এক দিনও প্রচারের জন্য বার হননি। জেলে বসেই লোকসভা ভোটে জয়ী হলেন খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংহ। লক্ষাধিক ভোটে তিনি জিতেছেন পঞ্জাবের খাদুর সাহিব আসন থেকে। কিন্তু ভোটে জিতলেও তিনি শপথ নিতে পারবেন কি? জেলে বসে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা কি আদৌ সম্ভব? উঠছে প্রশ্ন।
জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ)-এ অসমের জেলে বন্দি রয়েছেন অমৃতপাল। এক দিনের জন্যও প্রচারে যেতে পারেননি। এই অবস্থাতেও মঙ্গলবার ভোটে জিতেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অমৃতপাল পেয়েছেন ৪,০৪,৪৩০ ভোট। ওই আসনে দ্বিতীয় হয়েছেন কংগ্রেসের কুলবীর সিংহ। তিনি পেয়েছেন ২,০৭,৩১০ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন আপের লালজিৎ সিংহ ভুল্লার। তিনি পেয়েছেন ১,৯৪,৮৩৬ ভোট।
কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল জিতেছেন ১,৯৭,১২০ ভোটে।
কে এই অমৃতপাল? ‘ওয়ারিশ পঞ্জাব দে’ সংগঠনের নেতা তিনি। ১৮ মার্চ সঙ্গীদের নিয়ে তিনি হামলা চালিয়েছিলেন অমৃতসরের কাছে অঞ্জলা থানার লকআপে। তার পর থেকে বেশ কিছু দিন ফেরার ছিলেন।
তাঁর খোঁজে একের পর এক জায়গায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পঞ্জাবের মোগা থেকে গ্রেফতার করা হয় অমৃতপালকে। জাতীয় সুরক্ষা আইনে (এনএসএ) গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
গ্রেফতারির পর নিয়ে যাওয়া হয় অসমে। বর্তমানে সেখানেই ডিব্রুগড়ের জেলে রয়েছেন অমৃতপাল।
জেলে থাকাকালীন লোকসভা ভোটে লড়ার আবেদন জানিয়েছিলেন পঞ্জাবের এই খলিস্তানপন্থী নেতা। আদালতের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। খাদুর সাহিব আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়তে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন কমিশনের কাছে।
তাঁর হয়ে মূলত প্রচার চালিয়েছিলেন তাঁর বাবা তারসেম সিংহ। পাশে ছিলেন তাঁর স্থানীয় সমর্থকেরা। খাদুর সাহিব ছেয়ে গিয়েছিল অমৃতপালের পোস্টারে। যেখানে তাঁকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে তরোয়াল হাতে দেখা গিয়েছিল।
অমৃতপালের বাবার দাবি, পঞ্জাবের খাদুর সাহিবের মানুষ তাঁর ছেলের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। এমনকি, গোটা পঞ্জাবের মানুষও পাশে দাঁড়িয়েছেন পুত্রের।
প্রচারে মূলত তিনটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন অমৃতপালের বাবা তারসেম। পঞ্জাবে মাদকচক্র, জেল থেকে প্রাক্তন খলিস্তানপন্থী জঙ্গিদের মুক্তি এবং দেশে শিখ সত্তাকে রক্ষা— এই তিনি বিষয় নিয়েই প্রচার চালিয়েছিলেন অমৃতপালের সমর্থকেরা।
সেই তিন মন্ত্রেই বাজিমাত করেছেন অমৃতপাল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি সংসদে শপথগ্রহণ করতে পারবেন? যদিও শপথগ্রহণ করা তাঁর সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু যে হেতু তিনি বন্দি, তাই বাধাও রয়েছে।
শপথগ্রহণের জন্য অমৃতপালকে আগে জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে সংসদে গিয়ে শপথ নিতে পারবেন তিনি। তবে তার পর আবার জেলে ফিরতে হবে খলিস্তানপন্থী নেতাকে।
শপথগ্রহণের পর অমৃতপালকে লোকসভার স্পিকারকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে যে, তিনি সংসদে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। অনুপস্থিত হিসাবে তিনি সংসদের সদস্য থাকতে পারেন কি না, ভোটাভুটির মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
তবে জয়ী হলেও অমৃতপাল যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁকে দু’বছর বা তার বেশি সময় জেলে থাকতে হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে সাংসদ পদ হারাবেন তিনি।
পঞ্জাবে অমৃতপাল একা নন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারী বিয়ন্ত সিংহের ছেলে সর্বজিৎ সিংহ খালসাও জয়ী হয়েছেন। ফরিদকোট লোকসভা আসনে নির্দল হয়ে লড়েছিলেন তিনি। তিনি প্রচারে হাতিয়ার করেছিলেন ২০১৫ সালে বরগারিতে ‘গুরুগ্রন্থ সাহিব’ অবমাননার ঘটনা।
সাঙ্গরুর লোকসভা আসনে জিততে পারেননি, তবে তৃতীয় হয়েছেন আর এক খলিস্তানপন্থী সিমরনজিৎ সিংহ মান। তিনি আইপিএসও ছিলেন। ওই কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি।
এক দিনও প্রচারে না বেরিয়েও কেল্লাফতে করেছেন অমৃতপাল। প্রশ্ন আপাতত একটিই, শেষ পর্যন্ত কি সংসদে গিয়ে সওয়াল করা হবে এই খলিস্তানপন্থী নেতার?