আট বছর আগে প্রথম দেখা। সে সময়ই প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন। প্রেমিককে বিয়ের স্বপ্নপূরণও হয়েছিল। তবে মা-বাবার থেকে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ের জাঁকজমকের অনুষ্ঠানের বছর দুয়েক পর আচমকা ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছেন আমেরিকান স্বামী। এমনই দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এক তরুণী।
কী কারণে এমন করলেন যুবক? অন্য কোনও সম্পর্কে বাঁধা পড়েছেন? না কি শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ায় পাকাপাকি ভাবে বসবাসের জন্যই বিয়ের বাহানা করেছিলেন? আজও জবাব পাননি অস্ট্রেলিয়ার ইসাবেল গ্যাস্টনবেরি।
৩১ বছরের ওই তরুণীর দাবি, কোনও কারণ না জানিয়েই বিয়ের দু’বছর পর তাঁর সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন স্বামী। তাঁদের একত্রবাসের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়েছেন। বাড়িতে যে সব পরিচারকদের এনেছিলেন তাঁর স্বামী, তাঁরাও প্রায় সকলে গায়েব। এমনকি, তাঁর মোবাইল নম্বরও ব্লক করে দিয়েছেন স্বামী। অথচ তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আড়ম্বরের অভাব ছিল না।
ইসাবেলের আরও দাবি, ২০১৮ সালে তাঁদের বিয়ের জন্য মা-বাবার কাছ থেকে ৫০,০০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪১ লক্ষ ২২ হাজারের বেশি টাকা) ধার নিয়েছিলেন। এমনকি, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের জন্য স্পাউস ভিসা পেতে যে ৮ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল স্বামীর, তা-ও দিয়েছেন তাঁর মা-বাবা।
টেক্সাসের বাসিন্দা মাইকেলের সঙ্গে ইসাবেলের প্রথম দেখা হয়েছিল ডালাসে। সেটি ছিল ২০১৫ সাল। প্রথম দেখাতেই নাকি সেই সুপুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন ইসাবেল। তাঁর কথাবার্তা, আচার-আচরণে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বেশ কয়েক মাসের প্রেমের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তড়িঘড়ি বাগ্দানও সেরে ফেলেন দু’জনে।
বাগদত্তের সঙ্গে একত্রবাসের জন্য ২০১৮ সালে আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছিলেন ইসাবেল। একসঙ্গে সে দেশ ছেড়েছিলেন। এর পর অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য ভিসার আবেদন করেন মাইকেল। সে বছরই সিডনির বোটহাউস পাম বিচে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে সেরে ফেলেন তাঁরা।
ইসাবেলের দাবি, তাঁদের রূপকথার মতো বিয়েতে হাজির হয়েছিলেন দু’পক্ষের আত্মীয়-পরিজনেরা। বিয়েতে ‘বেস্টম্যান’ হয়েছিলেন মাইকেলের এক বন্ধু। বিয়ের যাবতীয় খরচাপাতি দিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। বিয়ের অন্যান্য খরচের জন্য তাঁর ক্রেডিট কার্ডে ঋণ নেওয়ার শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
সিডনিতে তাঁদের স্বপ্নের সংসারে আচমকাই ছন্দপতন হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ইসাবেলদের বিয়ের ঠিক দু’বছর ৪ মাস পর। মাইকেলের স্পাউস ভিসার আবেদন অনুমোদিত হওয়ায় খবর উদ্যাপন করতে এক সন্ধ্যায় একত্রে রাতের খাওয়া সারতে রেস্তরাঁয় গিয়েছেন তাঁরা। খাওয়াদাওয়া, সুরাপানের পর্ব মিটে গেলে পরের দিন নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে হতবাক হয়ে যান ইসাবেল।
‘ডেইলি মেল অস্ট্রেলিয়া’র কাছে ইসাবেলের দাবি, মাইকেলের ভিসা পাওয়ার পরের দিন অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে স্বামীর দেখা পাননি। এমনকি, প্রায় সমস্ত আসবাবপত্র থেকে শুরু করে গায়েব পরিচারকেরাও।
বিস্ময়ের যেন আরও বাকি ছিল ইসাবেলের। তাঁর দাবি, স্বামীর সঙ্গে একত্রে অভিবাসন বিভাগে যে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, তাতে তাঁকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর সব ক্রেডিড কার্ড ঋণ নেওয়ার চরম সীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল বলে দেখাচ্ছিল। এমনকি, স্বামীকে ফোন বা মেসেজ করলেও তাঁর মোবাইল নম্বর ‘ব্লকড’ শোনাচ্ছে।
কোনও কিছু না জানিয়েই যেন বেমালুম হারিয়ে গিয়েছিলেন মাইকেল। মাসখানেক ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও তাঁর কোনও খবর পাননি ইসাবেল। মাইকেল কোথায় গিয়েছেন, সে সম্পর্কে নাকি কিছুই জানা ছিল না তাঁর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-পরিজন থেকে বন্ধুবান্ধবদের।
ইসাবেল বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল আমার স্বামী। আমাদের সমস্ত বন্ধুবান্ধব, ওর পরিবারের লোকজন থেকে বিয়ের দিন যে সমস্ত অতিথিরা এসেছিলেন, তাঁদের কেউ জানতেন না, মাইকেল কোথায় রয়েছে!’’
এত মাস পর এই ঘটনা নিয়ে চিন্তা করলে ইসাবেলের চোখে অনেক ইঙ্গিত ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘গায়েব হওয়ার আগে থেকেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করেছিল মাইকেল। এখন মনে পড়ে, কত রাত বাইরে কাটাত। মাঝেমধ্যে মনে হয় যেন একেবারে অচেনা মানুষকে বিয়ে করেছিলাম।’’
ইসাবেলের দাবি, গায়েব হওয়ার কয়েক দিন আগে মাইকেল কুইন্সল্যান্ডে গিয়ে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর ঘরবাড়ি কেনা থেকে পরিবার শুরু করার কথাও বলেছিলেন। ইসাবেলের কথায়, ‘‘আমি জানি না, ওর কী মতলব ছিল। তবে এখন এ সব কিছুই অর্থহীন মনে হয়।’’
স্বামীর গায়েব হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে ইসাবেলের মনে হরেক শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার মনে হয়, আমাদের বিয়ে হয়েছিল বটে। তবে ওর কাছে সে সব অতীত হয়ে গিয়েছিল। আমার মুখের উপর সংসার ছাড়ার কথা বলার সাহস ছিল না বলেই এ ভাবে চলে গিয়েছে। হয়তো অস্ট্রেলিয়া বসবাসের জন্যই এ সব করেছে।’’
ইসাবেলের দাবি, সিডনিতে সংসার পাতার সময় ভিসার আবেদনের জন্য স্বামীকে ১০,০০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার বেশি) দিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। তবে মাইকেল গায়েব হওয়ার পর অভিবাসন দফতরে দরবার করলেও তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়নি।
স্বামী গায়েব হওয়ার বছরখানেক পর অবশ্য নতুন করে সংসার পেতেছেন ইসাবেল। স্কুলের বন্ধু ম্যাক্সকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাঁদের এক সন্তানও রয়েছে। তার আগে অবশ্য আইন মেনে বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন তিনি।
২০২১ সালে অবশ্য মাইকেলের সঙ্গে এক বার দেখা হয়েছিল ইসাবেলের। কী কারণে গায়েব হন তিনি? প্রশ্ন করতে মাইকেল নাকি বলেছিলেন, আবার সিঙ্গল থাকতে চান।
তাঁর জীবনের এই পর্বের পর ইসাবেলের মন্তব্য, ‘‘এই ঘটনার আগেই বহু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। তবে সেগুলোকে বিশেষ পাত্তা দিইনি। ফলে আমার মনে হয়, প্রেমে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।’’