K V Vijayprasad

নিজস্ব নয়, ‘আরআরআর’, ‘বাহুবলী’র গল্প চুরি করা! স্বীকারোক্তি খোদ লেখকের

দক্ষিণের এই চিত্রনাট্যকার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি গল্প চুরি করেন! তাঁর অধিকাংশ গল্পই নাকি চুরি করা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২ ১০:০৮
Share:
০১ ২৪

সিনেমার গল্পদের যদি কোনও দুনিয়া থাকত আর সেই দুনিয়ার যদি কোনও ‘সুপারম্যান’ থাকতেন, তবে তিনি নিঃসন্দেহে হতেন দক্ষিণী চিত্রনাট্যকার কে ভি বিজয়প্রসাদ— অন্তত তাঁর অনুরাগীরা তাই মনে করেন।

০২ ২৪

সে সব দাবি বলছে, বিজয়প্রসাদের গল্পের উপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। কারণ তাঁর গল্পনির্ভর সিনেমা মানেই নাকি বক্স অফিসে সাফল্য। এ সাফল্য আটকাতে পারবে না কেউ।

Advertisement
০৩ ২৪

এই দাবির স্বপক্ষে প্রমাণও আছে। নিশ্চিত সাফল্যের আশ্বাসও আছে। তবে তার পাশাপাশি বিজয়প্রসাদের লেখা চিত্রনাট্যে রয়েছে, বোনাস পাওয়ার প্রলোভনও। কেন না তাঁর কাহিনিনির্ভর বেশ কিছু ছবিতে বক্স অফিসের সাফল্য প্রত্যাশার বেড়া টপকে একরকম এভারেস্টেই চড়েছে। ‘বাহুবলী’ ফিল্ম সিরিজ় কিংবা দক্ষিণী ছবি ‘আরআরআর’ তার জ্বলজ্বলে উদাহরণ।

০৪ ২৪

দু’টি ছবিই তৈরি হয়েছিল বিজয়প্রসাদের লেখা গল্প নিয়ে। যদিও উদাহরণ মাত্র দু’টিতে থেমে নেই। চোখের সামনেই তাঁর গল্প নির্ভর আরও অনেক ছবি রয়েছে, যার বক্স অফিস সংগ্রহ তারিফযোগ্য। তামিল ছবি ‘মগধীরা’, ‘আরআরআর’, ‘বাহুবলী’, ‘থালাইভি’র সঙ্গে বলিউডের ‘বজরঙ্গী ভাইজান’, ‘রাউডি রাঠেৌর’, ‘মনিকর্ণিকা’র মতো ছবিকেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিয়েছে বিজয়প্রসাদের গল্প। কিন্তু স্বয়ং লেখক জানাচ্ছেন, গল্প নাকি তিনি লেখেনই না!

০৫ ২৪

দক্ষিণের এই চিত্রনাট্যকার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি গল্প চুরি করেন! তাঁর অধিকাংশ গল্পই নাকি চুরি করা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এমন সফল কাহিনি লেখার গোপন কথা। জবাবে বিজয়প্রসাদ বলেছেন, ‘‘গল্প লিখে সময় নষ্ট করতে যাব কেন? আমি দরকার হলেই সিনেমার গল্প চুরি করে নিই। এটাই আমার সাফল্যের গোপন কথা।’’

০৬ ২৪

সিনেমার দুনিয়ায় গল্প চুরি নতুন কথা নয়। না বলে গল্পের অনুকরণ করলে ‘চুরি’। কিন্তু বহু সিনেমানির্মাতা বলেকয়েও গল্প নেন। তখন আর বিষয়টিকে ‘চুরি’ বলা যায় না। বিজয়প্রসাদ অবশ্য বলেছেন, তিনি গল্প চুরিই করেন।

০৭ ২৪

কিন্তু এমন সপাট চুরির কথা নিজমুখে স্বীকার করে নেওয়া মানুষটি কে জানেন? ইনি দক্ষিণের ফিল্ম পরিচালক এস এস রাজমৌলির বাবা। পুরো নাম কদুরি বিশ্ব বিজয়েন্দ্র প্রসাদ। যিনি প্রথম জীবনে ধান চাষের ব্যবসায় নেমে পরে আরও বহু ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে শেষে ফিল্মের কাহিনিকার হিসাবে থিতু হন এবং পরিসংখ্যান বলছে, সফলও হন।

০৮ ২৪

তামিল ছবির চিত্রনাট্যকার হলেও বিজয়প্রসাদের জন্ম অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রির কোভুরে। তবে ভূমিচ্যুত হয়েছিলেন রেল তাঁর বাড়ির জমির দখল নেওয়ায়। অন্ধ্র ছেড়ে সপরিবারে কর্নাটকে চলে আসেন। রায়চূড় জেলায় সাত একর ধানজমি কিনে চাষবাস শুরু করেন।

০৯ ২৪

দাদা শিবশক্তি দত্ত ছিলেন সঙ্গীতকার, চিত্রনাট্যকার আবার চিত্রশিল্পীও। দাদার জন্যই আবার তৎকালীন মাদ্রাজে চলে আসেন বিজয়প্রসাদ। দাদাকে দেখে শুরু করেন ফিল্ম জগতের কাজও। বিভিন্ন পরিচালকের সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।

১০ ২৪

তবে প্রথম ছবির কাজই অর্থনৈতিক কারণে বন্ধ করে দিতে হয়। বিজয়প্রসাদ এর পর তাঁর দাদারই সহকারী হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তবে বিজয়প্রসাদের জীবন বদলে যায় দক্ষিণী ছবির পরিচালক-প্রযোজক কে রাঘবেন্দ্র রাওয়ের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর।

১১ ২৪

দাদার মাধ্যমেই আলাপ। রাঘবেন্দ্র প্রথম ছবির চিত্রনাট্য লেখার কাজ দেন বিজয়প্রসাদ এবং তাঁর দাদাকে। তাঁদের গল্পের উপর তৈরি ছবি ‘জানকী রামুদু’ আশির দশকে শেষ দিকে বক্স অফিসে সাড়া ফেলে।

১২ ২৪

বিজয়প্রসাদের গল্প নিয়ে এর পরের ছবি ছিল ‘বঙ্গারু কুটুম্বম’। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবি বাণিজ্যিক সাফল্য তো পেয়েছিলই। পাশাপাশি সেরা ছবির পুরস্কারও জুটেছিল। তবে লেখক হিসাবে তখনও বিজয়ের নাম জানেনি কেউ। সেই সুযোগ আসে তাঁর পরের ছবিতে।

১৩ ২৪

ওই বছরেই মুক্তি পায় ‘বব্বিলি সিংহম’। সেই ছবিও বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। একই সঙ্গে চিত্রনাট্যকার হিসাবে চিনিয়েছিল বিজয়প্রসাদকে। তবে তাঁকে কাঙ্ক্ষিত জনপ্রিয়তা এনে দেয় ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সমরসিংহ রেড্ডি’ ছবিটি। যেটি সেই সময়ের তামিল সিনেমার সবচেয়ে বড় হিট ছবি ছিল।

১৪ ২৪

৬ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি ছবি একটি হলে টানা এক বছর, তিনটি হলে ২২৭ দিন, ২৯টি হলে ১৭৫ দিন এবং ১০৪টি হলে ১০০ দিন চলেছিল। বিজয়প্রসাদকে এই একটি ছবিই সিনেমার গল্পকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।

১৫ ২৪

সম্প্রতি সেই বিজয়প্রসাদই এক সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেছেন তাঁর গল্প চুরির কথা।

১৬ ২৪

তাঁর গল্পনির্ভর শেষ ছবি ‘আরআরআর’ বক্স অফিসে ব্যবসা করেছিল ১২০০ কোটি টাকার। যদিও ছবিটি তৈরি হয়েছিল ৫৫০ কোটি টাকার বাজেটে। বিজয়প্রসাদ সেই আরআরআর-এরই সিক্যুয়েলের গল্প লেখার ঘোষণা করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন।

১৭ ২৪

সেখানে লেখক বলেন তিনি ছবিটির দ্বিতীয় পর্বের গল্প লেখার সূত্র পেয়ে গিয়েছেন। এ বার আরও একটি জমজমাট গল্প শুধু সময়ের অপেক্ষা।

১৮ ২৪

এর আগে বিজয়প্রসাদের লেখা বাহুবলীর সিক্যুয়েল প্রথমটির থেকেও বেশি ব্যবসা করেছিল। আরআরআর-এর ক্ষেত্রেও কি তাই হতে চলেছে? প্রশ্ন ছিল গল্পকারের কাছে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, প্রতি বারই কোন ফর্মুলায় এমন জমজমাট গল্প বুনে ফেলেন তিনি? জবাবে প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, গল্প তোমাদের চারপাশেই ঘোরাফেরা করে। কখনও বাস্তবজীবনে তো কখনও ছোট খাট ঘটনার মধ্যে, তা ছাড়া রামায়ণ, মহাভারতের মতো মহাকাব্য তো রয়েছেই, আমি এই সব জায়গা থেকেই গল্প চুরি করে নিই।

১৯ ২৪

তাঁর গল্প লেখার গোপন ফর্মুলার কিছুটা প্রকাশ করে বিজয়প্রকাশ বলেন, ‘‘আমি দর্শকের মনে গল্পের খিদে তৈরিতে বিশ্বাসী। গল্পের চিত্রনাট্য এবং চরিত্র দিয়ে কী ভাবে সেই খিদে জাগবে, সে কথাই আমার মাথায় থাকে গল্প লেখার সময়। আর সেই চ্যালেঞ্জটাই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় ভাল গল্প লেখার।’’

২০ ২৪

টান টান গল্প লেখার আরও একটি কৌশল জানিয়েছেন বিজয়প্রসাদ। সফল চিত্রনাট্যকারের পরামর্শ, ‘‘সাজিয়ে-গুছিয়ে মিথ্যে বলতে হবে। আর সেই মিথ্যেকেই এমন ভাবে পরিবেশন করতে হবে, যাতে সত্যি মনে হয়। যিনি যত ভাল মিথ্যে বলতে পারবেন, তিনি তত বড় গল্পকার।’’

২১ ২৪

এগুলোই কি তবে তাঁর এমন বক্স অফিসে সফল গল্প লেখার গোপন কথা? নাহ, বিজয় বলেছেন, ‘‘এ সব ছাড়াও আছে। প্রথমত আমি গল্প লিখি না, গল্পের উপর হিটলারের মতো একনায়কত্ব চালাই। আর দ্বিতীয়ত, আমি নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। মনে করি, এটা করতে পারলে যে কেউ অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারবে।’’

২২ ২৪

বিজয়প্রসাদ এখন দেশের রাজ্যসভার সাংসদ। তাই এক সাংবাদিক আচমকাই তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, মিথ্যে বলা, গল্প চুরি, গল্পের উপর হিটলারি— তাঁর গল্প লেখার সঙ্গে কি কোনও ভাল জিনিসের সম্পর্ক নেই?

২৩ ২৪

গল্পকারের জবাব, ‘‘আছে তো। মহাত্মা গান্ধী আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা...।’’ শুনে সাংবাদিক ধাতস্থ হওয়ার আগেই অবশ্য জবাব বদলেও নিলেন তিনি।

২৪ ২৪

পকেট থেকে একটি ৫০০ টাকার নোট বের করে বললেন, , ‘‘এই গান্ধীই আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেন ভাল গল্প লেখার জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement