কানাডার ওটাওয়ার বাসিন্দা ক্যাথরিন। প্রতি দিনের মতো গত শুক্রবার সকালে তিনি বাড়ির বাইরে থাকা আবর্জনার পাত্রে নোংরা ফেলতে গিয়েছিলেন। আবর্জনার পাত্রের ডালা খুলতেই হতবাক হয়ে যান তিনি। কিছু ক্ষণ থমকে গিয়ে নিজে নিজেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন। যে জিনিস দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান, তা একটি আদরপুতুল। আর ক্যাথরিনের মুখে হাসি ফোটানোর নেপথ্যে যিনি রয়েছেন তিনি আমেরিকার বাসিন্দা জ্যাক।
মানুষকে অনাবিল আনন্দ দিতে হাস্যকৌতুক শিল্পীরা মজার মজার কাণ্ড ঘটান। কেউ কেউ মজার চুটকি শুনিয়ে লোক হাসাতে পছন্দ করেন। আবার কেউ নিছকই মজার বশে বিভিন্ন কাণ্ডকারখানা করে লোক হাসান। কিন্তু জ্যাক লোককে আনন্দ দেন যেখানে সেখানে আদরপুতুল (সেক্স টয়) লুকিয়ে রেখে।
জ্যাক বিগত ১২ বছর ধরে আমেরিকা এবং কানাডার বিভিন্ন প্রান্তে এমন সব জায়গায় আদরপুতুল লুকিয়ে রাখেন, যা সহজেই মানুষের নজরে পড়বে। আনন্দ দেবে সাধারণকে।
১২ বছরে প্রায় আমেরিকা এবং কানাডার বিভিন্ন শহরের রাস্তায় প্রায় ১০০০ আদরপুতুল লুকিয়েছেন জ্যাক।
জ্যাক জানিয়েছেন, তিনি স্নাতক হওয়ার পর পাকাপাকি ভাবে চাকরি পাওয়ার আগে একটি জিনিসপত্রের গুদামে কাজ করতেন। সেই গুদামে মূলত ঠাঁই হত আদরপুতুলের। সেখান থেকেই আদরপুতুলগুলি বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হত।
জ্যাক বলেন, ‘‘আমার কাজ ছিল এটা নিশ্চিত করা যে আদরপুতুলগুলি পণ্যবাহী গাড়িতে ঠিকঠাক ভাবে চাপানো হচ্ছে কি না। এক দিন আমরা একটি অর্ডার পেলাম যা শুল্ক দফতরের জন্য দু’বছর ধরে আটকে ছিল। যে সংস্থা চালানের অর্ডার দিয়েছিল তারা ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। ফলে পুতুলগুলি আমাদের গুদামেই পড়ে ছিল।’’
জ্যাকের দাবি, ওই গুদামে পড়ে থাকা মোট ৯৬০টি আদরপুতুল তিনি বাড়ি নিয়ে যান। বাকি সহকর্মীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
জ্যাক জানান, ওই যৌন খেলনাগুলি চিন থেকে এসেছিল। কয়েক দিন সেগুলি নেড়েচেড়ে দেখে বুঝতে পারেন, এত আদরপুতুল সামলানো তাঁর সাধ্যের বাইরে।
এর পরই আদরপুতুলগুলি নিয়ে ফিকির আঁটেন জ্যাক। বাড়িতে রেখে নষ্ট করার বদলে সেগুলি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু জ্যাকের পরিকল্পনা সফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না কেন কেউ পুতুলগুলি কিনলেন না! হয়তো চাহিদা ছিল না। কয়েক মাস ধরে আমি মাত্র তিনটি আদরপুতুল বিক্রি করতে পেরেছিলাম।’’
পুতুলগুলি বিক্রি করে মাত্র ৩০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা) উপার্জন করেছিলেন জ্যাক।
জ্যাক জানান, বাকি ৯৫৭টি আদরপুতুল তিনি ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করার পর তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ‘সুবুদ্ধি’ দেন। জ্যাকের বন্ধু তাঁকে পুতুলগুলি বিলি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এর পর এক এক করে পুতুলগুলি প্রতিবেশীদের বাড়ির লনে রেখে আসতে শুরু করেন জ্যাক। কিন্তু প্রকাশ্যে দিনের আলোয় নয়, মত্ত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে তিনি সেগুলি প্রতিবেশীদের বাড়ির আশপাশে রেখে দিয়ে আসতেন।
জ্যাক জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবেশীরা সেগুলি নিজেদের বাড়ি নিয়ে চলে যেতেন।
এর পর সেই আদরপুতুলগুলি দেশের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় গিয়ে লুকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন জ্যাক। আমেরিকা, কানাডার পাশাপাশি মেক্সিকোতেও তিনি সেই পুতুলগুলি রেখে আসতে শুরু করেন। যাঁরা পুতুলগুলি খুঁজে পেতেন, তাঁরা খুব খুশি হতেন বলেও জ্যাক জানিয়েছেন।
কোভিড আবহে সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেওয়ার কাজে খানিক ভাটা পড়েছিল জ্যাকের। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই আবার পুরনো কাজে মন দিয়েছেন তিনি।