দর্শকের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নে। এক লাইনের সংলাপ এবং অভিব্যক্তি দিয়েই মাত করে দিত সে। ‘পঞ্চায়েত’-এর দ্বিতীয় সিজ়নেই দর্শকের মন জিতে নিয়েছিল ভূষণ। সামান্য নেতিবাচক, অথচ হাস্যকৌতুকে মোড়া চরিত্র ওটিটির পর্দায় নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দুর্গেশ কুমার। কিন্তু এক সময় বাধ্য হয়ে দুষ্টু ছবিতেও অভিনয় করতে হয়েছে তাঁকে।
১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর বিহারের দ্বারভাঙা জেলায় জন্ম দুর্গেশের। বাবা-মা এবং দাদার সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। বিহার থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ২০০১ সালে দিল্লি চলে যান তিনি।
দিল্লির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন দুর্গেশ। কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভাল ফল করতে ব্যর্থ হন। এর পর থিয়েটারে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
দিল্লির একটি কলেজ থেকে স্নাতক হন দুর্গেশ। দু’বছর অভিনয়ের প্রশিক্ষণও নেন তিনি।
এর পর দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় ভর্তি হন দুর্গেশ। সেখান থেকে অভিনয় নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই সময় মোট ৩৫টি নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
এর পর বড় পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছা জাগে দুর্গেশের। কিন্তু বার বার অডিশন দেওয়ার পরেও ব্যর্থ হন তিনি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, টানা ন’বছর অডিশন দিয়েও বাদ পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
দুর্গেশ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমায় কাস্টিং ডিরেক্টরেরা বলতেন যে আমার মধ্যে যোগ্যতা রয়েছে। অভিনয়ে দক্ষতা রয়েছে আমার। কিন্তু অডিশন ভাল দিতে পারছি না।’’
দুর্গেশ জানিয়েছিলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেরিয়ার গড়ার পথে বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছেন তিনি। সেই কঠিন সময়ে পরিবারকে পাশে পেয়েছিলেন দুর্গেশ। রোজগারের জন্য বাধ্য হয়ে পর্ন ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
নীল ছবিতে অভিনয় করা প্রসঙ্গে দুর্গেশ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমি অভিনয় ছাড়া বাঁচতে পারি না। তখন আমার কাছে যা সুযোগ এসেছিল, সেটাই গ্রহণ করেছি। নিজের অভিনয় দক্ষতার উপর ভরসা ছিল আমার।’’
২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলিয়া ভট্টের ছবি ‘হাইওয়ে’তে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান দুর্গেশ। এই ছবির মাধ্যমেই বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালে সলমন খান এবং অনুষ্কা শর্মা অভিনীত ‘সুলতান’ ছবিতেও অভিনয় করেন দুর্গেশ। তা ছাড়া ‘বেহেন হোগি তেরি’, ‘ফ্রিকি আলি’, ‘দ্য ড্রিম জব’, ‘ধড়ক’, ‘সঞ্জু’, ‘বোম্বাইরিয়া’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ পাচ্ছিলেন না দুর্গেশ। ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নে ভূষণের চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান তিনি। তাঁর ‘দেখ রহে হো বিনোদ!’ সংলাপও বিখ্যাত হয়ে যায়।
কিরণ রাওয়ের পরিচালনায় ‘লাপতা লেডিজ়’ ছবিতেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় দুর্গেশকে। চলতি বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভক্ষক’ ছবিতে ভূমি পেডনেকরের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি।
ওটিটির পর্দায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দেড় বিঘা জমিন’ ছবিতে অভিনয় দেখা গিয়েছে দুর্গেশের। চলতি মাসে আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে ‘মহারাজ’। এই ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রাখতে চলেছেন বলি অভিনেতা আমির খানের পুত্র জুনেদ খান। জুনেদের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করবেন জয়দীপ আহলাওয়াত, শালিনী পাণ্ডে এবং দুর্গেশ।
অবসর সময়ে রান্না করতে ভালবাসেন দুর্গেশ। তার ছবি এবং ভিডিয়োর ঝলক মাঝেমধ্যে তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায় দেখা যায়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে ‘পঞ্চায়েত’-এর ভূষণের অনুগামীর সংখ্যা ৬২ হাজারের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।