গ্রুপ লিগে পর পর নয় ম্যাচের গণ্ডি পেরিয়ে সেমিফাইনাল। ‘লেটার মার্কস’ নিয়ে তাতেও উত্তীর্ণ হয়েছে ভারত। ফাইনালের আগে রোহিত শর্মাদের স্কোরবোর্ড বলছে, ১০-এ ১০। কোথাও কোনও খামতি নেই। ভারতকে পরাজিত করতে পারেনি কোনও দল।
অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, নিউ জ়িল্যান্ড থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডস, চলতি বিশ্বকাপে ভারতের সামনে কোনও দলই ঝাঁঝালো হতে পারেনি। প্রায় সব ক’টি ম্যাচে একপেশে জয় এসেছে।
বিশ্বকাপ ঘরে আনতে আর একটি ধাপ বাকি ভারতের। একটি ম্যাচের ও পারেই রয়েছে বিশ্বজয়ের হাতছানি। আগামী রবিবার আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবেন রোহিতেরা।
একটি ম্যাচেও না হেরে ফাইনাল খেলবে ভারত। এমন নজির বিরল। রবিবারের ফাইনালে বিরাট কোহলি, মহম্মদ শামিদের ম্যাজিকের দিকে তাই তাকিয়ে গোটা দেশ, গোটা বিশ্ব।
বিশ্বকাপের গত ১০টি ম্যাচে নিঃসন্দেহে যোগ্য দল হিসাবে জিতেছে ভারত। কিন্তু কেমন খেলেছে রোহিতের দল? দশের মাপকাঠিতে ভারতের কোন ম্যাচ পেতে পারে সেরার শিরোপা? পর পর ম্যাচগুলিতে ভারতের খেলার মানের নিরিখে নম্বর দিল আনন্দবাজার অনলাইন।
বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ছয় উইকেটে সেই ম্যাচ জেতে ভারত। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মাত্র ১৯৯ রানে অল আউট হয়ে যান প্যাট কামিন্সেরা।
২০০ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুল। তাঁরা যথাক্রমে ৮৫ এবং ৯৭ রান করেন। রাহুল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। ৫২ বল বাকি থাকতেই প্রয়োজনীয় রান তুলে দিয়েছিল ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই ম্যাচে অধিনায়ক তথা ওপেনার রোহিত এবং অপর ওপেনার ইশান কিশান রান করতে পারেননি। শূন্য রানে আউট হয়ে দলকে শুরুতে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তাঁরা। পরে শ্রেয়স আইয়ারও শূন্যতে ফেরেন। কোহলি, রাহুলের ব্যাট থেকে রান না এলে বিপদ হতে পারত। এই ম্যাচে রোহিতের ভারতকে আনন্দবাজার অনলাইন দিচ্ছে ১০-এ ৭।
বিশ্বকাপে ভারতের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। ৮ উইকেটে এই ম্যাচ জেতেন রোহিতরা। ব্যাট হাতে ভেলকি দেখান অধিনায়ক স্বয়ং। ৮৪ বলে ১৩১ রানের বিশাল ইনিংস খেলেন রোহিত।
এই ম্যাচেও টসে জিতেছিল আফগানিস্তান। তারা প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সামনে ২৭৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা রাখে। বুমরা, সিরাজ, কুলদীপদের সামনে দুই আফগান ব্যাটার অর্ধশতরান করেন। হাসমাতুল্লা শাহিদি ৮০ এবং আজ়মাতুল্লা ওমরজ়াই ৬২ রান করেন।
রোহিতের শতরানের পর এই রান তোলা কঠিন ছিল না। ইশান ৪৭ এবং বিরাট ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। ৯০ বল বাকি থাকতেই প্রয়োজনীয় রান তুলে ফেলে ভারত। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে এই ম্যাচে ভারত পাচ্ছে ৮।
তৃতীয় ম্যাচে রোহিতদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। বিশ্বকাপের সবচেয়ে চর্চিত, সবচেয়ে প্রতীক্ষিত এই ম্যাচে ৭ উইকেটে জয়ী হয় ভারত। তারা টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান করে ১৯১ রান।
২০ ওভার খেলা বাকি থাকতেই এই রান তুলে নেয় ভারত। রোহিত ৮৬ এবং শ্রেয়স ৫৩ রান করেন। শার্দূল ঠাকুর ছাড়া প্রত্যেক ভারতীয় বোলারই পান ২টি করে উইকেট। পাকিস্তান ম্যাচে ভারতকে আনন্দবাজার অনলাইন দিচ্ছে ৮।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচটিও ছিল প্রায় একপেশে। টসে জিতে শাকিব আল হাসানরা ২৫৭ রানের টার্গেট দেন ভারতকে। সহজেই সেই রান তুলে দেয় রোহিত বাহিনী। বিরাটের ব্যাট থেকে আসে বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম শতরান। ১০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের বোলারদের পরিসংখ্যান মোটের উপর ভাল। এই ম্যাচেই হার্দিক পাণ্ড্য চোট পান। মাত্র তিনটি বল তিনি করতে পেরেছিলেন। চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যান হার্দিক। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে এই ম্যাচে ভারত পাচ্ছে ৯।
এর পরের ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল নিউ জ়িল্যান্ড। কিউয়িরা প্রথমে ব্যাট করে ২৭৩ রান তুলেছিল। ভারতের বিরুদ্ধে এই রান যথেষ্ট ছিল না। তবে অন্য ম্যাচগুলির তুলনায় এতে শেষের দিকে চাপ কিছুটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। ১২ বল বাকি থাকতে চার উইকেটে ম্যাচ জেতেন রোহিতেরা।
নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচেই বিশ্বকাপে প্রথম কেউ ভারতের বিরুদ্ধে শতরান করেন। ১২৭ বলে ১৩০ রান করেন ড্যারিল মিচেল। ভারতের কেউ শতরান পাননি। কোহলি ৯৫ রানে আউট হয়ে যান। বাকিরা কেউ অর্ধশতরানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে এই ম্যাচে ভারত পাচ্ছে ৬।
এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম থেকেই মিইয়ে গিয়েছিল গত বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। পয়েন্ট তালিকায় তারা এক বারের জন্যেও মাথা তুলতে পারেনি। ভারতের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের ম্যাচ একপেশে ছিল।
১০০ রানে ইংল্যান্ডকে হারায় ভারত। টসে জিতে রোহিতদের প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় ইংল্যান্ড। খুব বেশি রান তাঁরা করতে পারেননি। ৫০ ওভারে ২২৯ রান করে ভারত। কোহলি শূন্য রানে ফেরেন।
ইংল্যান্ড ম্যাচে উল্লেখযোগ্য ছিল রোহিতের ১০১ বলে ৮৭ রানের ইনিংস। সূর্যকুমার যাদব ৪৯ রানে ফেরেন। এই ম্যাচ থেকেই বিশ্বকাপে যেন স্বপ্নের উত্থান হয় মহম্মদ শামির। ৪টি উইকেট পান তিনি। তাঁর এবং বুমরার হাতযশেই মাত্র ৩৫ ওভারে ইংল্যান্ডের সব ক’টি উইকেট পড়ে যায়। এই ম্যাচে ভারত পাচ্ছে ৭।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচ ছিল চূড়ান্ত একপেশে। ব্যাটে বলে দুরন্ত খেলা দেখিয়ে লঙ্কানদের দুরমুশ করে রোহিত বাহিনী। ভারতের ৩৫৭ রানের জবাবে মাত্র ৫৫ রানে শ্রীলঙ্কা অল আউট হয়ে যায়। ৫টি উইকেট ছিল শামির। এই ম্যাচে ভারতের প্রাপ্য ১০-এ ১০।
এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম থেকেই ভাল খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিপক্ষকে একের পর এক ম্যাচে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে তারা সেমিফাইনালে ওঠে। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটিও একপেশে হয়ে গিয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ৩২৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল ভারত। জবাবে প্রোটিয়ারা ১০০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি। মাত্র ৮৩ রান করে অল আউট হয়ে যায়। ভারতের হয়ে শতরান করেন বিরাট। ৫ উইকেট নেন রবীন্দ্র জাডেজা। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে এই ম্যাচেও ভারত পাচ্ছে ১০।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ভারত ৪১০ রান তোলে। জবাবে আড়াইশো রানের মধ্যে গুটিয়ে যায় বিপক্ষের ইনিংস। এই ম্যাচে শ্রেয়স এবং রাহুল দু’জনেই শতরান করেন। অর্ধশতরান করেন রোহিত, বিরাট এবং শুভমন। এই ম্যাচেও ভারতের নম্বর কাটা যাচ্ছে না। তাদের প্রাপ্য ১০।
সেমিফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে ভারত চাপের মুখে পড়েছিল। ৩৯৭ রান করেও জয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল এক সময়ে। বিরাট এবং শ্রেয়স শতরান করেন। শুভমন করেন ৮০ রান। তবে রান তাড়া করতে নেমে কিউয়িরা সহজে হার মানেনি।
ভারতের বিরুদ্ধে আবার শতরান করেন মিচেল। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে তাঁর জুটি ভারতকে কাঁদাতে পারত। ঠিক সময়ে উইকেট নিয়ে দলকে ম্যাচে ফেরান শামি। ৭টি উইকেট নেন তিনি। এই ম্যাচে ভারতকে দেওয়া হল ১০-এর মধ্যে ৬।