শৈশব থেকে গান গেয়েই বড় ওঠা, খাতায়কলমে কখনও তেমন ভাবে গানের প্রশিক্ষণ নেননি তিনি। সাম্প্রতিক কালে বলিউডের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সঙ্গীতশিল্পীর মধ্যে প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছেন জোনিতা গান্ধী। রবিবার ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে গুজরাতের আমদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে মঞ্চে পারফর্ম করবেন জোনিতা।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি মরাঠি, গুজরাতি, পঞ্জাবি, বাংলা, তেলুগু, তামিল, মালয়লম এবং কন্নড় ভাষার ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতজগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন জোনিতা।
১৯৮৯ সালে ২৩ অক্টোবর মাসে দিল্লির পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম জোনিতার। তাঁর যখন ন’মাস বয়স তখন বাবা-মা তাঁকে নিয়ে কানাডা চলে যান।
কানাডায় স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন জোনিতা। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গানবাজনার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর।
জোনিতার বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও তার পাশাপাশি গানও করতেন তিনি। কানাডার বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানে গান করতেন জোনিতার বাবা। বাবার সঙ্গে অনুষ্ঠানে গলা মিলিয়ে গান করতে দেখা যেত জোনিতাকেও।
জোনিতার বাবার একটি মিউজ়িক স্টুডিয়োও ছিল। সাত বছর বয়সে টরন্টোর গানের অনুষ্ঠানে প্রথম পারফর্ম করেন জোনিতা। ছোটবেলায় গানের জন্য আলাদা ভাবে তালিম নিতেন না তিনি। লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের মতো সঙ্গীতশিল্পীদের গান শুনেই নিজের চেষ্টায় গান গাইতেন তিনি।
পরে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে পশ্চিমি এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন জোনিতা। ১৬ বছর বয়সে কানাডায় গানের একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করতে যান তিনি। কিন্তু অডিশন পর্ব থেকেই বাদ পড়েন জোনিতা।
স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা দেন জোনিতা। কিন্তু গানের জন্য আলাদা করে সময় বার করতে পারবেন না বলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।
সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে পৌঁছনোর জন্য ইউটিউবকে মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন জোনিতা। ইউটিউবে গানের ভিডিয়ো পোস্ট করতে শুরু করেন তিনি।
বলিউডের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সোনু নিগমের দলে যোগ দেন জোনিতা। সেই দলে থেকেই আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া-সহ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পারফর্ম করার সুযোগ পান তিনি।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ার আত্মপ্রকাশ করেন জোনিতা। তার পর এআর রহমান, প্রীতম চক্রবর্তী, অমিত ত্রিবেদীর মতো সুরকারদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান তিনি।
বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট করার পাশাপাশি ইউটিউবেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জোনিতা। ২০১৬ সালে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবিতে গান গেয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান তিনি।
একের পর এক ছবিতে গানের প্রস্তাব আসতে থাকে জোনিতার কাছে। ‘পেলে: বার্থ অফ আ লেজেন্ড’ নামের একটি হলিউডি ছবিতে গান গাইতে দেখা যায় তাঁকে।
‘জওয়ান’ ছবিতে গানের সুর দিয়ে হিন্দি ফিল্মজগতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্র। কানাঘুষো শোনা যায়, অনিরুদ্ধের সঙ্গেই নাকি সম্পর্কে রয়েছেন জোনিতা।
২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বিস্ট’ ছবিতে অনিরুদ্ধের সঙ্গে একটি গান গেয়েছিলেন জোনিতা। কানাঘুষো শোনা যায়, সেই সময় অনিরুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন গায়িকা। যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি দুই তারকাকে।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগীমহল রয়েছে জোনিতার। ইতিমধ্যেই তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ২৬ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।
নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আগেও পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছে জোনিতাকে। চলতি বছরের আইপিএলের মঞ্চেই গান করেছিলেন তিনি।