RAW Covert Operations

পাকিস্তানে ঢুকে খুঁজে খুঁজে জঙ্গিদের মারছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা? দাবি ঘিরে শোরগোল

পাকিস্তানে ঢুকে খুঁজে খুঁজে জঙ্গি নেতাদের নিকেশ করছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (র)। নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে ইসলামাবাদের বিস্ফোরক অভিযোগে দুনিয়া জুড়ে শোরগোল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:
০১ ১৮

দেশ জুড়ে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’! অজ্ঞাত হামলাকারীর গুলিতে ঝাঁঝরা হচ্ছেন ‘নিরীহ’ নাগরিকেরা। আর পর্দার আড়ালে থেকে সব কিছু পরিচালনা করছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (র)। নতুন বছরের শুরুতেই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনল পাকিস্তান। যদিও একে ইসলামাবাদের ‘স্বভাবসিদ্ধ মিথ্যাচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

০২ ১৮

সম্প্রতি, দেশের ভিতরে চলা একাধিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেন পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালুচ। তিনি বলেন, ‘‘একাধিক অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় নয়াদিল্লির গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। ভারত দিন দিন বিপজ্জনক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।’’ প্রসঙ্গত, বালুচ যে ‘নিরীহ’ নাগরিকদের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৮

ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাক ভূমিতে ‘টার্গেট কিলিং’ চালাতে সহজ রাস্তা অনুসরণ করছে র। খুনের জন্য আফগানদের ভাড়া করা হচ্ছে। দুবাইয়ে বসে দেওয়া হচ্ছে হত্যার সবুজ সঙ্কেত। আর হাওয়ালার মাধ্যমে খুনের ‘সুপারি’ পাচ্ছে আততায়ীরা।

০৪ ১৮

পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এ ব্যাপারে নাম না করে আফগানিস্তানের তালিবান শাসক এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি)-র দিকে আঙুল তুলেছেন। এই দুই সংগঠনের থেকে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার এজেন্টরা যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। বিনিময়ে পাক ভূমিতে সন্ত্রাস ছড়াতে টাকা এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তাঁদের সাহায্য করছে নয়াদিল্লি।

০৫ ১৮

পাক সংবাদ সংস্থা ‘দ্য ডন’ এবং ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গুপ্তচর সংস্থা র-এর ‘টার্গেট কিলিং’য়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। তাঁর নির্দেশেই চলছে হত্যাকাণ্ড। এ ব্যাপারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ভূমিকার কথাও সেখানে ফলাও করে লেখা হয়েছে।

০৬ ১৮

তবে ইসলামাবাদের এই দাবির নেপথ্যে রয়েছে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর একটি প্রতিবেদন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন ইন্ডিয়াজ় শ্যাডো ওয়ার উইথ পাকিস্তান’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমেরিকার এই জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম। সেখানেই পাক ভূমিতে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পিছনে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর হাত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

০৭ ১৮

উদাহরণ হিসাবে ২০২৩ সালে লাহোরে আমির সরফরাজের খুনের কথা বলেছে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। ২০১১ সালে র এজেন্ট সন্দেহে ধৃত সর্বজিৎ সিংহকে খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। জঙ্গি মহলে সরফরাজের পরিচিতি ছিল ‘তাম্বা’ নামে। হঠাৎই এক দিন বাইকে করে এসে অজ্ঞাত ঘাতকেরা তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়। আততায়ীদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পাক প্রশাসন।

০৮ ১৮

‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ দাবি করেছে, ২০২১ সালের পর থেকে পাক ভূমিতে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। খুঁজে খুঁজে জঙ্গি নেতাদের নিকেশ করছেন ভারতীয় গুপ্তচরেরা। এখনও পর্যন্ত অন্তত ছ’জনকে এই পদ্ধতিতে মেরেছে নয়াদিল্লি। এর পিছনে দ্বিমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

০৯ ১৮

প্রথমত, নিরাপত্তার স্বার্থেই পাক জঙ্গি নেতাদের খতম করছে নয়াদিল্লি। ২৬/১১-র মতো সন্ত্রাসী হামলা যেন আর না হয়, সেটাই এর মূল উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার পর নিজেকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। আর তাই গুপ্তচর সংস্থাকে এ ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি। প্রতিবেদনে এমনটাই লিখেছে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’।

১০ ১৮

পাক তদন্তকারীদের অভিযোগ, দুবাইয়ের কয়েক জন ব্যবসায়ীকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়োগ করেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা। তাঁদের মাধ্যমেই চলছে টাকার লেনদেন। এই কাজে কিছু স্থানীয় দুষ্কৃতীকেও ভাড়া করা হচ্ছে। তবে এই কাজে কখনওই কোনও ভারতীয়কে নিয়োগ করেনি র। খুনের পর আততায়ীদের আত্মগোপনের পরিকল্পনাও দুবাইয়ে বসে করা হচ্ছে বলে মনে করেন পাক গোয়েন্দাদের একাংশ।

১১ ১৮

২০১৪ সালে পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল। তিনি বলেন, ‘‘ইসলামাবাদের সঙ্গে খোলা ময়দানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বোকামি হবে। তবে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করার অন্য অনেক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী হল গুপ্ত ভাবে তাদের শাস্তি দেওয়া। কারণ আমাদের চেয়ে পাকিস্তানের দুর্বলতা বহু গুণ বেশি।’’

১২ ১৮

পাক সংবাদ সংস্থাগুলির দাবি, ওই সময় থেকেই গুপ্ত হত্যার কৌশল অবলম্বন করে আসছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা। ডোভালের ভাষণের এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালে ইসলামাবাদের একটি বেকারির বাইরে গুলিতে খুন হন নাসিরুদ্দিন হাক্কানি। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বোমা বিস্ফোরণকাণ্ডের মূলচক্রী ছিলেন তিনি।

১৩ ১৮

পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালুচ বলেছেন, ‘‘ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার এজেন্টদের এ ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করবে।’’ ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক স্তরে এর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাবে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

১৪ ১৮

অন্য দিকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদন খারিজ করে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে একটিই শব্দ সমার্থক। সেটা হল, সন্ত্রাসবাদ। ভুলে গেলে চলবে না আমেরিকার সাবেক বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন ইসলামাবাদ সম্পর্কে কী বলেছিলেন। ওঁর বলা কথাটা ছিল, আপনার পোষা সাপ শুধুমাত্র প্রতিবেশীকে কামড়াবে তা ভাবা ভুল।’’

১৫ ১৮

নতুন বছরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে দু’বছরের জন্য অস্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছে পাকিস্তান। আগামী জুলাইয়ে এই পরিষদের সভাপতিত্বও করবে ইসলামাবাদ। ফলে সেখানে যে ফের এক বার কাশ্মীর ইস্যু উঠতে চলেছে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। পাশাপাশি, দেশের ভিতরের ‘টার্গেট কিলিং’ নিয়েও সেখানে মুখ খুলতে পারেন পাক কূটনীতিকেরা।

১৬ ১৮

রাষ্ট্রপুঞ্জের পাক দূত মুনির আক্রম বলেছেন, ‘‘কাশ্মীর সমস্যার আন্তর্জাতিক ভাবে সমাধান হোক, এটাই আমরা চাই। আর তাই বিষয়টি আমাদের উত্থাপন করতেই হবে।’’ তবে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যের ভিটো দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সমস্যা বাড়বে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।

১৭ ১৮

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে ভারত। সেটা পেলে ভিটো ক্ষমতা চলে আসবে নয়াদিল্লির হাতে। বর্তমানে এর স্থায়ী সদস্যের সংখ্যা পাঁচ। সেই দেশগুলি হল, আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং চিন। ভারতকে পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি রয়েছে বেজিংয়ের।

১৮ ১৮

আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি কুর্সিতে বসলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে আমেরিকার চাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাতেও নয়াদিল্লির রাস্তা খুব সহজ হবে না, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement