এক বার দেশের মাটিতে, আর এক বার বিদেশে প্রমোদতরীতে ভেসে প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠান সারলেন মুকেশ অম্বানীর পুত্র অনন্ত অম্বানী এবং তাঁর বাগ্দত্তা রাধিকা মার্চেন্ট। আগামী ১২ জুলাই মুম্বইয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন দু’জনে। প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানে যে আড়ম্বরের কোনও কমতি ছিল না, তা ছবি প্রকাশ্যে আসতেই বোঝা গিয়েছে। এক একটি ছবি দেখলে মনে হয় যেন রূপকথার গল্প। অম্বানী-পুত্রের জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি করার নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, তিনি আসলে মুকেশের প্রিয়জন।
অনন্ত এবং রাধিকার প্রথম প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠান হয়েছিল গুজরাতের জামনগরে। চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে পর পর তিন দিন ধরে জামনগরে হয় প্রথম অনুষ্ঠানটি। অনন্ত-রাধিকার প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য সেখানে হাজির হয়েছিল প্রায় গোটা বলিউড। ছিলেন রিহানার মতো আন্তর্জাতিক তারকা। মার্ক জ়াকারবার্গ, ইভাঙ্কা ট্রাম্পরাও এসেছিলেন। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন জোসেফ রাধিক। পুত্রের জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তগুলি আরও বিশেষ করে তুলতে জোসেফকে ছবি এবং ভিডিয়ো তোলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুকেশ নিজেই।
প্রথম প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানের পর জুন মাসে দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে ভেসে অতিথিদের নিয়ে ইটালি ভ্রমণে গিয়েছিলেন অনন্ত-রাধিকা। দ্বিতীয় বারও জৌলুস কিছু কম ছিল না। তিন দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আমেরিকান পপ তারকা কেটি পেরি। এ ছাড়াও গেয়েছিলেন পিট বুল, ব্যাক স্ট্রিট বয়েজ়ের মতো ব্যান্ডের সদস্যেরা। বলিউডের গুরু রণধাওয়া পারফর্ম করেছিলেন। খ্যাতনামী আফ্রিকান ডিজে ব্ল্যাক কফিও একটি বিশেষ অনুষ্ঠান করেছিলেন। এই অনুষ্ঠানটিও ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন জোসেফ। দেশ-বিদেশের এত চিত্রগ্রাহক থাকতে হঠাৎ জোসেফকেই কেন দায়িত্ব দিল অম্বানী পরিবার?
ভারতের বাসিন্দা জোসেফের নেশা এবং পেশা ছবি তোলা। ছবি তুলতে বরাবর পছন্দ করতেন ঠিকই, কিন্তু তা নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তুলবেন তা কখনও ভাবেননি জোসেফ।
২০১৭ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বলি অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা এবং ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। নিকটাত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবেরাই শুধুমাত্র ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায়। তাঁদের বিয়ের ছবিতে দুই তারকার সম্পর্কের মিষ্টি রসায়ন ধরা পড়ে।
বিরাট এবং অনুষ্কার বিয়ের ছবি তোলার নেপথ্যে ছিলেন জোসেফ। তার পর থেকেই সেলিব্রিটি চিত্রগ্রাহক হিসাবে প্রচারে আসেন তিনি।
২০১৮ সালে আমেরিকার গায়ক নিক জোনাসকে বিয়ে করেন বলি অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। দুই তারকার বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলেন জোসেফ।
বলিপাড়ায় এমন বহু তারকা দম্পতি রয়েছেন, যাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত শুট করেছেন জোসেফ। চিত্রগ্রাহক হিসাবে বলি তারকাদের পছন্দের তালিকার উপরের দিকেই রয়েছেন তিনি।
২০২১ সালে দীর্ঘকালীন প্রেমিকা নাতাশা দলালের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন বলি অভিনেতা বরুণ ধওয়ান। তাঁদের বিয়ের ছবিও তুলেছিলেন জোসেফ।
২০২১ সালে রাজস্থানের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বলিউডের দুই জনপ্রিয় তারকা ভিকি কৌশল এবং ক্যাটরিনা কইফ তাঁদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেন। গায়েহলুদ, মেহন্দি এবং বিয়ের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান ক্যামেরাবন্দি করেছেন জোসেফ।
২০২১ সালেই বিয়ে করেন বলি তারকা রাজকুমার রাও এবং পত্রলেখা। বহু বছর সম্পর্কে থাকার পর বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের বিয়ের ছবিও তুলেছেন জোসেফ।
শুধুমাত্র বলিপাড়ার তারকাদের নয়, কয়েক জন দক্ষিণী তারকার বিয়ের অনুষ্ঠানও ক্যামেরাবন্দি করেছেন জোসেফ। ২০২০ সালে তেলুগু ফিল্মজগতের অভিনেত্রী নীহারিকা কোনিদেলার বিয়ের ছবি তুলেছিলেন তিনি। শিল্পপতি চৈতন্য জোন্নালাগাড়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেত্রী। যদিও বিয়ের তিন বছর পর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় নীহারিকার।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল এবং তেলুগু ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন কাজল আগরওয়াল। ২০২০ সালে শিল্পপতি গৌতম কিচলুকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান মুহূর্তবন্দি করেছিলেন জোসেফ।
দক্ষিণের প্রথম সারির অভিনেত্রী নয়নতারা। ‘জওয়ান’ ছবিতে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০২২ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেত্রী। নয়নতারার বিয়ের অনুষ্ঠানের বিশেষ মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি করেছেন জোসেফ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, এক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে দিনপ্রতি ১ লক্ষ ২৫ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক আদায় করেন জোসেফ। মনে করা হচ্ছে অনন্তের বিয়ে থেকে কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।
তবে এটি শুধুই জোসেফের দৈনিক আয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আয়কর এবং যাতায়াত, খাওয়াদাওয়া বাবদ অর্থ।
ছ’বছর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন জোসেফ। পড়াশোনা শেষের পর তিন বছর বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও করেছেন তিনি।
চাকরিসূত্রে ভারতের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে টুথপেস্ট বিক্রি করতে হয়েছে জোসেফকে। ছবি তোলার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল বরাবর। কিন্তু ছবিকেই যে পেশাগত জীবনের সম্পূর্ণ অংশ বানিয়ে ফেলবেন তা কখনও ভাবেননি জোসেফ।
বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে মোটা বেতন পেতেন জোসেফ। কিন্তু তাঁর মন পড়েছিল ক্যামেরার দিকে। ছবি তুলে অন্যের কাহিনিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে চাইতেন তিনি। তাই ছবি তুলবেন বলে চাকরি ছেড়ে দেন।
ঘনিষ্ঠদের সাহায্যে নিজস্ব একটি সংস্থা গড়ে তোলেন জোসেফ। তাঁর সংস্থায় যোগ দেন ভারতের নামী চিত্রগ্রাহকরাও। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শুট করতে শুরু করেন জোসেফ এবং তাঁর সহকর্মীরা।
নিজের একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে জোসেফের। তারকাদের বিয়ের কিছু বিশেষ ছবি পোস্টও করা রয়েছে সেই ওয়েবসাইটের পাতায়। সাইটে উল্লেখ রয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৩৫টি দেশে ৪৫০টিরও বেশি জুটির বিয়ের ছবি তুলেছেন জোসেফ।
শুধুমাত্র বিয়ের অনুষ্ঠান নয়, বহু নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনের জন্য শুট করেছে জোসেফের দল। সেই ভিডিয়োগুলির পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন জোসেফ নিজেই।
ছবি তোলার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন জোসেফ। সমাজমাধ্যমেও যথেষ্ট জনপ্রিয় জোসেফ। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় অনুগামীর সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে তাঁর।