সেতুর উপর দিয়ে রেলগাড়ি ছুটে যাওয়ার শব্দ ভ্রমণপিপাসুদের মন কাড়ে বরাবর। হাওয়ায় রেলের চাকার শব্দের প্রতিফলন দীর্ঘ যাত্রায় গমগমে মেজাজের ছোঁয়া এনে দেয়। অনেকেই তাই রেলসেতু পছন্দ করেন।
রেলসেতু কারও কাছে পছন্দের, কেউ আবার তাতে বিপদের গন্ধ পান। অনেকে সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন ছুটে যাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁদের মতে, সেতুতে রেল দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি।
রেলগাড়ি চলার জন্য সাধারণ সেতু তো অনেক আছে। কিন্তু তারের উপর তৈরি সেতু! তার দিয়ে তৈরি রেলসেতুর কথা হয়তো অনেকেই শোনেননি। ভারতে এত দিন তেমন সেতু কোথাও ছিল না।
তবে দেশের প্রথম তার নির্মিত রেলসেতু তৈরির কাজ প্রায় সমাপ্ত। ‘কেবল স্টেড’ রেলসেতু গড়ে উঠেছে কাশ্মীরে। শীঘ্রই তার উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসী জেলায় তারের উপর একটি রেলসেতু তৈরি করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে অঞ্জী খাদ সেতু। এই সেতু রিয়াসী শহরকে কাটরা শহরের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করেছে।
ট্রেনে কাশ্মীরে যেতে গেলে ভরসা জম্মু তাওয়াই স্টেশন। শ্রীনগর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্টেশন দেশের বাকি অংশের সঙ্গে রেলপথে কাশ্মীরের যোগাযোগ স্থাপন করেছে। অঞ্জী খাদ সেতু চালু হলে কাশ্মীরের আরও গভীরে রেল যোগাযোগের রাস্তা খুলে যাবে।
অঞ্জী খাদ সেতুর গঠনগত নির্মাণপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ছোটখাটো কিছু কাজ এখনও বাকি। শীঘ্রই তা শেষ হবে। তার পর রেলের সবুজ সঙ্কেত মিললেই ট্রেন ছুটবে ওই সেতুর উপর দিয়ে।
ভারতীয় রেলের উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা লাইনে অঞ্জী খাদ সেতু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার দিয়ে তৈরি সেতু দেশে অনেক আছে। তবে তার নির্মিত রেলসেতু তৈরি করা হল এই প্রথম।
অঞ্জী খাদ সেতুর একেবারে মাঝখান থেকে উঠেছে একটি মোটা পিলার। তাকে কেন্দ্র করে চারপাশে অজস্র তার বেরিয়েছে। এই সেতু দেখতে অনেকটা কলকাতায় দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মতো। তার নীচে রয়েছে গভীর পাহাড়ি খাদ।
ভূমি থেকে ৩৩১ মিটার উচ্চতায় অঞ্জী খাদ সেতু তৈরি করা হয়েছে। এর মাঝের থামের দৈর্ঘ্য ১৯৩ মিটার। সেতুটিতে এখনও রেললাইনের পাত বসানোর কাজ শুরু হয়নি। চলতি বছরের মধ্যেই রেললাইন বসে যাবে সেতুর উপর।
অঞ্জী খাদ সেতুর বিশেষত্ব হল এর বহন এবং সহন ক্ষমতা। নির্মাতাদের দাবি, বিস্ফোরণ কিংবা ঝড়ের তাণ্ডবেও এই সেতুর কোনও ক্ষতি হবে না। সে ভাবেই মজবুত এই সেতু তৈরি করা হয়েছে।
ঘণ্টায় ২১৩ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও সহ্য করতে পারবে অঞ্জী খাদ সেতু। এ ছাড়া, যে কোনও বিস্ফোরণ প্রতিরোধের ক্ষমতাও রয়েছে তার।
অঞ্জী খাদ সেতুর নীচ দিয়ে বইছে অঞ্জী নদী। চন্দ্রভাগা নদীর একটি উপনদী এই অঞ্জী। কাশ্মীরের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে খরস্রোতা নদীর উপর তৈরি এই রেলসেতুর প্রাকৃতিক শোভাও অপরূপ।
পাহাড়ের কোলে ৭২৫ মিটার দীর্ঘ অঞ্জী খাদ সেতু। এই সেতু তৈরি করতে মোট ৯৬টি তার ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
অঞ্জী খাদ সেতুতে লাগানো আছে বিশেষ সেন্সর। কখনও কোনও কারণে সেতুর কোনও ক্ষতি হলে বা তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে ওই সেন্সরে সহজেই তা ধরা পড়বে। ফলে রেল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
কাশ্মীরের এই তার নির্মিত সেতুর উপর দিয়ে ট্রেনের গতি কেমন হবে? তারের কারণে ট্রেন কি ধীরে ধীরে চলবে? তা কিন্তু নয়। এই সেতুতে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
এই সেতুর উপর ট্রেনের জানলা দিয়ে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন যাত্রীরা। নদী, পাহাড়ের যুগলবন্দিতে কু ঝিকঝিকের শোভা আলাদা মাত্রা যোগ করবে, তেমনটাই মনে করছেন নির্মাতারা।