বাবা ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি পরিচালনা এবং প্রযোজনার সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু এত বড় তারকার পুত্র হয়েও কেরিয়ারের ঝুলিতে একের পর এক ফ্লপ ছবি পুরে গিয়েছেন ফিরোজ় খানের পুত্র ফারদিন খান।
১৯৭৪ সালের ৮ মার্চ মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম ফারদিনের। আমেরিকার কলেজ থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। কিন্তু অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে আবার মুম্বইয়ে ফিরে আসেন।
মুম্বই ফিরে সেখানকার এক খ্যাতনামী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অভিনয় শেখেন ফারদিন। পুত্র অভিনয়ে নামতে চান দেখে তাঁকে বলিউডে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেন ফিরোজ়।
১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রেম আগন’ নামের একটি হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন ফিরোজ়। এই ছবির মাধ্যমেই হিন্দি ফিল্মজগতে আত্মপ্রকাশ করেন ফারদিন।
‘প্রেম আগন’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান ফারদিন। তাঁর বিপরীতে এই ছবিতে অভিনয় করেন মেঘনা কোঠারি। কিন্তু ফারদিনের কেরিয়ারের প্রথম ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
প্রথম ছবি মুক্তির দু’বছর পর ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় ফারদিনকে। সুনীল শেট্টি এবং ঊর্মিলা মাতন্ডকরের মতো বলি তারকারাও এই ছবিতে অভিনয় করেন। কিন্তু দর্শকমনে ফারদিনের অভিনয় সে অর্থে ছাপ ফেলতে পারেনি।
২০০১ সালে ‘প্যার তুনে কয়া কিয়া’, ‘লভ কে লিয়ে কুছ ভি করেগা’ এবং ‘হম হো গয়ে আপকে’ নামের তিনটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন ফারদিন। ‘প্যার তুনে কয়া কিয়া’ ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় পরিচিতি পান অভিনেতা।
তার পর ‘কুছ তুম কহো কুছ হম কহে’, ‘ওম জয় জগদীশ’, ‘ফিদা’, ‘ভূত’, ‘খুশি’, ‘নো এন্ট্রি’, ‘শাদি নম্বর ১’, ‘জাস্ট ম্যারেড’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন ফারদিন। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে পারেনি।
২০০৭ সালে সাজিদ খানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হে বেবি’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার, বিদ্যা বালন, রীতেশ দেশমুখ এবং ফারদিন খান। ছবিটি বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে। কিন্তু ছবির সমস্ত প্রশংসা নিয়ে যান অক্ষয় এবং বিদ্যা।
‘হে বেবি’র পর ‘ডার্লিং’, ‘জয় বীরু’, ‘লাইফ পার্টনার’, ‘অ্যাসিড ফ্যাক্টরি’, ‘অল দ্য বেস্ট: ফান বিগিনস’, ‘দুলহা মিল গয়া’র মতো হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় ফারদিনকে। কিন্তু সেই ছবিগুলিও বক্স অফিসে ব্যবসা করেনি।
২০১০ সালে বড় পর্দায় শেষ অভিনয় করেন ফারদিন। ‘দুলহা মিল গয়া’ ছবিতে সুস্মিতা সেন এবং ইশিতা শর্মার সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় ফারদিনকে। এই ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেন শাহরুখ খান।
‘দুলহা মিল গয়া’ ছবির পর আর কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি ফারদিনকে। ১২ বছরের কেরিয়ারে মাত্র ২১টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন ফিরোজ়-পুত্র। কিন্তু বক্স অফিসে ‘হে বেবি’ ছাড়া কোনও ছবিই ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। ‘হে বেবি’র সাফল্যও যায় অক্ষয় এবং বিদ্যার দিকে।
২০১০ সালে অভিনয়ের পর বলিপাড়া থেকে দীর্ঘকালীন বিরতি নেন ফারদিন। ১৩ বছর বড় পর্দার সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখেননি অভিনেতা।
অভিনয় থেকে বিরতি নিলেও সমাজমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন ফারদিন। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা আড়াই লক্ষের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, ১৩ বছরের বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফারদিন। শুধুমাত্র বড় পর্দায় নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও নাকি আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘বিস্ফোট’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে ফারদিনকে। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন সঞ্জয় গুপ্ত।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান ছবি ‘রক, পেপার, সিসর্স’ ছবির অনুকরণেই নাকি ‘বিস্ফোট’ ছবির চিত্রনাট্য নির্মাণ করা হয়েছে। ফারদিনের সঙ্গে বলি অভিনেতা রীতেশ দেশমুখকেও এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যেতে পারে বলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে।
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পরিচালনায় নেটফ্লিক্স ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার কথা ‘হিরামান্ডি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ের। এই সিরিজ়ে মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিন্হা, অদিতি রাও হায়দারি, সঞ্জীদা শেখ, সারমিন সেগলের মতো তারকাদের অভিনয় করতে দেখা যাবে।
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ‘হিরামান্ডি’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যেতে পারে ফারদিনকেও। ২০২৪ সালে ‘বিস্ফোট’ ছবির পাশাপাশি ‘হিরামান্ডি’ ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর ফারদিন অভিনয়জগতে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেন কি না সেটাই দেখার।