সময়টা ভাল যাচ্ছে না ভারতের। এই মুহূর্তে ভূ-রাজনীতিগত দিক থেকে বেশ কয়েকটি বিষয় নয়াদিল্লিকে চাপে রেখেছে। তার মধ্যে অন্যতম হল দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রের সমস্যা।
ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ। সেখানে সম্প্রতি ক্ষমতার রদবদল ঘটেছে। মসনদে বসেছেন নতুন শাসক। তার পর থেকেই একের পর এক অস্বস্তি বাড়ছে ভারতের জন্য।
মলদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন মহম্মদ মুইজ়ু। তিনি ‘চিনের ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। ক্ষমতায় আসার আগে ভারত-বিরোধী প্রচারে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
মুইজ়ু ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক ফরমান জারি করে চলেছেন। যা ভারতের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে না। সরাসরি ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পথে না হাঁটলেও মুইজ়ুর পদক্ষেপ বিরোধিতার বার্তাই দিচ্ছে।
সম্প্রতি, ভারতের সঙ্গে করা গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে মলদ্বীপ। ২০১৯ সাল থেকে দুই দেশ ওই চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলছিল। আর তা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার মালে থেকে সরকারি ভাবে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে জল সংক্রান্ত সহযোগিতার চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর ওই চুক্তির শর্তাবলি মানবে না মলদ্বীপ।
এই চুক্তির শর্তাবলি অনুযায়ী, ভারতীয় নৌসেনা মলদ্বীপে জল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমীক্ষা চালাত। তার ফলে আখেরে লাভ হত মলদ্বীপেরই। ভারতের সমীক্ষার রিপোর্ট দেখে জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিত সে দেশের প্রশাসন।
ভারতের সঙ্গে চুক্তি মলদ্বীপের অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার উন্নয়নেও সাহায্য করত। সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ভারতকে কি বার্তা দিতে চাইলেন চিনপন্থী মুইজ়ু? প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মলদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন। সে সময়ে সেখানকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইব্রাহিম সোলি। তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। ওই সময়েই দুই দেশের মধ্যে জল সংক্রান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে মলদ্বীপের উপকূলীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওই সমস্ত বিষয়ে তারা এত দিন ভারতের সহযোগিতা পেত।
ভারতের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পথে এখনও হাঁটেননি মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ়ু। তবে তিনি যে ভারতকে খুব একটা পছন্দ করেন না, আগেই তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।
মুইজ়ু আবদুল্লা ইয়ামিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। মলদ্বীপে ‘ভারত হটাও’ কর্মসূচির মূল প্রবক্তা ছিলেন তিনিই। ক্ষমতায় আসার আগে সেই প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন মুইজ়ু।
ক্ষমতায় আসার পূর্বে মলদ্বীপের বাসিন্দাদের মুইজ়ু কথা দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে দেশের মাটি থেকে বিদেশি সেনা সরিয়ে দেবেন। কথা তিনি রেখেছেন। কিছু দিন আগেই মলদ্বীপ থেকে ভারতকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছে মলদ্বীপ।
২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার আগে মুইজ়ু চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, মলদ্বীপে তিনি ক্ষমতায় এলে চিনের সঙ্গে সে দেশের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হবে।
জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে মলদ্বীপে ক্ষমতায় এসেছেন মুইজ়ু। তিনি সে দেশের বাসিন্দাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন। তার জন্য লড়াই করবেন।
অনেকে মনে করছেন, চিনপন্থী শাসক মুইজ়ু চিনের দিকে ঘেঁষতে শুরু করে দিয়েছেন। হয়তো ভারতের সেনা সরিয়ে দিলে মলদ্বীপে তিনি এ বার চিনা সৈনিকদের নিয়ে আসবেন। চিনের সঙ্গে হবে জল-চুক্তি।
তলে তলে চিনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়লেও মুইজ়ু ভারতের ‘বন্ধু’ হিসাবেই নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যে কারণেই সম্ভবত এখনও পর্যন্ত সরাসরি ভারতের বিরোধিতা তিনি করেননি।
বিপর্যয় মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের উপর মলদ্বীপের নির্ভরশীলতা এবং ভারতের সহযোগিতার কথা মুইজ়ু স্বীকার করেছেন প্রকাশ্যেই। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে একমত হতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়েই একের পর এক সিদ্ধান্ত মুইজ়ু নিয়ে চলেছেন।