হাওয়াই দ্বীপের উত্তর-পূর্বে কাপা এবং হানালেইয়ে মাঝে উঁচু প্রাচীর ঘেরা বিশাল জমি। তার ও পারে কী রয়েছে, তা-ই নিয়েই স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে আগ্রহ। চলছে কানাঘুষো। কিন্তু যাঁরা কাজ করছেন, সকলের মুখে কুলুপ। এই জমির মালিক মেটা কর্তা মার্ক জ়াকারবার্গ।
সমুদ্রসৈকতের পাশেই রয়েছে সেই জমি। জমিটি ঘেরা রয়েছে ছ’ফুট উঁচু প্রাচীরে। প্রাচীরের মাঝে রয়েছে ফটক। সেই ফটক সর্ব ক্ষণ পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। প্রাচীরে বসানো রয়েছে সিসি ক্যামেরা।
ফটক খুলে আকছার ভিতরে ঢুকছে ট্রাক। তাতে বোঝাই রয়েছে নির্মাণের কাঁচামাল। রোজ ফটক দিয়ে জমিতে প্রবেশ করেন শতাধিক নির্মাণকর্মী। তাঁরা কী কাজ করছেন, সেই নিয়ে মুখ খোলার অনুমতি নেই। সেই শর্তেই তাঁদের কাজে নেওয়া হয়েছে।
নির্মাণস্থলের ছবি যদি কেউ প্রকাশ করেন, তা হলেও রয়েছে শাস্তি। অতীতে ছবি প্রকাশ করে চাকরি খুইয়েছেন বহু নির্মাণকর্মী।
২০১৪ সালে এই জমি কেনার চুক্তি করছিলেন জ়াকারবার্গ। প্রায় ১৪০০ একর জমি রয়েছে এখানে। একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই জমিতে নির্মাণের জন্য জ়াকারবার্গের খরচ পড়ছে ১০ কোটি আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা।
প্রশ্ন উঠছে, এত টাকা খরচ করে কী তৈরি করছেন মেটা কর্তা? একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রাচীর ঘেরা জমিতে বিশাল প্রাসাদ তৈরি হচ্ছে। প্রাসাদে রয়েছে ৩০টি বেডরুম। সঙ্গে ৩০টি শৌচালয়।
অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, একটি নয়, ওই জমিতে দু’টি প্রাসাদ তৈরি করাচ্ছেন জ়াকারবার্গ। জমিটি তিনি কিনেছিলেন ১৭ কোটি আমেরিকান ডলার দিয়ে। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১৪০০ কোটি টাকারও বেশি।
এত দামি বাড়ি নাকি এর আগে আমেরিকায় কেউ তৈরি করেননি। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে, প্রাচীর ঘেরা জমিতে শুধু দু’টি প্রাসাদ নয়, আস্ত এক গ্রাম তৈরি করাচ্ছেন জ়াকারবার্গ।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাওয়াইয়ে, যেখানে জ়াকারবার্গ নিজের বিশাল বাড়ি বানাচ্ছেন, তার থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ‘জেমস বন্ড’-এর নায়ক পিয়ার্স ব্রসনানের বাড়ি।
এই না পালি উপকূল দেখতে অসাধারণ। নীল আকাশ, নীল সমুদ্র। পর্যটকদের কাছে হাওয়াইয়ের এই উত্তর উপকূল স্বর্গের সমান। এখানে ‘জুরাসিক পার্ক’, ‘পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান’ ছবির শুটিং হয়েছে।
সেই দ্বীপের কাওয়াইয়ে জ়াকারবার্গের দুই প্রাসাদ প্রায় ৫৫ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে রয়েছে। একটি প্রাসাদের ভিতর দফতর, কনফারেন্স রুমও রয়েছে। এমনকি হাজার জনের রান্নার মতো বিশাল রান্নাঘরও রয়েছে।
অন্য একটি প্রাসাদে জিম, সুইমিং পুল, সনা, টেনিস কোর্ট রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ওই প্রাসাদ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি করছেন ফেসবুকের জনক।
হাওয়াইয়ের পরিকল্পনা বিভাগ (প্ল্যানিং কমিশন) সূত্রে জানা গিয়েছে, এক প্রাসাদ থেকে অন্য প্রাসাদে যাওয়ার জন্য রয়েছে সুড়ঙ্গ।
আর রয়েছে বাঙ্কার, যার আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট। সেই বাঙ্কারে বহু দিন থাকার জন্য রয়েছে একাধিক ঘর। রয়েছে একটি যন্ত্রপাতির ঘর। সেই ঘরে কী করা হবে, তা নিয়েও রয়েছে জল্পনা।
বাঙ্কারের দরজা এমন ভাবে তৈরি, যা পরমাণু বিস্ফোরণও নাকি প্রতিরোধ করতে পারবে। হাজার চাপেও ভাঙবে না।
প্রাসাদের দেওয়াল, দরজা-জানলা এমন ভাবে তৈরি যে, বাইরের শব্দ সেখানে প্রবেশ করবে না। সেখানকার শব্দও বাইরে যাবে না। দরজা খুলতে হবে কিপ্যাড লক দিয়ে। লাইব্রেরিতেও রয়েছে চোরাকুঠুরি।
প্রাসাদের কাছে কৃত্রিম জঙ্গলও তৈরি করা হচ্ছে। তার ভিতর নাকি ১১টি ট্রিহাউস তৈরি করা হচ্ছে। প্রাচীর ঘেরা জমিতে রয়েছে বিশাল জলের ট্যাঙ্ক, যার উচ্চতা ১৮ ফুট। ব্যাপ্তি ৫৫ ফুট। সেখান থেকেই জল সরবরাহ করা হবে প্রাসাদে।
দুই প্রাসাদের অদূরে বিশাল জমিতে ইতিমধ্যে জৈব উপায়ে চাষাবাদও শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, নিজেদের থাকার জন্যই এই বাড়ি তৈরি করছেন জ়াকারবার্গ এবং স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান। প্রশ্ন উঠছে, কেন তৈরি হচ্ছে বাঙ্কার? কিসের ভয় পাচ্ছেন জ়াকারবার্গ? আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন মেটা কর্তা।