জীবনে একাধিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে আসা কোনও মানুষের সাফল্যের গল্প আজও জনসাধারণের মনে আশার আলো জোগায়। এ রকমই এক ব্যক্তি হলেন আইএএস অফিসার বিজয় অমৃত কুলাঙ্গে। হাজার প্রতিকূলতা পেরিয়েও সমাজে নিজের জন্য এমন জায়গা করে নিয়েছেন বিজয়, যা লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে অনুপ্রাণিত করে।
মহারাষ্ট্রের আমদনগর জেলার রালেগানের একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম বিজয়ের। বিজয়ের বাবা দর্জি এবং মা চাষের জমিতে দিনমজুরি করতেন। বিজয় ছোট থেকেই দেখতেন তাঁর বাবা-মাকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়।
বিজয়ের বাবা-মা প্রতি দিন প্রায় ২০০ টাকা উপার্জন করতেন। আর সেই টাকাতেই রোজকার খাওয়াদাওয়া এবং দুই সন্তানের পড়াশুনোর খরচা চালাত হত তাঁদের।
কিন্তু ছোট থেকেই বিজয়ের এমন কিছু করার ইচ্ছা ছিল, যাতে তিনি বাবা-মার দুঃখ একেবারে ঘোচাতে পারেন।
ছোট থেকেই বই পড়তে ভালবাসতেন বিজয়। স্কুলেও সেরাদের তালিকাতে থাকতেন তিনি। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতে তিনি স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
খুব কম সুযোগ-সুবিধা থাকা একটি খরাপ্রবণ গ্রামে বড় হয়ে ওঠা বিজয় ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় আসন পাওয়া সত্ত্বেও পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতির কারণে তাঁর ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়।
বিজয় এক সাক্ষাৎকারে বলেন,“আমরা দারিদ্রের মধ্যে বাস করছিলাম এবং আমার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপার্জন শুরু করা দরকার ছিল। ডাক্তারি নিয়ে উপার্জন করতে ৭-৮ বছর লেগে যেত। আমার একটি ছোট বোন ছিল এবং আমার বাবা-মা তার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেই কারণেই আমি এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যাতে আমি তাড়াতাড়ি উপার্জন করতে পারি।’’
অনেক বিবেচনা করে তিনি ‘ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন’ (ডিএড) নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন। ছ’মাসের মধ্যে নিকটবর্তী নেভাসা এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। চাকরি থেকে উপার্জন করার পাশাপাশি বিজয় দূরশিক্ষার মাধ্যমে স্নাতক স্তরে পড়াশোনাও শুরু করেন।
তবে বিজয় সব সময়ই মনে করতেন যে, জীবনে তাঁর আরও অনেক কিছু করা বাকি। তাঁর বাবাও মনে করতেন, তাঁদের ছেলে আরও অনেক খ্যাতি অর্জন করতে পারে। এই কারণে তিনি বিজয়কে রাজ্যের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার জন্য উৎসাহিত করেন। বাবার কথা মেনে নিয়ে বিজয় মহারাষ্ট্র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
বাবার কথা রাখতেই হবে। তাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে দিনের বেলায় শিক্ষকতা এবং রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন বিজয়। কিন্তু পরীক্ষার পাঠ্যক্রম অনেক বেশি হওয়ায় পরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেন তিনি।
তৃতীয় বারের প্রচেষ্টায় মহারাষ্ট্র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আহমেদনগরে আয়কর দফতরের আধিকারিক পদে যোগ দেন বিজয়।
তবে এর পর লক্ষ্য আরও উপরে স্থির করেন বিজয়। শুরু করেন ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
২০১২ সালে এক বারের প্রচেষ্টায় ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাস করে আইএএস অফিসারের পদ অর্জন করেন। আইএএস অফিসার হিসাবে বিজয়ের প্রথম পোস্টিং ছিল ওড়িশার ঢেঙ্কানাল জেলায়।
‘আজচা দিওয়াস মাজা’ নামক একটি মারাঠি বইও লিখেছেন বিজয়। এই বইয়ে তিনি তাঁর সংগ্রাম, যাত্রাপথ, বাবা-মায়ের ত্যাগ স্বীকার নিয়ে লিখেছেন।
বর্তমানে বিজয় বাবা-মার সঙ্গেই থাকেন। কোভিডের সময় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প হোক কিংবা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য হোক--- মানুষের সেবায় সব সময়ই এগিয়ে থেকেছেন বিজয়।