জনসংখ্যা মাত্র ১০ হাজার। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটি আয়তনে ওই এলাকার ক্ষুদ্রতম দ্বীপরাষ্ট্র। অখ্যাত এই দ্বীপের নাম নাউরু।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র নাউরু। এর নিকটতম দ্বীপ প্রায় ৫০০ কিমি পূর্বে অবস্থিত কিরিবাতির বানাবা দ্বীপ।
নাউরু বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দ্বীপরাষ্ট্র। এই দেশের ক্ষেত্রফল মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার। কলকাতার ক্ষেত্রফল প্রায় ২০৬ বর্গ কিলোমিটার। সেই নিরিখে কলকাতার ১০ ভাগের ১ ভাগ এই দ্বীপরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি এটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্বাধীন প্রজাতন্ত্র। এই দেশের কোনও রাজধানী নেই।
আয়তনে দ্বীপটি যতই ছোট হোক না কেন, এখানকার বাসিন্দারা আড়েবহরে বেশ চওড়া। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে স্থূল মানুষেরা বাস করেন এই দ্বীপে। দ্বীপের অধিবাসীদের প্রত্যেকের গড় বিএমআই ৩৪-৩৫!
১৮.৫ থেকে ২৪.৯- এর মধ্যে বিএমআই আদর্শ বলে বিবেচিত। যাঁদের বিএমআই ২৫ থেকে ২৯.৯, তাঁদের ওজন বেশি এবং ৩০-এর উপরে বিএমআই স্থূলতার লক্ষণ।
এই হিসাব ধরলে নাউরুর বাসিন্দারা প্রায় প্রত্যেকেই স্থূলতায় ভুগছেন।
এখানকার আদি বাসিন্দারা হলেন মাইক্রোনেশীয় ও পলিনেশীয় জাতির মানুষ। মোট জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ মানুষ নাউরুর আদি অধিবাসী ।
এখানকার বাসিন্দাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হল মুরগি ভাজা এবং কোলা জাতীয় পানীয়। বেশির ভাগ অধিবাসী ইনস্ট্যান্ট নুডলস, সোডা জাতীয় পানীয় এবং টিনজাত খাবার খেতেই অভ্যস্ত।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামুদ্রিক পাখিদের মুক্তাঞ্চল ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এই নাউরু। তাদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য কয়েক লাখ বছর ধরে জমতে জমতে উৎকৃষ্ট মানের ফসফেটের টিলায় পরিণত হয়। পরবর্তী কালে এই ফসফেটের টিলা নাউরুর জন্য আশীর্বাদ বলে চিহ্নিত হয়।
এখানকার অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হল ফসফেট। এই প্রাকৃতিক খনিজ আহরণের মাধ্যমে দেশটি সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছে।
১৯৭৫ সালে নাউরুর জনগণের মাথাপিছু আয় এত বেশি ছিল যে, তাদের থেকে একমাত্র ধনী রাষ্ট্র ছিল কুয়েত। নাউরুকে তখন বলা হত ‘প্রশান্ত মহাসাগরের কুয়েত’। তেলের রাজ্য কুয়েতের মতোই ফসফেট থেকে বিপুল আয় করতে থাকে নাউরু।
সমস্যার শুরু তখন থেকেই। চাষযোগ্য জমির অভাব থাকায় নিজেদের দেশে খাদ্য উৎপাদন করার চেয়ে পশ্চিমের দেশ থেকে খাবার আনার দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে নাউরু। সাতটি বিমান কেনা হয় শুধুমাত্র খাবার আমদানি করার জন্যই।
৭০-এর দশকের মাঝামাঝি নাউরুতে স্থূলতার সমস্যা বাড়তে শুরু করে। বাসিন্দাদের মধ্যে অত্যধিক হারে বাড়তে থাকে ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা এবং হৃদ্রোগের প্রকোপ। এই সব রোগ প্রধানত স্থূলতার কারণে ঘটে।
নাউরুর ৯৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৯৩ শতাংশ নারী স্থূলতার শিকার। মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নাগরিকের রয়েছে টাইপ-২ ডায়াবিটিস।
দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা কম যাওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয় ও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। ২০১১ সালে মাত্র ২০০ জন পর্যটক নাউরু গিয়েছিলেন।
রাজধানীবিহীন দেশ নাউরু। রাজধানী যেমন নেই, তেমনি দ্বীপটির নেই দ্বিতীয় কোনও শহর। ইয়ারেন একমাত্র শহর যেখানে বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় অবস্থিত।
নাউরুর আয়তন এত ছোট যে পুরো দ্বীপ জুড়েই রয়েছে বিমানবন্দরের রানওয়ে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এখানে জেট বিমান অবতরণ করত।