্ত্রণ জানানো হবে বিভিন্ন পেশার কৃতীদের। নামী চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, অভিনেতা, খেলোয়াড়, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা থাকবেন সেই তালিকায়।
এ ছাড়া আমন্ত্রণ জানানো হবে দেশের সমস্ত পদ্ম সম্মান প্রাপক এবং ভারত রত্নদেরও।
দেশের কিছু রাজ্যের প্রধান এবং কিছু দেশের রাষ্ট্রনেতারও আমন্ত্রণ থাকবে রামমন্দিরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার ওই অনুষ্ঠানে।
মন্দির সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ৮০০০ আমন্ত্রিত অতিথির সবার বসার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে মন্দির চত্বরে। তাঁরা প্রত্যেকে যাতে অনুষ্ঠান দেখতে পান, সেই বন্দোবস্তও থাকবে।
তবে গোটা দেশেই এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন মাধ্যমে শুরু থেকেই রামমন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পুজোর অনুষ্ঠানটি দেখতে পাবেন দেশবাসী।