কোচির বাসিন্দাদের জন্য সুখবর। কেরলের এই শহরের আশপাশের বহু দ্বীপে যাতায়াতের জন্য এ বার থেকে তাঁদের ঘরের কাছেই হাজির হল ‘কোচি ওয়াটার মেট্রো’। ২৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার এই নয়া পরিবহণ ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দেশে এই প্রথম জলপথে মেট্রো চলাচল করবে। এমনই জানিয়েছেন কোচি ওয়াটার মেট্রো লিমিটেড (কেডব্লিউএমএল) এবং কোচি মেট্রো রেল লিমিটেড (কেএমআরএল)-এর কর্তারা। তাঁদের মতে, কোচির মতো ছোট শহরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও নয়া আকর্ষণ হবে এই পরিবহণ ব্যবস্থা।
সোমবার থেকে দু’দিন দেশ জুড়ে ৫,০০০ কিলোমিটার সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৩৬ ঘণ্টার ওই কর্মসূচিতে কোচি-সহ ৭টি শহরে পৌঁছনোর কথা রয়েছে তাঁর। বুধবার এই জল-মেট্রোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
এই মেট্রোর হাত ধরে রাজ্যের পর্যটন শিল্প লাভবান হবে বলে দাবি করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবহণের পাশাপাশি পর্যটনেও জোয়ার আনবে ওয়াটার মেট্রো।’’
কেরল সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বন্দরশহর কোচির আশপাশে অন্তত দশটি দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগে ভরসা হতে পারে ওয়াটার মেট্রো।
কোচি মেট্রোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর লোকনাথ বেহরা বলেন, ‘‘ওয়াটার মেট্রোর মাধ্যমে সস্তায় যাতায়াতের বন্দোবস্ত করা হলেও এতে আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে।’’
বেহরা আরও বলেন, ‘‘এই মেট্রোর মাধ্যমে ১৫টি রুটে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছনো যাবে। আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও বোট চালানো সম্ভব হবে।’’
১,১৩৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে জার্মান সংস্থা কেএফডব্লিউ-এর থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। পাশাপাশি, এতে রাজ্য সরকারও বিনিয়োগ করেছে। এই প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া জাগিয়েছে বলে দাবি বিজয়নের।
নামে মেট্রো হলেও আদতে এগুলি এক একটি ব্যাটারিচালিত বোট। সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার থেকে কোচির জলপথে ৭৮টি বিদ্যুৎচালিত হাইব্রিড বোট চলবে। সে জন্য ৩৮টি টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে কোচি শিপইয়ার্ডে তৈরি হয়েছে ২৩টি বোট। ব্যাটারিচালিত এই বোটগুলি ১৫ মিনিটে পুরোপুরি চার্জ করা যাবে।
ওয়াটার মেট্রোর বোটগুলিতে অত্যাধুনিক লিথিয়াম টাইটেনাইট স্পাইনেল ব্যাটারি লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) পি জন।
জলপথে মেট্রোয় প্রতি দিন একশো যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মেট্রোকর্তারা। বেহরা জানিয়েছেন, ২৬ এপ্রিল কোচির হাই কোর্ট থেকে ব্যপিন পর্যন্ত রুটে মেট্রো চলবে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। অন্য দিকে, পরের দিন ব্যট্টিলা থেকে কক্কানড়ে দ্বিতীয় রুটেও ওই সময়ে যাত্রা শুরু হবে।
এই মেট্রোয় যাতায়াতে ২০ টাকার দৈনিক টিকিট ছাড়াও যাত্রীরা সাপ্তাহিক, মাসিক এবং ৩ মাসের পাস কিনতে পারবেন। গোড়ায় তাতে ছাড়ও দেওয়া হবে।
সাপ্তাহিক পাসের জন্য যাত্রীদের খরচ হবে ১৮০ টাকা। প্রথম বার ওই পাস কেনার পর ১২ দিন তা বৈধ থাকবে। অন্য দিকে, মাসিক পাসের জন্য ৬০০ টাকা দিতে হবে। ৩০ দিন ধরে ওই পাসে ৫০টি ট্রিপে যাতায়াত করতে পারবেন মেট্রোযাত্রীরা।
৩ মাসের জন্য পাস কিনতে হলে খরচ করতে হবে দেড় হাজার টাকা। তাতে ৯০ দিন ধরে দেড়শো ট্রিপের সুবিধা পাবেন তাঁরা।
মেট্রো স্টেশনে কাউন্টার ছাড়াও অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ‘কোচি ওয়ান অ্যাপ’ নামে ওই অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট বুকিং করে কিউআর কোডের সাহায্যে তা বার করতে পারবেন যাত্রীরা।
মেট্রোকর্তারা জানিয়েছেন, হাই কোর্ট থেকে ব্যপিন পর্যন্ত রুটে যাতায়াতের জন্য ২০ মিনিট সময় লাগবে। অন্য দিকে, ব্যট্টিলা থেকে কক্কানড় পৌঁছতে সময় লাগবে ২৫ মিনিট। তবে দিনের ব্যস্ত সময়ে হাই কোর্ট থেকে ব্যপিন পর্যন্ত ১৫ মিনিট অন্তর ওয়াটার মেট্রো চালানো হবে।