একে আনকোরা টুর্নামেন্ট। তায় প্রথম ম্যাচ। সঙ্গে আবার মাঠও প্রতিপক্ষের। এ সব ‘বাধা’ সত্ত্বেও প্রথম আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে চূর্ণ করেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ১১ যোদ্ধা। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল ওই ম্যাচের একটি রেকর্ড নিয়ে আজও গর্ববোধ করেন নাইট-ভক্তরা। কেকেআরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়ের নজির গড়েছিলেন নাইটরা। ৩ উইকেট খুইয়ে ২২২ রান করার পর রয়্যালদের ১৪০ রানে হারিয়েছিলেন নাইটরা। সেই ১১ জন নাইটরা আজ কে কোথায়?
প্রথম আইপিএলে শাহরুখ খানের দলের সেনাপতি ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঘরের পিচে উদ্বোধনী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রয়্যাল অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। সে বারের ম্যাচে অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে সঙ্গী করে বিপক্ষের গোলাবারুদ সামলাতে ওপেনিং করতে নেমেছিলেন সৌরভ।
তবে দলের স্মরণীয় ম্যাচে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সকে ভুলে যেতে চাইবেন তিনি। ওই ম্যাচে ১২ বলে মাত্র ১০ রান করে বিদায় নেন সৌরভ। তবে বোলার সৌরভের ঝুলিতে ৪ ওভারে ২ উইকেট ছিল। এ ছাড়া, সব ক’টি আইপিএল ম্যাচ মিলিয়ে ১,৩৪৯ রান করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ৭টি অর্ধশতরানও। ১০টি আইপিএল উইকেটও রয়েছে তাঁর।
অবসরের পর বেশ কিছু দিন ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হিসাবে দেখা গিয়েছিল সৌরভকে। তার পর প্রশাসকের চেয়ারে বসেছেন। বাংলার ক্রিকেটে কিছুকাল কাটিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে। বিসিসিআই সভাপতির ভূমিকায় হামেশাই ক্রিকেটার সৌরভের ঝলক দেখা যায় বলে মত ক্রিকেট পণ্ডিতদের।
উদ্বোধনী ম্যাচে ব্যাটার সৌরভ হতাশ করলেও ব্রেন্ডন ম্যাকালাম সম্পর্কে সে কথা বলা যাবে না। বরং নাইটদের জয়ের কৃতিত্বের সিংহভাগ গিয়েছিল ম্যাকালামের দখলে। সে দিনের ম্যাচে দ্রাবিড়দের প্রতিটি বোলারের ইকনমি রেট বিগ়ড়ে দিয়েছিলেন ম্যাকালাম। ৭৩ বলে অপরাজিত ১৫৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ছিল ১৩টি ছয়। সঙ্গে ১০টি চার। স্ট্রাইক রেটও চোখ কপালে তোলার মতো— ২১৬.৪৩। উপরি হিসাবে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসেও দলকে ভরসা দিয়েছিলেন ম্যাকালাম।
উদ্বোধনী ম্যাচে ম্যাকালাম-ঝড়ের পর তাঁকেই সেরা খেলোয়াড় বাছা ছাড়া উপায় ছিল না। ক্রিস গেল (অপরাজিত ১৭৫)-র পর আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক আজকাল কোচ হিসাবে তাঁর পুরনো দলকে সামলাচ্ছেন।
কেকেআরে সৌরভ ছাড়াও আর এক জন ‘অধিনায়ক’ ছিলেন। তিনি রিকি পন্টিং। ২০০৮ সালে তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। লাল বলের ক্রিকেটে যতই সৌরভ-পন্টিং দ্বৈরথ থাকুক না কেন, কেকেআরের হয়ে দীর্ঘ দিন তিন নম্বর সামলেছেন এই অজি। প্রথম ম্যাচে সৌরভ আউট হওয়ার পর নেমে ২০-২০ করেছিলেন। অর্থাৎ ২০ বলে ২০ রান।
ম্যাকালামের মতোই কোচিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন পন্টিং। তবে পুরনো দলের বদলে দিল্লি ক্যাপিটালসকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
পন্টিংয়ের মতোই আর এক অজিও নাইটদের বার বার ভরসা দিয়েছেন। তবে প্রথম ম্যাচে সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি ডেভিড হাসি। ১২ বলে তাঁর অবদান মাত্র ১২। যদিও আন্তর্জাতিক স্তরের টি-টোয়েন্টিতে মাইকেল হাসির ছোট ভাইয়ের কেরিয়ার স্ট্রাইক রেট ৮০-র বেশি। রয়েছে ৩টি অর্ধশতরান-সহ ১৯টি উইকেটও।
ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর কোচিংকে বেছে নিয়েছেন হাসি। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগের দল মেলবোর্ন স্টার্সের কোচ হিসাবেই দিন কাটছে তাঁর।
ব্যাটে-বলে দলের ভারসাম্য বজায় রাখতে মহম্মদ হাফিজকে দলে রেখেছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে রয়্যালদের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারেননি হাফিজ। ১৭তম ওভারে নেমে মাত্র ৩টি বল খেলার সুযোগ পান। করেছিলেন ৫ রান। সে ম্যাচে অবশ্য তাঁকে বল করতে ডাকেননি সৌরভ।
১৮ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ইতি টেনেছেন ৪১ বছরের ‘দ্য প্রফেসর’ হাফিজ। যদিও পাকিস্তান দলের এই প্রাক্তন অধিনায়ককে পিসিএল-সহ অন্যান্য টুর্নামেন্টে দেখা যাবে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। তবে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে নজর কাড়তে ব্যর্থ হন। ব্যাট করার সুযোগ আসেনি। বল হাতে ১.১ ওভারে ১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
ক্রিকেটের জুতো ছেড়ে এ বার অন্য রাজনীতিকের জুতোয় পা গলিয়েছেন লক্ষ্মী। তৃণমূলের প্রতীকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রীও হন। তবে গত বছর মন্ত্রিত্ব থেকেও ইস্তফা দেন তিনি।
অনেকের মতে, বিশ্বের এক নম্বর উইকেটরক্ষকের নাম ঋদ্ধিমান সাহা। তবে কেকেআরের হয়ে সে ভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ আসেনি। তবে নাইটদের ছেড়ে পঞ্জাব কিংসদের হয়ে শতরান-সহ বহু স্মরণীয় ইনিংস রয়েছে ঋদ্ধির।
দেশের হয়ে ঋদ্ধি কি শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন? আপাতত এই প্রশ্নে তোলপাড় ক্রিকেটদুনিয়া। তবে এরই ফাঁকে আসন্ন আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের জার্সিতে নিজেকে ফের প্রমাণ করার সুযোগ তাঁর সামনে।
রয়্যালদের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সুযোগ আসেনি। তবে বল হাতে ৪ ওভারে ৩টি উইকেট নিয়েছিলেন অজিত আগরকর। ওই ম্যাচে জাক কালিস, ক্যামেরুন হোয়াইট এবং বালচন্দ্র অখিলকে ডানা মেলতে দেননি তিনি। জাতীয় দলের হয়ে তিনটি ফরম্যাটে ২০০-র বেশি ম্যাচ খেলেছেন ৪৪ বছরের এই অলরাউন্ডার। একদিনের ম্যাচে রয়েছে ২১ বলে অর্ধশতরান। যা ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম।
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান আগরকর। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হয়ে ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২২২ রানের লক্ষ্য তাড়া করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তবে বোলিং ওপেন করতে নেমে রয়্যালদের ওয়াসিম জাফরের উইকেট তুলে নিয়ে ধাক্কা দেন অশোক ডিন্ডা। এর পর তুলে নেন আরও দামি উইকেট। অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে পুল করতে গিয়ে উইকেট খুইয়ে বসেন বিরাট কোহলী।
অবসরের পর লক্ষ্মীর মতোই রাজনীতিতে ঝুঁকেছেন ডিন্ডা। ময়না বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র টিকিটে জিতেছেন তিনি।
দলে থাকলেও প্রথম ম্যাচে রয়্যালদের বিরুদ্ধে ব্যাট বা বলে কেরামতি দেখানোর সুযোগ পাননি মুরলী কার্তিক।
৪৫ বছরের মুরলী কার্তিকও বহু প্রাক্তনের মতো ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হিসাবে নাম কামাচ্ছেন।
প্রথম বলেই রয়্যালদের অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়কে তুলে নেন ইশান্ত শর্মা। দলের তখন দ্বিতীয় ওভার। দ্রাবিড়ের মিডল এবং অফ স্টাম্প নাড়িয়ে দিয়েছিল ইশান্তের ইয়র্কার।
কেকেআরের প্রথম ম্যাচের ১১ জনের মধ্যে ঋদ্ধিমান ছাড়া একমাত্র ইশান্তই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন।