আশির দশক থেকে অভিনয় শুরু করেছেন। এখনও পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, মরাঠি, পঞ্জাবি, এমনকি ইংরেজি ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ে খলনায়কের চরিত্রই পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা। সেই কারণে বলিপাড়ার ‘ব্যাড ম্যান’ হিসাবেও খ্যাতিলাভ করেছেন গুলশন গ্রোভার।
১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জন্ম গুলশনের। সেখানে বাবা-মা, ভাই এবং বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। দিল্লিতে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। দিল্লির একটি কলেজ থেকে বাণিজ্য নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন গুলশন।
স্কুলে পড়াকালীন অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মালেও তা নিয়ে যে কেরিয়ার গড়বেন, সেই সময়ে তা স্থির করতে পারেননি গুলশন। কলেজে পড়াকালীন একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর পেশাগত জীবনে অভিনয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
অর্থাভাবে শৈশব কেটেছে গুলশনের। এমন বহু দিন কাটিয়েছেন, যখন সারা দিন কিছু না খেয়ে ঘুমোতে যেতে হয়েছে তাঁকে। স্কুলে পড়াকালীন রোজগার করতে হয়েছে অভিনেতাকে। সেই কথা এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে গুলশন বলেছিলেন, ‘‘আমার স্কুল অনেক বেলা করে শুরু হত। কিন্তু আমি স্কুলের জামা পরে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তাম। কাঁধে থাকত একটি ভারী ব্যাগ। সেই ব্যাগে ভর্তি থাকত কাপড় কাচার এবং বাসন মাজার সাবান। স্কুল যাওয়ার পথে এই সাবান বিক্রি করতাম আমি।’’
গুলশন জানিয়েছিলেন, স্কুলে পড়ানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না তাঁর বাবার। সাবান বিক্রি করে সেই টাকা জমিয়ে স্কুলের বেতন দিতেন অভিনেতা।
অর্থাভাবে দিন কাটাতে কোনও কষ্ট হয়নি গুলশনের। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘গরিব হলেও আমার কোনও সমস্যা হত না। বাবা আমায় শিখিয়েছিলেন, জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, সব সময় সৎ পথে হাঁটবে। আমি বাবার সেই কথাই মেনে চলতাম। কষ্ট হত না।’’
গুলশন বলেছিলেন, ‘‘আমি যাঁদের কাছে সাবান বিক্রি করতাম তাঁরাও চাইতেন যে আমি পড়াশোনা করে ভাল মানুষ হই। এমন বহু দিন গিয়েছে যে, পরিবারের সকলে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছি।’’
দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন গুলশন। অভিনয় শিখবেন বলে মুম্বইয়ের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন তিনি। সেখানে অনিল কপূর এবং সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে অভিনয় শিখেছেন গুলশন। পরে সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই অভিনয় শেখাতে শুরু করেন তিনি।
১৯৮০ সালে ‘হম পাঁচ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু হয় গুলশনের। তার পর একে একে ‘রকি’, ‘সদমা’, ‘রাম লক্ষ্ণণ’, ‘সওদাগর’, ‘শোলা অওর শবনম’, ‘দিলওয়ালে’, ‘মোহরা’, ‘আগ’, ‘দ্য গ্যাম্বলার’, ‘রাম জানে’, ‘ইয়েস বস্’, ‘ডুপ্লিকেট’, ‘হেরা ফেরি’, ‘লজ্জা’, ‘জিস্ম’, ‘যযন্তরম মমন্তরম’, ‘টারজ়ান দ্য ওয়ান্ডার কার’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘এজেন্ট বিনোদ’, ‘ক্রুক’, ‘হেট স্টোরি ৪’-এর মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
‘রাম লক্ষ্ণণ’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে গুলশন এমন জনপ্রিয়তা পেয়ে যান যে বলিপাড়ায় ‘ব্যাড ম্যান’-এর তকমা পেয়ে যান তিনি। ভারতীয় ছবির পাশাপাশি ইরান, মালয়েশিয়া এবং কানাডার ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে গুলশনকে।
আমেরিকার জনপ্রিয় সিরিজ় ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর হিন্দি ডাবিংয়ের সময় হেক্টরের চরিত্রে কণ্ঠ দেন গুলশন। তা ছাড়া ‘প্রিজ়নার্স অফ দ্য সান’, ‘আমেরিকান ডেলাইট’, ‘এয়ার প্যানিক’, ‘বিপার’-এর মতো একাধিক ইংরেজি ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০৩ সালে ‘বুম’ ছবির হাত ধরে বলিপাড়ায় পা রাখেন ক্যাটরিনা কইফ। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবিতে অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করে বিতর্কের মুখে পড়েন গুলশন। পরে অবশ্য ছবি থেকে সেই দৃশ্য বাদ দেওয়া হয়।
বলিপাড়ার গুঞ্জন, সলমন খানের প্রাক্তন প্রেমিকা সোমি আলির সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন গুলশন। পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
১৯৯৮ সালে ফিলোমিনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন গুলশন। ২০০১ সালে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। বিচ্ছেদের কয়েক মাস পরে কশিশ নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন গুলশন। সেই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি। ২০০২ সালে দ্বিতীয় বার বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন অভিনেতা।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়র’ ছবিতে পুলিশ আধিকারিকের চরিত্রের জন্য ছবিনির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন গুলশন। কিন্তু অভিনেতা সেই প্রস্তাব খারিজ করায় ইরফান খানকে ওই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
গুলশনের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন বলিপাড়ার খ্যাতনামী অভিনেত্রী মন্দাকিনির ভাই ভানু। ফিলোমিনার সঙ্গে গুলশনের বিচ্ছেদের পর তাঁকে বিয়ে করেন ভানু। বিয়ের পর ফিলোমিনাকে নিয়ে লন্ডনে চলে যান তিনি।
২০২৩ সালে ‘চার্লি চোপড়া অ্যান্ড দ্য মিস্ট্রি অফ সোলাং ভ্যালি’ সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে গুলশনকে। শোনা যাচ্ছে, কমল হাসনের ‘ইন্ডিয়ান ২’ নামের তামিল ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাঁকে।
সমাজমাধ্যমে সক্রিয় গুলশন। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় বলিপাড়ার ‘ব্যাড ম্যান’-এর অনুগামীর সংখ্যা ১৯ লক্ষের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।