দূরে বরফে ঢাকা পাহাড়। মাঝে সবুজ পাহাড়টি যেন চাদর দিয়ে মোড়া। সেখানেই গানের ছন্দ মিলিয়ে নাচ করছেন বলি তারকা রাজেশ খন্না এবং মুমতাজ়। সত্তরের দশকে মুক্তি পাওয়া ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানে এই দৃশ্যই ধরা পড়ে। সঙ্গীত পরিচালকের উপর ‘প্রতিশোধ’ তুলতে এই গানের কলিই নাকি বদলে দিয়েছিলেন কিশোর কুমার।
১৯৭৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আপ কী কসম’। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জে ওমপ্রকাশ। রাজেশ খন্না এবং মুমতাজ়ের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সঞ্জীব কুমারকেও।
‘আপ কী কসম’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন আরডি বর্মন। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবির একটি গানের শুটিংয়ের জন্য তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছিলেন। তা নিয়ে বার বার পরিচালকের কাছে কথা শুনতে হচ্ছিল তাঁকে। তার বদলা নিয়েছিলেন গায়ক কিশোর কুমার।
‘আপ কী কসম’ ছবি মুক্তির পর ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লোকের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে গানটি। কিন্তু পরিচালকের কটাক্ষের শোধ তুলতে এই গানের কলিই নাকি পরিবর্তন করেন কিশোর।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানটি নির্মাণের জন্য দেরি করছিলেন আরডি বর্মন। ফলে গানের শুটিংয়ের সময়ও পিছিয়ে যাচ্ছিল। সেই কারণে আরডি বর্মনের উপর খানিকটা রেগে ছিলেন ওমপ্রকাশ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানটি সমবেত কণ্ঠে গাওয়ার জন্য অতিরিক্ত কয়েক জন গায়ককে নিয়ে এসেছিলেন আরডি বর্মন।
শুধু গায়কদেরই নন, ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানটি নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত যন্ত্রবাদকেরও প্রয়োজন হয়েছিল আরডি বর্মনের। ফলে খরচও বেড়ে গিয়েছিল।
বলিপাড়ার গুঞ্জন, ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানটি তৈরি করতে প্রথমে খরচ হওয়ার কথা ছিল ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু আরডি বর্মনের অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজন পড়ায় সেই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকায়।
আরডি বর্মনের কারণে অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিল বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ওমপ্রকাশ। পরিচালক বলতেন, ‘‘৫০ হাজার খরচ হয়ে গেল।’’ সর্ব ক্ষণ এই একই কথা বলে যেতেন তিনি।
ওমপ্রকাশের কথা কিশোরের কানে পৌঁছে যায়। বার বার একই কথা শুনতে ভাল লাগছিল না গায়কেরও। তাই শোধ তুলতে গান রেকর্ড করার সময় কলিই বদলে দিয়েছিলেন তিনি।
‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ গানটি গাওয়ার সময় নির্দেশানুযায়ী কিশোরকে এক সময় বলতে হত, ‘‘বাজাও রে বাজাও, ইমানদারি সে বাজাও।’’ গানের কলির অংশ ছিল এই কথাগুলি। হেসে হেসে সেই কথাগুলি বলেছিলেন কিশোর।
বলিপাড়ায় জনশ্রুতি, গান রেকর্ডের সময় মশকরা করে কিশোর বলেন, ‘‘৫০ হাজার খরচা কর দিয়ে।’’ সুর মিলিয়ে হেসে হেসেই সে কথা বলেছিলেন তিনি।
আসলে পরিচালকের সঙ্গে স্রেফ মশকরা করার জন্যই সুর করে কথাটি বলেছিলেন কিশোর। কিন্তু এমন কায়দা করে তিনি বলেছিলেন যে তা কারও কানে ধরা পড়েনি। এই ভ্রান্তি নিয়েই গানটি রেকর্ড করা হয়। এমনকি ছবিতে ব্যবহারও করা হয় সেই গানটি।
কিশোরও তাঁর মশকরা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। কানাঘুষো শোনা যায়, ছবিটি মুক্তির পর পরিচালককে গানের ব্যাপারে জানিয়েছিলেন কিশোর। তখন আর গানের কলি পরিবর্তন করার কোনও সুযোগও ছিল না। পরিচালকও পুরো বিষয়টি মশকরা হিসাবেই নিয়েছিলেন।