নব্বইয়ের দশকে হিন্দি ফিল্মজগতে গুটিকতক ছবিতে অভিনয় করেই দর্শকমন জিতে নিয়েছিলেন রাজেশ জোশী। শৈশব থেকে অভিনয়কে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তাঁর। পরে আমির খান থেকে অক্ষয় কুমার, ঊর্মিলা মাতন্ডকরের মতো বলি তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ।
১৯৬৮ সালের ৩১ জুলাই মহারাষ্ট্রের মাহাড়ে জন্ম রাজেশের। বলি অভিনেতা মনোজ জোশীর ভাই ছিলেন রাজেশ। মনোজের সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্য ছিল তিন বছরের।
অভিনয় নিয়ে নিজের কেরিয়ার গড়বেন তা কখনও ভাবেননি রাজেশ। তবে অভিনয়ের প্রতি তাঁর দাদা মনোজের আগ্রহ ছিল প্রচুর। ১৯ বছর বয়সে থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন মনোজ। মরাঠি নাটকেও অভিনয় করতেন তিনি।
দাদাকে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখে অনুপ্রেরণা পান রাজেশ। তিনিও অভিনয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন। থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় রাজেশের। মরাঠি থিয়েটারজগতে অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলেন মনোজ এবং রাজেশ।
থিয়েটারে অভিনয় করেই রাজেশের জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। বলিপাড়া সূত্রে খবর, নাটকে রাজেশের অভিনয় দেখে মনে ধরেছিল বলি পরিচালক রামগোপাল বর্মার। তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য রামগোপাল সুযোগ দিয়েছিলেন রাজেশকে।
ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করেন রাজেশ। ১৯৯২ সালে রামগোপালের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘দ্রোহী’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন খ্যাতনামী দক্ষিণী অভিনেতা নাগার্জুন। ঊর্মিলা মাতন্ডকর এবং ড্যানি ডেনজংপার মতো বলি তারকারাও এই ছবিতে অভিনয় করেন।
‘দ্রোহী’ ছবিতে রাজেশের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান রামগোপাল। তাঁর পরের ছবিতেও রাজেশকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক।
১৯৯৫ সালে রামগোপালের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রঙ্গীলা’ ছবিটি। আমির খান এবং ঊর্মিলা মাতন্ডকর অভিনীত এই ছবিটি মুক্তির পর ভাল ব্যবসাও করে। এই ছবিতে আমিরের বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রাজেশকে।
‘রঙ্গীলা’ ছবিতে অভিনয়ের পর বলিপাড়ায় প্রশংসা কুড়োতে শুরু করেন রাজেশ। অমিতাভ বচ্চনের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে হাত মেলান তিনি। অমিতাভের সংস্থা দ্বারা প্রযোজিত ‘তেরে মেরে সপনে’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান রাজেশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তেরে মেরে সপনে’ ছবিতে আরশাদ ওয়ারসি, চন্দ্রচূড় সিংহ, প্রিয়া গিল এবং সিমরনের মতো তৎকালীন নবাগত তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেন রাজেশ।
১৯৯৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অক্ষয় কুমার এবং ঊর্মিলা মাতন্ডকর অভিনীত ‘আফলাতুন’ ছবি। এই ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অক্ষয়কে। অক্ষয়ের বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন রাজেশ।
বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন রাজেশ। কিন্তু বেশি দিন সেই সুখ ভোগ করতে পারেননি তিনি। মাত্র ২৯ বছর বয়সে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
১৯৯৮ সালের ১১ জানুয়ারি গাড়িতে চেপে একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন রাজেশ। হঠাৎ পিছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা মারে রাজেশের গাড়িতে। দুর্ঘটনায় গুরুতর চোট পান অভিনেতা।
আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাজেশকে। সারা রাত চিকিৎসা চলার পর ১২ জানুয়ারি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
রাজেশের মৃত্যুর পর তাঁর কেরিয়ারের দু’টি হিট ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। রামগোপাল পরিচালিত ‘সত্য’ ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ। এই ছবিতে ঊর্মিলা মাতন্ডকর, মনোজ বাজপেয়ী এবং সৌরভ শুক্লের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ।
রাজেশের মৃত্যুর পর আরও একটি ছবি মুক্তি পায় তাঁর। আমির খান, সোনালি বেন্দ্রে এবং নাসিরুদ্দিন শাহ অভিনীত ‘সরফরোশ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ।