অভিনয়জগতে ছয় দশকের বেশি সময় কাটিয়েছেন। শতাধিক ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। অভিনেত্রী হিসাবে তেলুগু ফিল্মজগতের প্রথম সুপারস্টারের তকমাও পান। চল্লিশের দশকে সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের তালিকার শীর্ষে নাম লেখান পি ভানুমতী রামকৃষ্ণ।
১৯২৫ সালে ৭ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাশম জেলায় জন্ম ভানুমতীর। তাঁর বাবা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মঞ্চে বাবার পারফর্ম্যান্স দেখেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ভানুমতীর। ১৩ বছর বয়সে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন তিনি।
১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ভাষার ছবি ‘ভারা বিক্রয়াম’-এর মাধ্যমে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আত্মপ্রকাশ ভানুমতীর। শিশু অভিনেত্রী হিসাবে সকলের মন জয় করে নেন তিনি। তার পর ‘মালতী মাধবম’, ‘ধর্ম পত্নী’ এবং ‘ভক্তিমালা’র মতো একাধিক তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন ভানুমতী।
‘কৃষ্ণ প্রেম’ এবং ‘স্বর্গসীমা’ ছবিদু’টি ভানুমতীর কেরিয়ারের সাফল্যের মাইলফলক গড়ে তোলে। ‘স্বর্গসীমা’ ছবিতে একটি গানও গেয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর কণ্ঠে গানটি জনপ্রিয় হওয়ার পর তিনি গানের প্রস্তাবও পেতে শুরু করেন।
‘চক্রপাণি’, ‘লয়লা মজনু’, ‘বিপ্র নারায়ণ’, ‘মালেশ্বরী’, ‘বাতাসারি’, ‘অন্থস্থুলু’ নামের তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন ভানুমতী। ১৯৪৯ সালে ‘রত্নকুমার’ ছবির হাত ধরে তামিল ফিল্মজগতেও পা রাখেন তিনি।
শুধু অভিনয় এবং গান নয়, পরিচালনা, প্রযোজনা, সঙ্গীত নির্দেশনাতেও পারদর্শীতা ছিল ভানুমতীর। জ্যোতিষ এবং দর্শন নিয়েও নিয়মিত চর্চা করতেন তিনি। তামিলনাড়ুর মানুষ তাঁকে ‘অষ্টবদনী’ বলে ডাকতেন।
১৯৫৩ সালে ‘চাঁদিরানি’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় ভানুমতীর। তেলুগু ভাষার পাশাপাশি তামিল এবং হিন্দি ভাষায় এই ছবি মুক্তি পায়।
ভানুমতী ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম অভিনেত্রী যিনি ফিল্ম স্টুডিয়ো তৈরি করেন। এনটি রামারাও, নাগার্জুন, পবন কল্যাণ, এমজি রামচন্দ্রন, শিবাজি গণেশন, চিরঞ্জীবীর মতো দক্ষিণী অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ভানুমতী।
কানাঘুষো শোনা যায়, যে সময় ১০ গ্রাম ওজনের সোনার মূল্য ছিল ৯০ টাকা, সে সময় নাকি ভানুমতী প্রতি ছবিতে অভিনয় করতে ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেতেন, যা বর্তমানে দু’কোটি টাকার সমতুল্য।
বলি অভিনেতা দিলীপ কুমারের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন ভানুমতী। তাঁর অভিনয়গুণে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন। বহু বার জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃতও হয়েছেন ভানুমতী।
২০০১ সালে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয় ভানুমতীকে। তিনিই দেশের প্রথম অভিনেত্রী যিনি দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছোট গল্প রচনার ক্ষেত্রেও হাত পাকান ভানুমতী।
‘নালো নেনু’ নামে তেলুগু ভাষায় আত্মজীবনী লেখেন ভানুমতী। পরে ইংরেজি ভাষাতেও সেই বইটি অনুবাদ করা হয়। নানা রকম সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কৃষ্ণ প্রেম’ ছবির সহ-পরিচালক ছিলেন পিএস রামকৃষ্ণ রাও। এই ছবির শুটিংয়ের সময় রামকৃষ্ণকে প্রেম নিবেদন করেন ভানুমতী। দুই তারকা সম্পর্কেও জড়ান।
কানাঘুষো শোনা যায়, রামকৃষ্ণকে বিয়ে করতে চাইলে ভানুমতীর বাবা তাতে মত দেননি। তা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রামকৃষ্ণকে বিয়ে করেন ভানুমতী।
১৯৪৩ সালের ৮ অগস্ট সাতপাকে বাঁধা পড়েন ভানুমতী এবং রামকৃষ্ণ। বিয়ের পর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন অভিনেত্রী। বিয়ের পর কিছুটা সময় অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন ভানুমতী। তার পর আবার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে যান তিনি।
রামকৃষ্ণ এবং ভানুমতী দু’জনে একসঙ্গে একটি প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন। পুত্রের নামেই সেই সংস্থার নাম রাখেন তাঁরা। ৮০ বছর বয়সে চেন্নাইয়ে মৃত্যু হয় ভানুমতীর।