তারকা-পুত্র নন। ‘বহিরাগত’ হয়েই হিন্দি ফিল্মজগতে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেন। সাম্প্রতিক কালে বলিপাড়ায় অ্যাকশন ঘরানার সফল অভিনেতাদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে বিদ্যুৎ জামওয়ালের নাম।
বলি অভিনেতা সলমন খানের ছবিতে নেপথ্য নৃত্যশিল্পী হিসাবে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ বিদ্যুতের। স্বপ্ন বুনেছিলেন অভিনেতা হওয়ার। ‘বহিরাগত’ হয়ে সেই স্বপ্ন পূরণও করেছিলেন তিনি।
১৯৮০ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে জন্ম বিদ্যুতের। তাঁর বাবা ভারতীয় সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা-মা এবং দুই ভাইবোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন তিনি।
বিদ্যুতের বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন কেরলে একটি আশ্রম খুলেছিলেন তাঁর মা। সেই আশ্রমে মার্শাল আর্টের একটি প্রাচীন ধরন শিখেছিলেন বিদ্যুৎ।
কেরলের আশ্রমে ১৩ বছর পর্যন্ত ছিলেন বিদ্যুৎ। তার পর হিমাচল প্রদেশের একটি স্কুলে ভর্তি হন তিনি। আশ্রমে থাকাকালীন শেখার পর মার্শাল আর্টসের প্রতি আগ্রহ জন্মায় বিদ্যুতের। শুধুমাত্র ভারতে নয়, বিশ্ব জুড়ে মোট ৩০টি দেশে গিয়ে মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।
মার্শাল আর্টসে বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন বিদ্যুৎ। এই ক্ষেত্রে নিজের পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য মুম্বই চলে যান তিনি। বিভিন্ন মঞ্চে পারফর্মও করেন তিনি।
মুম্বইয়ে যাওয়ার পর হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দেওয়া শুরু করেন বিদ্যুৎ। ২০০৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সলমন খান অভিনীত ‘দিল নে জিসে আপনা কহা’। এই ছবির ‘গো বল্লে বল্লে’ গানের দৃশ্যে নেপথ্য নৃত্যশিল্পী হিসাবে অভিনয় করেন বিদ্যুৎ।
অভিনয়ে নামার স্বপ্ন দেখেতেন বিদ্যুৎ। শরীরচর্চা এবং মার্শাল আর্টসের পাশাপাশি তাই নিয়মিত অডিশন দিতেন বিদ্যুৎ। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শক্তি’ নামের একটি তেলুগু ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
২০১১ সালে অভিনেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন বিদ্যুৎ। একই বছর ‘স্ট্যানলি কা ডব্বা’ নামের হিন্দি ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
হিন্দি ছবি তো বটেই, তেলুগু ভাষার পাশাপাশি তামিল ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেন বিদ্যুৎ। রাহত ফতেহ আলি খান, নেহা কক্কর, হানি সিংহের মতো শিল্পীদের মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করেন তিনি।
‘বুলেট রাজা’, ‘কম্যান্ডো’, ‘বাদশাহো’, ‘জংলি’, ‘ইয়ারা’, ‘খুদা হাফিজ়’, ‘সনক’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান বিদ্যুৎ। ধীরে ধীরে বলিপাড়ার অ্যাকশন ঘরানার অভিনেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
‘কম্যান্ডো’ ছবিতে বিদ্যুতের অভিনয় দর্শকের পছন্দ হয়। বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, বিদ্যুতের দুর্দান্ত অ্যাকশনের জন্যই ভাল ব্যবসা করে ‘কম্যান্ডো’ ফিল্ম সিরিজ়।
মার্শাল আর্টসের মাধ্যমে আত্মরক্ষার পদ্ধতি শেখাতে মহিলাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিদ্যুৎ। ২০০২ সালের পর মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ভাবে নিরামিষাশী হয়ে যান তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবিতে সলমন খানের ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন বিদ্যুৎ। কিন্তু শুটিংয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আলাদা করে সময় বার করতে পারেননি তিনি। তাই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বিদ্যুৎ জানিয়েছিলেন যে তিনি বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেছেন। পোশাকশিল্পী নন্দিতা মাহতনির সঙ্গে আংটিবদল করেন তিনি।
বাগ্দান পর্বের পর দু’বছর সম্পর্ক ছিল বিদ্যুৎ এবং নন্দিতার। কানাঘুষো শোনা যায়, ২০২৩ সালে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। জানা গিয়েছিল, দু’জনের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণেই আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা।
টেলিভিশনজগতের নায়িকা থেকে সহ-অভিনেত্রী— একাধিক তারকার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে বিদ্যুতের। কানাঘুষো শোনা যায়, হিন্দি ধারাবাহিকজগতের খ্যাতনামী অভিনেত্রী মোনা সিংহের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সম্পর্কে ছিলেন তিনি।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে জানা যায়, মোনার একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন বিদ্যুৎ। তবে সম্পর্ক এবং বিচ্ছেদ নিয়ে কেউই কোনও দিন মুখ খোলেননি।
২০১৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কম্যান্ডো: এ ওয়ান ম্যান আর্মি’। এই ছবিতে বিদ্যুতের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় পূজা চোপড়াকে। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ছবির শুটিং চলাকালীন পূজার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা।
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাদশাহো’ ছবিতে বিদ্যুতের সহ-অভিনেত্রী ছিলেন ইলিয়ানা দি ক্রুজ। বলিপাড়ায় জল্পনা, শুটিং চলাকালীন দুই তারকার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। এই ছবিতে দু’জনের চুম্বনের দৃশ্য নিয়ে কম আলোচনা হয়নি।
‘বাদশাহো’ মুক্তির বছরেই মুক্তি পায় ‘কম্যান্ডো ২’। ‘কম্যান্ডো’ ফিল্ম সিরিজ়ের দ্বিতীয় পর্বে বিদ্যুতের নায়িকা ছিলেন অদা শর্মা। কানাঘুষো শোনা যায়, ছবির শুটিংয়ের সময় অদার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেতা।
২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘খুদা হাফিজ়’ ছবিতে বিদ্যুতের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় শিবালিকা ওবেরয়কে। কানাঘুষো শোনা যায়, শিবালিকার সঙ্গেও সম্পর্ক দানা বেঁধেছিল বিদ্যুতের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, এক একটি ছবিতে অভিনয় করে চার কোটি টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন বিদ্যুৎ। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪৯ কোটি টাকার কাছাকাছি।