মাত্র ১ নম্বরের জন্য ডাক্তারির প্রবেশিকায় উতরোতে পারেননি। তবে সে ‘ব্যর্থতা’ ঢেকে ফেলে অন্য ক্ষেত্রে ‘সাফল্য’ খুঁজে পেয়েছেন মনীষা রূপেতা। পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু মহিলা হিসাবে সে দেশের পুলিশের ডেপুটি সুপার পদে বসবেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, পাকিস্তান পুলিশের এত উঁচু পদে কোনও হিন্দু মহিলা বসেননি। এই মুহূর্তে ট্রেনিং চলছে মনীষার। শীঘ্রই ওই পদে কাজ শুরু করবেন তিনি।
অনেকের মতে, পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল তথা পুরুষশাসিত সমাজে মনীষার এই কীর্তি অনন্য। মনীষা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ির সদস্যরাও অত্যন্ত রক্ষণশীল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকে আমাদের বলা হত, পড়াশোনা করতে পারি। তবে পেশা বাছাইয়ের সময় শিক্ষকতা অথবা ডাক্তারিকেই বেছে নিতে হবে।’’
পুলিশের চাকরি করা বা আইন-আদালত বিষয়ক কোনও পেশা বেছে নেওয়ার ‘অধিকার’ না থাকলেও সে পথেই গিয়েছেন মনীষা। আদতে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা তাঁরা। তবে ১৩ বছর বয়সে বাবার অকালমৃত্যুর পর সন্তানদের নিয়ে করাচিতে বসবাস করতে শুরু করেন তাঁর মা।
সিন্ধু প্রদেশের জেকবাবাদে মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন মনীষা। তিনি বলেন, ‘‘ভাল ঘরের মেয়েরাও যে পুলিশ বা কোর্টকাছারির কাজ করতে পারে, সেটাই বোঝাতে চাই।’’
ছোটবেলা থেকে উর্দিধারীদের দেখে অনুপ্রেরণা পেলেও পুলিশের চাকরি করার কথা ভাবেননি তিনি। বরং এমবিবিএস প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। সে পরীক্ষায় বসেও ছিলেন। তবে ১ নম্বরের জন্য শিকে ছেঁড়েনি।
সেই পরীক্ষায় অসফল হওয়াটা কার্যত শাপে বর হয়েছিল। মনীষা বলেন, ‘‘ডাক্তারির প্রবেশিকায় ফেল করার পর বাড়িতে সাফ বলে দিয়েছিলাম, ফিজিক্যাল থেরাপি শেখার চেষ্টা করব। পাশাপাশি, সিন্ধু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায়ও বসব।’’
মনীষার প্রস্তুতির ফলও মিলেছিল। পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় ৪৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম স্থান লাভ করেছিলেন তিনি।
পুলিশের চাকরির ট্রেনিং শেষে লিয়ারির মতো অপরাধপ্রবণ এলাকায় কাজে যোগ দিতে হবে। তবে অকুতোভয় মনীষা! অপরাধীদের বিশেষ করে মহিলাদের ‘রক্ষক’ হয়ে উঠতে চান তিনি। মনীষার কথায়, ‘‘আমাদের সমাজে আকছার অপরাধের শিকার হন মহিলারা। এ সমাজে মহিলাদের ‘রক্ষক’ প্রয়োজন। সে জন্যই পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছি।’’
নিজের পেশায় লিঙ্গবৈষম্যও ঘোচাতে চান মনীষা। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ফোর্সে লিঙ্গবৈষম্যের উদারহণ ভূরি ভূরি। এই পেশায় তা-ও ঘোচাতে চাই।’’
মনীষার তিন বোন অবশ্য চিকিৎসক। ভাইও সে পেশায় যাওয়ার জন্য পড়াশোনা করছেন। তবে আর কিছু দিনের মধ্যেই পরিবারের একমাত্র পুলিশে চাকরিরতা হবেন তিনি।
লিয়ারির মতো অপরাধপ্রবণ এলাকায় পুলিশের চাকরি করাটা যে ঝুঁকির, তা মেনে নিয়েছেন মনীষা। তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা মনে করেন, পুলিশের চাকরিতে মেয়েদের টেকা সহজ নয়। তবে মনীষা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত তাঁদের ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি।’’ ডেপুটি পুলিশ সুপার পদে দায়িত্বভার নেওয়ার পরও বোধ হয় একই কথা বলতে পারবেন মনীষা।