সৌজন্যের নজির গড়ে রাতারাতি আলোচনায় উঠে এসেছেন পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে। আলিঙ্গন, করমর্দনের পর আচমকাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন ওই বিদেশি রাষ্ট্রনেতা। রবিবার রাতে সেই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই নজর কেড়েছে সব মহলে।
পাপুয়া নিউ গিনিতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সহযোগিতা সম্মেলনে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছেন মোদী। রবিবার রাতে সে দেশে নামে মোদীর বিমান। তখন সে দেশের স্থানীয় সময় ছিল রাত ১০টা।
বিমান থেকে মোদী নামতেই তাঁকে আলিঙ্গন করেন দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী মারাপে। তার পর দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা করমর্দন করেন। আর এর পরেই ঘটে সেই নজরকাড়া দৃশ্য।
আচমকাই মোদীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন মারাপে। সঙ্গে সঙ্গে নিচু হয়ে মারাপেকে জড়িয়ে ধরেন মোদী। তাঁর পিঠ চাপড়েও দেন নমো।
সাধারণত দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাৎপর্বে আলিঙ্গন এবং করমর্দনের মাধ্যমে সৌজন্য বিনিময়ের ছবিই এত দিন দেখে এসেছেন সকলে। সে ক্ষেত্রে এক দেশের প্রধানমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী— এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না।
তা ছাড়া, গুরুজনদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করা ভারতীয় সংস্কৃতির রীতি। সে দিক থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রীর এ হেন সম্মান প্রদর্শন নজর কেড়েছে।
মারাপের বয়স ৫২ বছর। মোদীর বয়স ৭২ বছর। ফলে পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রীর থেকে বয়সে বড় মোদী। আর সেই কারণেই ভারতীয় সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে মোদীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার রাতের পর থেকেই জেমস মারাপকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কে এই রাষ্ট্রনেতা, যিনি মোদীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন!
২০১৯ সাল থেকে পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মারাপে। তাঁর রাজনৈতিক দলের নাম ‘পাঙ্গু পতি’।
১৯৯৩ সালে পাপুয়া নিউ গিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে স্নাতক পাশ করেন। এর পর পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পরে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি।
দ্বীপরাষ্ট্রের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী মারাপে। অতীতে সে দেশের সরকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলেছেন তিনি।
২০১৯ সালে পিপল্স ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মারাপে। তার পরেই পাঙ্গু পতি দলে যোগ দেন।
২০২০ সালে মারাপে সরকারকে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তবে তা সফল হয়নি। মোদীকে প্রণামের পর মারাপে সম্পর্কে এই কথাগুলিই আলোচিত হচ্ছে।
এযাবৎ কাল পর্যন্ত কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রীকেই এমন সৌজন্য প্রদর্শন করেননি মারাপে। সে ক্ষেত্রে তিনি মোদীর অনুরাগী কি না, এ নিয়েও আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।
মোদীর জন্য নিজেদের দেশের চিরায়ত প্রথাও ভেঙেছে পাপুয়া নিউ গিনি। সূর্যাস্তের পর সে দেশে কোনও রাষ্ট্রনেতা গেলে তাঁকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা দেওয়া হয় না। তবে রবিবার মোদীর জন্য সেই প্রথা ভেঙেছে পাপুয়া নিউ গিনি। ঘটা করে মোদীকে স্বাগত জানানো হয়।