মাহিন্দ্রার ‘থর’। গাড়ি সমঝদার হলে এই মডেল পছন্দ হতে বাধ্য। লং ড্রাইভে হোক বা মরুভূমিতে, এ গাড়ির থেকে ভাল সঙ্গী আর নেই। সেই ‘থর’ কে নকশা করেছেন জানেন? রামকৃপা অনন্তন। কে তিনি?
৪৯ বছরের রামকৃপা পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। দেশের সেরা গাড়ি নকশাকারদের মধ্যে অগ্রণী তিনি। মাহিন্দ্রা ‘থর’-এর পাশাপাশি বোলেরো গাড়িরও নকশা করেছেন তিনি।
রাজস্থানের বিআইটিএস পিলানি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাশ করেছেন রামকৃপা। বম্বে আইআইটি থেকে ডিজাইনিং প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।
এক সময় মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রাতে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে নিজের স্টুডিয়ো শুরু করেছিলেন রামকৃপা। সেই সংস্থা সম্প্রতি চুক্তি করেছে ওলা ইলেক্ট্রিকের সঙ্গে।
মাহিন্দ্রার ‘থর’ গাড়ি তৈরির নেপথ্যে অনেকে রয়েছেন। তবে রামকৃপার ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। তাঁর নকশা করা এই গাড়িই নতুন জোয়ার এনেছে এসইউভি গাড়ির দুনিয়ায়।
‘থর’ গাড়িতে রয়েছে চারটি আসন। তিনটি দরজা। গাড়ি টানে ছ’টি স্পিড ম্যানুয়াল ট্রান্সিমিশন। জনপ্রিয় এসইউভিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যবে থেকে বাজারে এসেছে, তবে থেকে এর চাহিদা আকাশছোঁয়া। আবেদন করে দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর তবেই মেলে গাড়ি।
স্নাতক পাশ করার পর ১৯৯৭ সালে মাহিন্দ্র সংস্থায় যোগ দেন রামকৃপা। ইন্টিরিয়র ডিজাইনার হিসাবে তখন কাজ করতেন তিনি।
২০০৫ সালে ওই সংস্থারই ডিজাইন বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন রামকৃপা। তিনি এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন দলই ‘বোলেরো’, ‘জাইলো’, ‘স্করপিয়ো’র মতো গাড়ির নকশা করেছেন।
এই তিন গাড়ি বাজারে দারুণ সফল। এর পর ২০০৭ সালে ‘এক্সইউভি ৫০০’-র নকশা পরিকল্পনার কাজে হাত দেন রামকৃপা। চিতার থেকে প্রভাবিত হয়ে সেই গাড়ির নকশা করেছিলেন তিনি।
পরের চার বছর রামকৃপা এবং তাঁর সহকারীরা ‘এক্সইউভি ৫০০’-র নকশা করেন। টুকটাক বদলের পর শেষ পর্যন্ত সেই নকশা গৃহীত হয়। ২০১১ সালে বাজারে আসে গাড়িটি। হুড়মুড়িয়ে বিক্রি হতে থাকে গাড়ি।
‘এক্সইউভি’র সাফল্যের পর ‘টিইউভি ৩০০’, ‘কেইউভি ১০০’ গাড়ির নকশা করেন রামকৃপা। ‘এসইউভি’র পাশাপাশি মাহিন্দ্রা এবং ‘মারাজ়োর এমপিভি’ (মাল্টিপারপাস ভেহিকল) গাড়ির নকশা করেন তিনি। বেশি যাত্রী মিলে আরামে সফর করার জন্য তৈরি করা হয় এই গাড়ি।
যদিও বাকিগুলির মতো ‘কেইউভি ১০০’ তত সাফল্য পায়নি। এর বিক্রিও উল্লেখযোগ্য নয়।
২০২১ সালের শেষে মাহিন্দ্রা সংস্থা ছাড়েন রামকৃপা। প্রায় দু’দশকেরও বেশি সময় সেখানে কাটিয়েছিলেন তিনি।
তার আগেই মাহিন্দ্রা গোষ্ঠীতে যোগ দেন ডিজাইনার প্রতাপ বোস। ব্রিটেনের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডে মাহিন্দ্রা অ্যাডভান্সড ডিজাইন ইউরোপ কেন্দ্র গঠন করে ওই গোষ্ঠী। তারই মাথায় বসেন প্রতাপ। তার পরেই ইস্তফা রামকৃপার।
ইস্তফার পর নিজের সংস্থা তৈরি করেন রামকৃপা। গত অগস্টে ওলা ইলেক্ট্রিকের সঙ্গে চুক্তি হয় তাঁর সংস্থার। সংস্থার দু’চাকা নকশার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। শীঘ্রই বাজারে আসবে ওলার চার চাকা। তারও নকশা করছেন রামকৃপা।
ওলা ইলেক্ট্রিক দেশের বৈদ্যুতিন গাড়ি নির্মাণ সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। খুব শীঘ্রই তাদের গাড়ি আনছে বাজারে। দাম পড়বে ১৫ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা। সেই গাড়িরও নকশা করছেন রামকৃপা।
স্নাতকোত্তর পড়ার সময় থেকে গাড়ির প্রতি দারুণ ভালবাসা রামকৃপার। অবসরে কী করেন? নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সে কথা। সুযোগ পেলেই গাড়ির শোয়ে চলে যান তিনি। আরও একটি জিনিস করে থাকেন। রামকৃপা জানিয়েছেন, লন্ডন বা প্যারিসের ব্যস্ত রাস্তার এক কোণে বসে থাকেন। অপেক্ষা করেন, কখন গর্জন করে ছুটে যাবে একটা ল্যাম্বর্ঘিনি বা স্পোর্টস কার!