তাঁর প্রতাপে সকলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন। ট্যাঁ ফোঁ করলেই শত্রুপক্ষকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ভয় দেখান। তাঁর পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভার নিয়ে চিন্তায় থাকে আন্তর্জাতিক মহল। উত্তর কোরিয়ার সেই শাসক কিম জং উনের দেশের বিরুদ্ধে রয়েছে চুরির অভিযোগ!
কয়েক হাজার কোটির গাড়ি চুরি করেছে উত্তর কোরিয়া। বহু বছর ধরেই এমন অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে। বিশ্বের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় গাড়ি চোর’-এর তকমা জুটেছে উত্তর কোরিয়ার কপালে। ঠিক কী অভিযোগ?
সত্তরের দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তর কোরিয়াকে সম্ভাবনাময় দেশ হিসাবে মনে করতেন সুইডেনের ব্যবসায়ীরা। আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল সে দেশ। সেই কারণেই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতে দু’বার ভাবেননি সুইডেনের ব্যবসায়ীরা।
১৯৭৪ সালে উত্তর কোরিয়ায় বর্তমান শাসক কিম জং উনের দাদু কিম ইল সুংয়ের রাজ্যপাট ছিল। সেই সময় সুইডেনের কাছে প্রচুর গাড়ির বরাত দিয়েছিলেন কিমের দাদু।
সুইডেনের কাছে তখন ১৪৪ মডেলের ভলভো গাড়ি ছিল। ১ হাজারটি ভলভো গাড়ি সুইডেনের কাছ থেকে বরাত নিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। সেই মতো ১৯৭৪ সালেই ওই গাড়িগুলি পিয়ংইয়ঙে পাঠানো হয়।
অভিযোগ, গাড়ি দেওয়া হলেও, তার টাকা দেয়নি উত্তর কোরিয়া। ৪৯ বছর হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ওই ১ হাজারটি গাড়ি কেনার টাকা মেটায়নি কিমের দেশ। এই ঘটনাকে সরকারি মদতে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গাড়ি চুরির ঘটনা বলা হয়।
সম্প্রতি ‘হিস্ট্রি ভিডস’ নামে টুইটারের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘সত্তরের দশকে সুইডেনের কাছ থেকে ১ হাজারটি ভলভো গাড়ির বরাত দিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। গাড়িগুলি উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত টাকা মেটানো হয়নি। এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি চুরির ঘটনা।’’
ওই ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যমে। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এই ভিডিয়ো নিয়ে অনেকে নানা মন্তব্য করেছেন।
অনেকে প্রশ্ন করেছেন, টাকা না নিয়ে কেন গাড়িগুলি উত্তর কোরিয়ায় পাঠাল সুইডেন। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এই নিয়ে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
গাড়ি কিনে টাকা মেটাবে না— উত্তর কোরিয়া যে এমনটা করতে পারে তা কখনও ভাবতেই পারেনি সুইডেন। সাংবাদিক ফ্লোরিন আমেরেই বলেছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়া নিজেদের কথার খেলাপ করবে, এটা কখনই আশা করেনি সুইডেন। সেই কারণেই টাকার জন্য তারা আজও অপেক্ষা করছে।’’
৪৯ বছর পরও হাল ছাড়েনি সুইডেন। সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও টাকা মেটানোর জন্য উত্তর কোরিয়াকে নিয়মিত বিল পাঠায় সুইডেন।
টাকা মেটানোর কথা বছরে দু’বার কিমের দেশকে মনে করায় সুইডেন। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। সুইডেনের এই বিলকে পাত্তাই দেয় না পিয়ংইয়ং।
১৯৭৪ সালে যে দামে গাড়িগুলি উত্তর কোরিয়াকে বিক্রি করেছিল সুইডেন, বর্তমানে সেই দাম অনেকটাই বেড়েছে। সুদের হার এবং অন্যান্য কর মিলিয়ে ১ হাজারটি ভলভো গাড়ির দাম এখন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো, ভারতীয় মুদ্রায় যা ২৬৭০ কোটি টাকারও বেশি।
জনসাধারণে তহবিল থেকে গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাকে টাকা মিটিয়েছে সুইডিশ সরকার। তবে রফতানিকৃত পণ্যের জন্য উত্তর কোরিয়ার থেকে টাকা পাওনা রয়েছে সুইডেনের।
খামখেয়ালি স্বভাবের জন্য পরিচিত কিম। এই স্বভাবের কারণে নানা কাণ্ড করে থাকেন উত্তর কোরিয়ার এই শাসক। প্রায় ৫০ বছর পরও সুইডেনকে গাড়ি কেনার টাকা না মেটানোও কি খামখেয়ালিপনা, না কি গাজোয়ারি?