ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে মরিশাস। ভারত থেকে প্রতি বছর বহু পর্যটক এই দ্বীপে ঘুরতে যান। বিদেশি পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে মরিশাসের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। সবজে নীল সমুদ্রের মাঝে প্রায়ই ছুটি কাটাতে দেখা যায় বলিউড তারকাদের।
মাদাগাস্কার থেকে ১,১০০ কিলোমিটার দূরত্বে এই মরিশাস পূর্ব আফ্রিকার একটি স্বতন্ত্র দ্বীপরাষ্ট্র। এর মধ্যে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে। তেমনই এক দ্বীপের নাম উত্তর অ্যাগালেগা।
মরিশাসের উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপের সঙ্গে সম্প্রতি জড়িয়ে গিয়েছে ভারতের নাম। আলজাজিরার একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই দ্বীপে নাকি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে নয়াদিল্লি।
মরিশাসের মূল দ্বীপের থেকে অ্যাগালেগার দূরত্ব হাজার কিলোমিটার। নিতান্তই ছোট এই দ্বীপ। ২৫ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিতে মেরেকেটে ৩৩০ জন নাগরিকের বাস। পূর্ব আফ্রিকার অখ্যাত এই দ্বীপ আলজাজিরার রিপোর্টের পর রাতারাতি চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
মাস তিনেক আগে আলজাজিরার ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দাবি করা হয়, উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপে ভারতীয় কর্মীরা সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ করছেন। নৌ সামরিক পরিষেবা তৈরি করা হচ্ছে সেখানে।
আলজাজিরার দাবি, তারা বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধানের পর এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে তারা নিশ্চিত বলেও দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ভারত বা মরিশাস সরকারের তরফে এমন তথ্য স্বীকার করা হয়নি।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ভারত মহাসাগরের উপর এই ছোট্ট দ্বীপটিতে ভারতীয় কর্মীরা বেশ কিছু নির্মাণকার্যে হাত লাগিয়েছেন। পরিকাঠামোগত গঠনপ্রক্রিয়া চলছে। নজরদারির কাজে সেই পরিকাঠামো ব্যবহৃত হতে পারে।
মরিশাসে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের কথা স্বীকার করেনি ভারত। তবে উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপে তাদের নজরদারি মূলক পরিকাঠামো নির্মাণের কথা নয়াদিল্লি মেনে নিয়েছে।
ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতির অন্তর্গত এই নির্মাণ, দাবি নয়াদিল্লির। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নৌ সম্পর্কের উন্নয়নে তা কাজে লাগবে।
অন্য দিকে, মরিশাস সরকার জানিয়েছে, এই নিরাপত্তা পরিকাঠামো ব্যবহার করবেন মরিশাসের নৌ বাহিনীর সদস্যেরা। তা সমুদ্রে নজরদারিতে কাজে লাগবে। এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ দু’পক্ষই।
আলজাজিরা জানিয়েছে, উত্তর অ্যাগালেগা দ্বীপে ভারত সরকার যে নির্মাণকার্য চালাচ্ছে, তার জন্য ২৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় দু’হাজার কোটি টাকার বেশি) খরচ করা হচ্ছে। ওই টাকা শুধু নজরদারির কাজে ব্যয় হবে না বলেই দাবি সংবাদমাধ্যমটির।
আলজাজিরার দাবি, মরিশাসের দ্বীপে তিন হাজার কিলোমিটারের একটি রাস্তা বানিয়েছে ভারত। বিমানের সরঞ্জাম, ডুবোযান পরিষেবার নানা সামগ্রী সেখানে দেখা গিয়েছে। সেনাছাউনি তৈরির তোড়জোড়ও চলছে।
বোয়িং পি-৮ নামের সামুদ্রিক নজরদারি বিমানটি অ্যাগালেগা দ্বীপে ভারতের সামরিক ঘাঁটি তৈরির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ওই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে দ্বীপটিকে ব্যবহার করা হতে পারে।
ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারতের সামরিক শক্তির অন্যতম পরিচায়ক এই বোয়িং পি-৮। বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নত নজরদারির জন্য এর আগে ভারত সরকারের তরফে আন্দামানেও সামরিক পরিষেবা নির্মাণ করা হয়েছিল।
ভারত মহাসাগর দীর্ঘ দিন ধরেই বিশ্বশক্তির নজরের কেন্দ্রে। চিন থেকে শুরু করে আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান— একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র এই এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট।
ভারতের গা ঘেঁষা মহাসাগরে ভারতও ব্রাত্য নয়। এই সমুদ্র এলাকায় তাই নয়াদিল্লির পদক্ষেপ, কার্যকলাপের দিকে গোটা বিশ্ব নজর রেখেছে। আলজাজিরার এই রিপোর্ট এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও পক্ষ স্বীকার করেনি।
তবে ভারত যদি সত্যিই মরিশাসের দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে, তবে তা পূর্ব আফ্রিকার সমুদ্রকেন্দ্রিক ভূ-রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। আমেরিকা বা চিনের মতো দেশগুলি নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপকে কী ভাবে গ্রহণ করে, সেটাও দেখার।