বলিপাড়ায় চার দশক কাটিয়ে ফেলেছেন। কেরিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ছবিও। কিন্তু কেরিয়ারের গোড়ায় মাথার উপর ছাদ পর্যন্ত ছিল না। অর্থের অভাবে প্ল্যাটফর্মে রাত কাটাতে হয়েছে। সেই বলি তারকা ইতিমধ্যে ৫০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। নাম অনুপম খের।
১৯৮৪ সালে মহেশ ভট্টের পরিচালনায় ‘সারাংশ’ ছবিতে প্রথম বার অভিনয়ের সুযোগ পান অনুপম। কেরিয়ারের প্রথম ছবিতেই ষাট বছর বয়সি এক বৃদ্ধের চরিত্র বড় পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
নাটক দিয়েই অভিনয় শুরু করেন অনুপম। কিন্তু স্বপ্ন ছিল বড় পর্দার অভিনেতা হওয়ার। তাই স্বপ্নের শহর মুম্বই চলে যান তিনি। কিন্তু মুম্বইয়ে যাওয়ার পর কেরিয়ার গড়ার পথে বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে তাঁকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুম্বই আসার পর অনুপমের মাথায় চুলের ঘনত্ব অনেকটাই কমতে শুরু করে। চুল পাতলা হয়ে যেতে থাকে তাঁর। ধীরে ধীরে কেশবিলুপ্তির দিকে এগোতে থাকেন তিনি। তা নিয়ে কটাক্ষেরও শিকার হন অনুপম।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, অনুপম যখন অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে যেতেন, তখন তাঁর চেহারা নিয়ে, চুলের ঘনত্ব নিয়ে খোঁটা দেওয়া হত। কেউ কেউ আবার অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও দেন অনুপমকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অনুপম জানিয়েছিলেন যে, বলিপাড়ার একাংশ তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল, অভিনয় ছেড়ে তিনি যেন ক্যামেরার পিছনে কাজ করেন। কেউ তাঁকে সহকারী পরিচালক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তো কেউ চিত্রনাট্য লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
অনুপম জানিয়েছিলেন, এক সময় কাজের অভাবে থাকা-খাওয়ার জায়গা ছিল না তাঁর। অনেকের কাছে নাকি মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয়ও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। প্রতি বার খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল অনুপমকে।
তবে স্বপ্নপূরণ করবেন বলে দৃঢ় ছিলেন অনুপম। পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, থাকার জায়গার অভাব ছিল বলে রেলস্টেশনে দিন কাটিয়েছিলেন তিনি।
অনুপমের কথায়, মুম্বইয়ের বান্দ্রা রেলস্টেশনে থাকতেন । এক টানা ২৭ দিন সেখানকার প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে শুয়ে রাত কাটিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৯ সালে বলি নায়িকা মধুমালতী কপূরকে বিয়ে করেন অনুপম। কয়েক বছরের সংসারের পর দু’জনে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। তার পর ১৯৮৫ সালে বলি অভিনেত্রী কিরণ খেরকে বিয়ে করেন অনুপম।
কেরিয়ারের গোড়ায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেছিলেন অনুপম। কিন্তু অধিকাংশ ছবি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি।
‘দিল’, ‘সওদাগর’, ‘লমহে’, ‘বেটা’, ‘শোলা অওর শবনম’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র মতো একাধিক সফল হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন অনুপম।
২০০২ সালে পরিচালনার পরিসরে পা রাখেন অনুপম। ‘ওম জয় জগদীশ’-এর মতো তারকাখচিত হিন্দি ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় তাঁর।
২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন অনুপম।
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করতে দেখা দিয়েছে অনুপমকে। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বিজয় ৬৯’ নামের ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।