বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, গ্যাস, জলবিদ্যুৎ এবং বায়ুশক্তি ছাড়া ২২টি পারমাণবিক চুল্লির উপরে ভরসা করতে হয় ভারতকে।
২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের আটটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই ২২টি চুল্লি মোট ৭,৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
অসমর্থিত সূত্রের মতে, বিদ্যুতের উৎস হিসাবে কয়লা, গ্যাস, জলবিদ্যুৎ এবং বায়ুশক্তির পর পঞ্চম স্থানে রয়েছে পরমাণুশক্তি। তবে সেগুলি চালু রাখতে বিদেশি প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হয় ভারতকে। এ বার সে চিত্রে বদল ঘটছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে কাকরাপার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে উৎপাদন শুরু করেছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই কেন্দ্রটিই আপাতত ভারতের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। একে ‘মাইলফলক’ বলে তকমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার টুইট করে মোদী বলেন, ‘‘ভারতের মুকুটে আরও একটি মাইলফলক জুড়ল। সে জন্য (কাকরাপার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের) বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের অভিনন্দন।’’
নিজের টুইটে মোদী আরও জানিয়েছেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি গুজরাতের কাকরাপার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিই এ ধরনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। এর ইউনিট ৩-তে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
৩০ জুন থেকে এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানো হয়েছে। তবে গত মাস থেকে তা ১০০ শতাংশ কার্যকর।
কাকরাপার পরমাণু শক্তিকেন্দ্র প্রকল্পের (কেএপিপি) নকশা তৈরি করা থেকে শুরু করে এর নির্মাণ এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় সহায়তা দিয়েছে ভারত সরকারের পারমাণবিক শক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনপিসিআইএল)।
দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই কেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। ১৯৯৩ সালে এখানকার একটি ইউনিটে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পরে ২০০৭ সালে এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ করা হয়েছিল।
ধীরে ধীরে কাকরাপারের কেন্দ্রটিতে তৃতীয় এবং চতুর্থ ইউনিটও উৎপাদন শুরু করে। তবে চতুর্থ ইউনিটটি এখনও ১০০ শতাংশ উৎপাদনক্ষম নয়।
কাকরাপারে ২২০ মেগাওয়াট করে ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দু’টি চুল্লি রয়েছে। এ ছাড়া, এখানে ৭০০ মেগাওয়াটের আরও দু’টি কেন্দ্র গড়ছে এনপিসিআইএল।
কারকাপারের আধিকারিকেরা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রের ইউনিট ৪-এও নানা কাজকর্ম চলছে। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত তাতে মোট ৯৭.৫৬ শতাংশ কাজ হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ২৩টি বাণিজ্যিক পরমাণু চুল্লি পরিচালনা করে এনপিসিআইএল। সম মিলিয়ে সেগুলি থেকে মোট ৭,৪৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
কারকাপার ছাড়াও আরও ন’টি কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে এনপিসিআইএল-এর। যেগুলি থেকে মোট ৭,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে দাবি।
কারকাপারের সাফল্যের পর দেশ জুড়ে ১৬টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে চায় এনপিসিআইএল। সেখানে প্রেসারাইজ়ড হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর (পিএইচডব্লিউআর) বা এমন ১০টি চুল্লি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে মোদী সরকার।
হরিয়ানার গোরক্ষপুর, মধ্যপ্রদেশের চুটকা, রাজস্থানের মাহি বাঁশওয়াড়া এবং কর্নাটকের কাইগা গ্রামে ওই ধরনের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। কারকাপারের কেন্দ্রটির মতোই এ সমস্ত কেন্দ্রে দেশীয় প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে।