আবারও সংবাদ শিরোনামে ভেসে উঠলেন নিকেশ অরোরা। সম্প্রতি ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। আমেরিকার সর্বোচ্চ বেতনভোগী সিইও-দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন নিকেশ। তাঁর বার্ষিক বেতন ১৫ কোটি ১৪ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় এক হাজার ২৬০ কোটি টাকারও বেশি।
অনেক মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরি ছেড়ে নিকেশ এখন আমেরিকার সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা পালো অল্টো নেটওয়ার্কের সিইও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। চাকরি সূত্রে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি আমেরিকাতেই থাকেন। সেখানেই চাকরি করেন।
আমেরিকাতে থাকলেও নিকেশের জন্ম ভারতে। ১৯৬৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেখানেই স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করেন পালো অল্টো নেটওয়ার্কের সিইও।
তার পর শুরু হয় নিকেশের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, বারাণসী থেকে ১৯৮৯ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক হন।
তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রোতেই তাঁর কর্মজীবনে হাতেখড়ি। তবে বেশি দিন সেখানে কাজ করেননি নিকেশ। চাকরি ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন বিদেশে।
উইপ্রোর চাকরি ছেড়ে সোজা আমেরিকায় চলে যান নিকেশ। বস্টনের নর্থ-ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন তিনি। তার পর আবার শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। ১৯৯২ সালে ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্ট নামে বিনিয়োগকারী সংস্থায় যোগ দেন নিকেশ।
আট বছর এই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্টও হন নিকেশ। তবে ২০০০ সালে টি মোশন নামে একটি কোম্পানি তৈরি করেন তিনি। এই সংস্থাটি ডয়েচে টেলিকমের একটি সহযোগী সংস্থা হিসাবে তৈরি হয়। পরে টি-মোবাইলের মূল পরিষেবার অংশ হয়ে ওঠে।
সেখানে কাজ করতে করতেই গুগ্ল থেকে চাকরির অফার পান নিকেশ। ২০০৪ সালে গুগ্লে যোগ দেন। ইউরোপের অপারেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার প্রেসিডেন্টও হন তিনি। গুগ্লের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চিফ বিজ়নেস অফিসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও সামলেছেন নিকেশ।
প্রায় ১০ বছর গুগ্লে চাকরি করার পর জাপানি তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক সংস্থা সফ্টব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হন নিকেশ। সফ্টব্যাঙ্ক কর্পোরেশেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরে সফটব্যাঙ্ক ইন্টারনেট অ্যান্ড মিডিয়া কোম্পানির সিইও হন।
পরে সফ্টব্যাঙ্কের সিইও হন নিকেশ। এক হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বেতন পেতেন। কিন্তু আচমকাই ২০১৬ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন নিকেশ। কেন তিনি চাকরি ছেড়েছিলেন তা এখনও অজানা। দু’বছর পর নিকেশ যোগ দেন পালো অল্টো নেটওয়ার্কে।
সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ প্রকাশিত বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, অরোরার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।
২০১৫ সালে ‘ইটি কর্পোরেট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’-পান নিকেশ। তাঁর হাতে ওঠে ‘গ্লোবাল ইন্ডিয়ান’ পুরস্কার।
আমেরিকার সর্বোচ্চ বেতনভোগী সিইও-দের ৫০০ জনের তালিকায় ১৭ জনই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। নিকেশ ছাড়া প্রথম দশে আর কেউ নেই। তবে ১১ নম্বরে আছেন অ্যডোবির সিইও শান্তনু নারায়ণ। তাঁর বেতন ৩৭৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও এই তালিকায় আছেন মাইক্রোন টেকনোলজির সিইও সঞ্জয় মলহোত্র, অ্যানেসিসের সিইও অজেই গোপাল, আইবিএমের সিইও অরবিন্দ কৃষ্ণ-সহ আরও অনেকে।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এরিক গার্সেটি এক অনুষ্ঠানে এসে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় না হলে আমেরিকান কোম্পানির সিইও হওয়া যায় না! সেই কথা বলতে তিনি গুগ্ল, স্টারবাকস, মাইক্রোসফ্টের উদাহরণ টেনে এনেছিলেন।
এরিক আরও বলেছিলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে বলা চলে আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানির ১০ জন সিইও-র মধ্যে এক জন ভারতীয়। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি শুরু করেন। তার পর নিজের যোগ্যতায় সাফল্য পেয়েছেন।’’ নিকেশও একই পথের পথিক।