দুই দশক ধরে অভিনয়জগতে রয়েছেন। কেরিয়ারের ঝুলিতে ভরেছেন অস্কারের মতো নজরকাড়া পুরস্কার। ছোট থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণের পথেই অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন হলি অভিনেত্রী অ্যানি হ্যাথওয়ে।
১৯৮২ সালের ১২ নভেম্বর আমেরিকার ব্রুকলিনে জন্ম অ্যানির। ছ’বছর বয়সে বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে নিউ জার্সির মিলবার্নে চলে যান তিনি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের শখ ছিল অ্যানির।
অ্যানির মা পেশায় অভিনেত্রী ছিলেন। ছোটবেলায় মাকে মঞ্চে পারফর্ম করতে দেখে অ্যানিরও ইচ্ছা জেগেছিল অভিনয় করার। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন মনে মনে বুনতে শুরু করেন তিনি। তিন সন্তানকে সামলাবেন বলে অভিনয় থেকে সরে যান অ্যানির মা।
অভিনেত্রী হতে চান, সে কথা বাড়িতে জানালে গোড়ার দিকে আপত্তি জানান অ্যানির বাবা-মা। স্কুল এবং কলেজে পড়াশোনার সময় থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেন অ্যানি। ১৯৯৯ সালে সম্প্রচারিত ‘গেট রিয়্যাল’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান অ্যানি।
২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য প্রিন্সেস ডায়েরিজ়’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় অ্যানিকে। এই ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অ্যানি।
‘এলা এনচ্যান্টেড’, ‘দ্য ডেভিল ওয়েয়ার্স প্রাডা’, ‘গেট স্মার্ট’, ‘ব্রাইড ওয়ার্স’, ‘লভ অ্যান্ড আদার ড্রাগ্স’, ‘ইন্টারস্টেলার’, ‘দ্য ইনটার্ন’-এর মতো একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় অ্যানিকে।
‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ এবং ‘অ্যালিস থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস’ ছবিতে হোয়াইট কুইনের চরিত্রের পাশাপাশি ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইসেস’ ছবিতে ক্যাটউওম্যানের চরিত্রে অভিনয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যান অ্যানি।
অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যানিমেটেড ঘরানার ছবি এবং ধারাবাহিকেও কণ্ঠ দিয়েছেন অ্যানি। ‘দ্য সিম্পসন্স’ নামের ধারাবাহিক কার্টুন এবং ‘রিও’ নামের একটি অ্যানিমেটেড ছবিতে কণ্ঠ দিতে দেখা গিয়েছে অ্যানিকে।
উপার্জনের নিরিখে হলিউডের অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা অ্যানি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, অডিশন দেওয়ার সময় নাকি তাঁকে অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হত।
অ্যানি জানিয়েছিলেন, ২০০০ সাল নাগাদ তিনি যখন ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে যেতেন তখন সেখানে উপস্থিত কাস্টিং ডিরেক্টরেরা অ্যানিকে অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার অনুরোধ করতেন। অ্যানির দাবি, তখন অডিশন দিতে গেলে এই নিয়ম মেনে চলতেই হত।
অ্যানি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘এক জন অভিনেত্রীকে সকলের সামনে অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হতে বলা যেন খুব সাধারণ ছিল। বড় পর্দায় কোন জুটির সম্পর্কের রসায়ন ভাল ভাবে ফুটে উঠবে তা খতিয়ে দেখার জন্যই অডিশনের সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হত অভিনেত্রীদের।’’
অ্যানি বলেছিলেন, ‘‘আমি এক দিন অডিশন দিতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ আমাকে এক জন বললেন, ‘‘আজ ১০ জনকে আসতে বলেছি। তোমার অডিশন নেওয়া হবে। ১০ জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবে তুমি। উত্তেজনা কাজ করছে না তোমার?’’ এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক কী দেব তা বুঝতে পারছিলাম না। খালি মনে হচ্ছিল যে, আমার মধ্যে কোনও গোলমাল রয়েছে। কারণ আমি উত্তেজিত ছিলাম না। পুরো বিষয়টাই আমার কাছে নোংরা মনে হয়েছিল।’’
অডিশন দেওয়ার সময় একাধিক অভিনেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে অস্বস্তি বোধ করতেন অ্যানি। কিন্তু এই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেননি তিনি।
অ্যানির দাবি, ২০০০ সালের দিকে অডিশন নেওয়ার পদ্ধতি অন্য রকম ছিল। তাঁকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য কারও ছিল না। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে অ্যানির সম্পর্কে ধারণা বদলে যেতে পারে, সেই কারণেই চুপ করে থাকতেন অভিনেত্রী। অ্যানি বলেছিলেন, ‘‘তখন সময় অন্য রকম ছিল। এখন কাজকর্মের ধরনে পরিবর্তন এসেছে।’’
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সং ওয়ান’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন অ্যানি। অভিনয়ের পাশাপাশি এই ছবির প্রযোজনাও করেন তিনি। অ্যানির সঙ্গে ‘সং ওয়ান’ ছবির সহ-প্রযোজনা করেন তাঁর স্বামী অ্যাডাম শুলম্যান।
২০০৮ সালে একটি চলচ্চিত্র উৎসবে অ্যাডামের সঙ্গে পরিচয় হয় অ্যানির। প্রথম আলাপেই অ্যাডামকে পছন্দ হয়েছিল তাঁর। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অ্যানি এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘অ্যাডামকে দেখে আমার প্রথম দিনই মনে হয়েছিল যে ওকে আমি বিয়ে করব।’’
চার বছর অ্যাডামের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর ২০১২ সালে তাঁকে বিয়ে করেন অ্যানি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বাগ্দান পর্বে অ্যানির হাতে পান্না বসানো যে আংটিটি অ্যাডাম পরিয়েছিলেন, তার নকশা করেছিলেন অ্যাডাম নিজেই। একটি গয়না নির্মাণকারী সংস্থা রয়েছে অ্যাডামের। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা অ্যাডাম ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি গয়নার নকশাও করেন।
বিয়ের চার বছর পর ২০১৬ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন অ্যানি। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
মে মাসের গোড়ায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য আইডিয়া অফ ইউ’ নামের একটি ছবি। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অ্যানি।
হলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০২৪ সালের গণনা অনুযায়ী অ্যানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা। সমাজমাধ্যমে অ্যানির অনুগামীর সংখ্যা তিন কোটির গণ্ডি পার করে ফেলেছে।