আগামী এক দশকের মধ্যেই চাঁদের মাটিতে গড়া হবে গবেষণাকেন্দ্র। তারই আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখতে চায় রাশিয়া ও চিন। আর এই বিশাল কর্মকাণ্ডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চিনের সঙ্গে হাত মেলাতে প্রস্তুত ভারত। চাঁদের বুকে যৌথ ঘাঁটি গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই হাত মিলিয়েছে দুই বন্ধু দেশ, চিন এবং রাশিয়া।
চাঁদে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা মাথায় রেখে রাশিয়া ও চিন ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদের বুকে পারমাণবিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করেছে। আর এই অভিযানে রাশিয়ার সঙ্গে দুই যুযুধান ভারত-চিন হাত মিলিয়েছে বলে খবর।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘তাস’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’ এবং চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘সিএনএসএ’ যৌথ উদ্যোগে চাঁদের বুকে ঘাঁটি গড়ে তুলতে আগ্রহী। এই অভিযানে রাশিয়া-চিনের সঙ্গে থাকবে ভারতও।
২০৪০ সালের মধ্যেই পৃথিবী থেকে মহাকাশচারীদের পাঠিয়ে চাঁদে গবেষণা ও অন্বেষণ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা সেরে রাখতে চায় রাশিয়া। চাঁদের বুকে একটি গবেষণাকেন্দ্র চালানোর জন্য সবার আগে দরকার পড়বে বিদ্যুৎ সরবরাহের।
চাঁদের বুকে নিজস্ব ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারমাণবিক চুল্লির বিকল্প নেই। কারণ পৃথিবীর হিসাবে চাঁদে দিন থাকে টানা ১৪ দিন, আর টানা ১৪ দিন থাকে রাত।
তাই সৌরপ্যানেল বসিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া সম্ভব নয়। বিকল্প ভাবনাচিন্তা করে পারমাণবিক চুল্লি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
‘তাস’ জানিয়েছে, রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন সংস্থা রোসাটমের নেতৃত্বেই এই প্রকল্পের অন্য তিন দেশের সহযোগিতায় গড়ে তোলা হবে একটি পারমাণবিক কেন্দ্র।
এই কেন্দ্রটিতে ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে সংস্থার প্রধান অ্যালেক্সেই লিখাচেভ জানিয়েছেন।
চাঁদের বুকে পারমাণবিক চুল্লি গড়ে তোলা মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে রাশিয়া জানিয়েছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ওই কার্য সম্পাদন করা হবে। নির্মাণকার্যে মানুষের প্রয়োজন পড়বে না।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও এর আগে জানিয়েছিল, কয়েক বছরের মধ্যে তারা চাঁদে পরমাণু বিদ্যুৎ তৈরির ব্যবস্থা করবে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, নাসা ইতিমধ্যেই চাঁদে তাদের ২০২৫ সালের আর্টেমিস-২ মিশনের জন্য প্রস্তুত। তারাও ৪১ কোটি টাকা খরচ করে সম্ভাব্য পারমাণবিক কেন্দ্র কোথায় তৈরি করা সম্ভব তার গবেষণার বরাত দিয়েছে কয়েকটি সংস্থাকে।
২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে আর্টেমিস-৩ মিশন পাঠানো হলে নভোচারীরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে। এর পরে ২০২৮ সালে আর্টেমিস ৪-কে চাঁদে পাঠানো হবে বলে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে।
২০২১ সালে চিন এবং রাশিয়া একটি চুক্তি করে। সেখানে ঠিক হয়, দুই দেশ পরস্পরকে তাদের মহাকাশ গবেষণায় সাহায্য করবে। শুধু নিজেদের ব্যবহারের জন্য নয়, বিশ্বের অন্য আগ্রহী এবং সহযোগী দেশও চাইলে ওই ঘাঁটি থেকে চাঁদের বুকে গবেষণা চালাতে পারে বলেও জানানো হয় সেই সময়।
তবে নাসা রাশিয়ার এই আহ্বানে সাড়া দেবে না তা সর্বজনবিদিত। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। তার জেরে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে রাশিয়া ও আমেরিকার।
২০২৫ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনও ছাড়তে চলেছে রাশিয়া। তাই চাঁদের বুকে চিন-রাশিয়ার গবেষণাকেন্দ্রে নাসার মহাকাশচারীদের প্রবেশের অধিকার থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকা, চিন, রাশিয়া ছাড়াও ভারত সফল ভাবে চাঁদের বুকে নিজেদের মহাকাশযান অবতরণ করাতে পেরেছিল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে ইতিহাস তৈরি করে ইসরোর চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম।
আমেরিকা বা রাশিয়া চাঁদের অভিযানে যে অর্থ খরচ করে তার তুলনায় অনেক কম খরচ করে চন্দ্রাভিযান করেছে ভারত। চন্দ্রযান-৩-এর বাজেট ছিল মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা।
চাঁদের দুর্গম দক্ষিণ মেরুতে গত বছরের অগস্ট মাসে নেমেছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছে ভারত।
এর পর অবশ্য চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছে জাপানও। দৌড়ে তারা পঞ্চম।
তবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর পক্ষ থেকে চিন-রাশিয়ার সঙ্গে চাঁদে পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।