নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে কেরিয়ারের ঝুলিতে তেমন হিট ছবি নেই। শাহরুখ খান, সুনীল শেট্টি, অজয় দেবগন, অক্ষয় কুমার, সানি দেওল, সইফ আলি খান, আমির খান, অনিল কপূর, গোবিন্দের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও চেহারা নিয়ে কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন সোনালি বেন্দ্রে। এমনকি এক সময় ব্যাগপত্র গুছিয়ে বলিপাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার শুরু করার কথা সে ভাবে কখনও ভাবেননি সোনালি। ভাগ্যই তাঁকে এই পেশায় নিয়ে আসে। কলেজজীবনে থাকাকালীন মডেলিংয়ের একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীও হন। কিন্তু আচমকাই ফ্যাশন সরণিতে নেমে পড়েন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সোনালি জানিয়েছিলেন, কলেজের মডেলিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তাঁর বান্ধবীর। কিন্তু কোনও কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে পৌঁছতে পারেননি সোনালির বান্ধবী। তাই সোনালিকে তাঁর পরিবর্তে প্রতিযোগী হিসাবে অংশ নিতে অনুরোধ করা হয়।
সোনালি জানিয়েছিলেন, হিল জুতো পরে হাঁটার অভ্যাস ছিল না তাঁর। কলেজের মডেলিং প্রতিযোগিতায় প্রথম হিল পরে হাঁটেন এবং বিজয়ী হন।
প্রশংসা পাওয়ার পর মডেলিং দুনিয়ায় পা রাখেন সোনালি। সেখান থেকেই বলিউডের ছবিনির্মাতা মহেশ ভট্টের নজরে পড়েন। মহেশের পরিচালনায় ‘নারাজ়’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সোনালিকে প্রস্তাব দেন তিনি। মহেশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান সোনালি।
১৯৯৪ সালে ‘আগ’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন ১৯ বছরের সোনালি। তার পর ‘নারাজ়’, ‘দ্য ডন’, ‘টক্কর’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু বার বার কটাক্ষের শিকার হতেন।
এক সাক্ষাৎকারে সোনালি জানান, তিনি ভাল নাচতে পারতেন না বলে নৃত্য পরিচালকেরা তাঁকে কটু কথা শোনাতেন। সোনালিকে তাঁরা বলতেন, ‘‘নাচতে পারে না, আবার নায়িকা হতে এসেছে!’’ নৃত্যে পারদর্শী না হওয়ার জন্য বার বার কটাক্ষের শিকার হতে হতে আত্মবিশ্বাস ভেঙে গিয়েছিল সোনালির।
সাক্ষাৎকারে সোনালি বলেন, ‘‘সেই সময় মানুষের ধারণা ছিল, কেউ ভাল নাচতে না পারলে তিনি অভিনেত্রী হতে পারেন না। আমি শুটিংয়ে যাওয়ার আগে, শুটিং থেকে ফিরে গিয়ে বলিউড ঘরানার নাচ অভ্যাস করতাম। ভেবেছিলাম এর পরেও কিছু করতে না পারলে ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ি চলে যাব।’’
১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বম্বে’ ছবিতে প্রভুদেবার সঙ্গে ‘হাম্মা হাম্মা’ গানে নাচতে দেখা যায় সোনালিকে। তার পরেই রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান অভিনেত্রী। বিশেষ কোনও হিট ছবিতে অভিনয় করতে না পারলেও কেরিয়ারের ঝুলিতে হিন্দি ছবির সংখ্যা খুব একটা কম নেই তাঁর। বলিপাড়ার অধিকাংশ জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সোনালি জানান, চেহারা নিয়ে এক সময় কটাক্ষের শিকার হতেন তিনি। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আগে রোগা চেহারার অভিনেত্রী দেখা যেত না। ছবিনির্মাতারা চাইতেন অভিনেত্রীদের চুল কোঁকড়া হোক, তাঁদের চেহারায় সামান্য মেদ থাকুক। আমি এত রোগা বলে অনেকেই আমায় খোঁটা দিতেন। প্রযোজকেরা অনেকেই ভাল করে খাওয়াদাওয়া করার পরামর্শও দিয়েছিলেন।’’
হিন্দি ছবি ছাড়াও তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং মরাঠি ভাষার ছবিতে অভিনয় করেন সোনালি। ‘নারাজ়’ ছবির শুটিংয়ের সেটে ছবিনির্মাতা গোল্ডি বহেলের সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেত্রীর। দু’জনের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে পরিণত হয়। আইনি বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০০২ সালে গোল্ডির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেত্রী। ২০০৫ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
২০১৮ সালে মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসারে আক্রান্ত হন সোনালি। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। প্রায় তিন বছর চিকিৎসা চলার পর বর্তমানে ক্যানসারমুক্ত তিনি।
বেশ কয়েক বছর বড় পর্দা থেকে দূরে রয়েছেন সোনালি। ছোট পর্দায় নাচের বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারকের আসনে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকি, ‘অজীব দাস্তান হ্যায় ইয়ে’ ধারাবাহিকে অভিনয়ও করেন তিনি। সম্প্রতি ‘দ্য ব্রোকেন নিউজ়’ নামের ওয়েব সিরিজ়ে ওটিটির পর্দায় অভিনয় করেছেন সোনালি।