দেশ-বিদেশে ভূতুড়ে বাড়ির সংখ্যা নেহাত কম নেই। সেই নিয়ে মানুষের আগ্রহও কম নয়। সমাজমাধ্যমের কল্যাণে আরও ছড়িয়ে পড়েছে সে সব বাড়ির কথা। সেখানে ভিড় জমান আগ্রহীরা। সত্যিই কি অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে তাঁদের? কুন্দনবাগের বাড়ি নিয়েও রয়েছে এ রকমই জল্পনা।
হায়দরাবাদের বেগমপেটের কুন্দনবাগে রয়েছে সেই বাড়ি। সম্প্রতি এই পরিত্যক্ত বাড়িতে নাকি অদ্ভুত কিছু কাণ্ড ঘটতে দেখেছেন প্রতিবেশীরা। তাঁরা সে সব কথা প্রকাশ করেছেন সমাজমাধ্যমে। তার পরেই পরিত্যক্ত সেই বাড়ির সামনে ভিড় জমেছে।
অনেকেই দাবি করেছেন, রাতে সেই বাড়িতে রহস্যজনক কিছু বিষয় চোখে পড়েছে। অনেকে আবার জানিয়েছেন, সে রকম কিছু ঘটেনি। কিন্তু কুন্দনবাগের সেই বাড়িতে রাতের বেলা জনসমাগম বেড়েই চলেছে। বিরক্ত হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন স্থানীয়েরা।
শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে হায়দরাবাদ পুলিশ। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এস মোহন কুমার জানান, ওই বাড়ি নিয়ে যা শোনা গিয়েছে, সবটাই মিথ্যে। ওই এলাকায় রাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ।
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালেও একই কাণ্ড হয়েছিল ওই বাড়িটিকে ঘিরে। তখন সমাজমাধ্যমের এতটা প্রভাব ছিল না। তবু হইচই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পুলিশি পদক্ষেপে বিষয়টি থিতু হয়। সে বারও ধরপাকড় করেছিল পুলিশ।
কিন্তু কেন হঠাৎ কুন্দনবাগের এই বাড়ি নিয়ে এত কানাঘুষো? এত ভয় মানুষের মনে? পুরোটাই কি ভিত্তিহীন? স্থানীয়দের একাংশ জানিয়েছেন, সব জল্পনা ভিত্তিহীন নয়। এই বাড়িতে ঘটেছিল হাড়হিম করা এক কাণ্ড।
অতীতে ওই বাড়িতে চুরি করতে ঢুকেছিলেন এক ছিঁচকে চোর। ঢুকে যা দেখেছিলেন, তাতে চোখ কপালে। দেখেন, বাড়ির ভিতর পড়ে রয়েছে তিন মহিলার পচাগলা দেহ। সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দেন তিনি।
পুলিশ এসে তিন মহিলার পচাগলা দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। সম্পর্কে তাঁরা মা এবং দুই মেয়ে। ময়নাতদন্তে দেখা যায়, ছ’মাস আগে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।
কী ভাবে মৃত্যু, সেই নিয়ে রহস্য থেকেই যায়। পুলিশও কখনও স্পষ্ট করেনি বিষয়টি। মৃত্যুর ছ’মাস পর অনেক কিছু স্পষ্টও হয়নি তাদের কাছে। ফরেন্সিক পরীক্ষাতেও অধরা থেকে গিয়েছিল অনেক কিছু।
কিন্তু খবরটা প্রকাশ্যে আসতেই পিলে রীতিমতো চমকে ওঠে প্রতিবেশীদের। এমনিতে মা এবং দুই মেয়ে পাড়ায় কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। পাড়ার লোকজনও তাঁদের ভয় পেতেন। এড়িয়ে চলতেন। মনে করতেন, ‘কালোজাদু’ করেন ওই তিন জন।
কেন এমন ধারণা হয়েছিল তাঁদের? আশপাশের বাড়ির লোকজন প্রায় রাতেই নাকি দেখতেন, মা এবং দুই মেয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে কিছু একটা করছেন। বারান্দায় মোমবাতি হাতে এসে দাঁড়াচ্ছেন।
বাড়িতে প্রবেশ করার দরজায় অদ্ভুত এক তরল বোতলে ভরে ঝুলিয়ে রাখতেন ওই তিন জনের এক জন। তরলটিকে দেখে মনে হত রক্ত। অদ্ভুত কিছু পুরনো জিনিসপত্র (অ্যান্টিক) সংগ্রহের শখ ছিল তাঁদের। ঘরে রাখা থাকত সে সব।
প্রতিবেশীরা যখন জানতে পারেন, ছ’মাস আগে মৃত্যু হয়েছে মা-মেয়েদের, তখনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দাবি করেন, গত ছ’মাস ধরে নিয়মিত তাঁরা দেখেছেন মা-মেয়েদের।
কেউ বলেন, প্রায় প্রতি রাতে মোমবাতি হাতে ঘরে, বারান্দায় ঘুরতে দেখা যেত তাঁদের। কেউ বলতে থাকেন, তাঁদের কথাও শুনেছেন।
স্থানীয়দের কেউ কেউ আবার দাবি করেছিলেন, আগের ছ’মাসে প্রায় প্রতি রাতে মা এবং দুই মেয়েকে বারান্দায় এসে দাঁড়াতে দেখেছেন। সে সময়ও তাঁদের হাতে থাকত মোমবাতি। তিন মহিলার মৃত্যুর কথা শুনে চমকে গিয়েছিলেন কুন্দনবাগের বাসিন্দারা।
তবে অনেকেই আবার জানিয়েছেন, এ রকম কিছু ঘটেনি। আগের ছ’মাস ধরে ওই তিন জনের কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। বাড়িতে আলো জ্বলতেও দেখেননি তাঁরা। যদিও তাতে স্থানীয়দের শঙ্কা কমেনি।
ক্রমে সেই খবর প্রচারিত হয়। ওই বাড়িতে মাঝরাতে ভিড় জমান বহু মানুষ। অনেকেই জানান, রহস্যজনক ঘটনা চোখে পড়েছে তাঁদের। কেউ আবার বলেছেন, কিছুই দেখেননি। আসলে কী ঘটেছিল সেই বাড়িতে, কী ভাবে মারা গিয়েছিলেন মা এবং দুই মেয়ে, তা আজও অজানা।