ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ। অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতেও। অভিনয়কে পেশা হিসাবে নির্বাচন করে আয়ও মন্দ করছিলেন না। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে অভিনয় থেকে সরে যান তিনি। শুরু করেন সব্জি বিক্রি করা। সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন রাজেশ কুমার।
১৯৭৬ সালের ২০ জানুয়ারি বিহারের পটনায় জন্ম রাজেশের। পড়াশোনার সূত্রে দিল্লি চলে যান তিনি। সেখান থেকেই কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
গণমাধ্যম নিয়ে পড়াশোনা করবেন বলে দিল্লি থেকে মুম্বই যান রাজেশ। রাজেশের এক বন্ধু পেশায় চিত্রনাট্যকার। মুম্বইয়ে থাকতেন তিনিও। সেই বন্ধুই রাজেশকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন।
‘এক মহল হো স্বপ্নো কা’, ‘ঘর এক মন্দির’, ‘কুসুম’, ‘কৃষ্ণ অর্জুন’-এর মতো একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় রাজেশকে। অধিকাংশ সময় কৌতুকাভিনেতার চরিত্রেই অভিনয়ের সুযোগ পেতেন তিনি।
‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’ এবং ‘বা বহু অওর বেবি’ ধারাবাহিকে রাজেশের অভিনয় নজর কাড়ে। রাতারাতি ছোট পর্দার কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দায়ও অভিনয়ের সুযোগ পান রাজেশ। ‘সুপার নানি’, ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার ২’, ‘হাড্ডি’, ‘রৌতু কা রাজ়’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
রাজেশের কেরিয়ার যখন সাফল্যের চূড়ায়, তখন অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে তার কারণও জানিয়েছেন রাজেশ।
রাজেশ জানান, ২০১৭ সালে অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চাষাবাদ সংক্রান্ত একটি স্টার্টআপ খুলবেন বলে পরিকল্পনাও করে ফেলেন তিনি। ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য রাজেশ তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অনেকে আশ্বাস দিয়েও অর্থ বিনিয়োগ করেননি বলে জানান রাজেশ।
পডকাস্টে রাজেশ বলেন, ‘‘এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা আমার স্টার্টআপের কথা শুনে খুব আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আসল সময় তাঁদের আর দেখা পাওয়া যায়নি। কয়েক জন বন্ধু অবশ্য টাকা দিয়েছিলেন। আমিও দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ব্যবসা দাঁড়ায়নি।’’
ব্যবসা ডুবে যাওয়ার পর রাজেশ তাঁর পুত্রের স্কুলের সামনে গিয়ে সব্জি বিক্রি করতেন। তিনি বলেন, ‘‘আমায় সব্জি বিক্রি করতে দেখে লোকজন ভাবত আমি বোধহয় পাগল হয়ে গিয়েছি। এক দিন আমার ছেলে আমায় সব্জি বিক্রি করতে দেখে ফেলেছিল। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত ও। আমায় দেখামাত্র ও ওর স্কুলের শিক্ষকদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে যেন সকলে আমার কাছ থেকে সব্জি কেনেন।’’
রাজেশের পুত্রের বন্ধুবান্ধবেরাও নাকি অন্য ক্লাসে গিয়ে রাজেশের কাছ থেকে সকলকে সব্জি কেনার অনুরোধ করেছিল বলে দাবি অভিনেতার। টাকাপয়সার হিসাব ঠিকমতো রাখতে পারতেন না বলে ব্যবসায় প্রচুর লোকসান করে ফেলতেন তিনি। সব্জি বিক্রির সময় প্রতি কেজিতে ২২ থেকে ২৫ টাকা লোকসান হত বলে দাবি করেছেন তিনি।
রাজেশ জানান, টানা পাঁচ বছর ধরে তিনি সব্জি বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি অঙ্কে খুব কাঁচা। খুব ক্ষতি হয়েছিল। ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা লোকসান করে ফেলেছিলাম। এক কোটি টাকা ধারও নিয়েছিলাম। দেনায় ডুবে গিয়েছিলাম আমি।’’
রাজেশ বলেন, ‘‘যাঁরা আমার ব্যবসায় টাকা ঢেলেছিলেন, তাঁদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা ছিল। কৃষকেরাও জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের সকলের কাছে আমায় জবাব দিতে হত। সে কারণেই আবার অভিনয় শুরু করি আমি।’’
চলতি বছরে শাহিদ কপূর এবং কৃতি শ্যাননের সঙ্গে ‘তেরি বাতো মে অ্যায়সা উলঝা জিয়া’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রাজেশকে।
শুধু বড় পর্দায় নয়, রাজেশ পা রেখেছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও। ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ ওয়েব সিরিজ়ের তৃতীয় সিজ়নে সম্প্রতি রাজেশের অভিনয় দেখা গিয়েছে।