বর্ষার ‘তাণ্ডবে’ ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরী হিমাচল। হিমাচল প্রদেশের চারদিকে এখন শুধু ধ্বংসের ছবি। প্রবল বর্ষণ, মুহুর্মুহু ভূমিধস, মেঘভাঙা বৃষ্টি, নদীর হুঙ্কারে বিপর্যস্ত সে রাজ্যের জনজীবন। মৃত্যুর সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বর্ষা শুরুর পর থেকে হিমাচলে আড়াইশোরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টাতেই সে রাজ্যে মোট ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার রাত। নৈশভোজ সেরে ফেলেছেন হিমাচলের সোলান এলাকার জাডোন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। কানে ঝমঝম বৃষ্টির আওয়াজ এবং মাথায় বর্ষণ সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা নিয়ে শুতে যাবেন যাবেন করছেন। আচমকাই কানে এল ব্যাপক গর্জন। মেঘ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হল হিমাচলের কোলের ছোট্ট গ্রাম জাডোনে।
মুহূর্তের মধ্যে জলের তোড়ে ভেসে গেল গ্রামের একাংশ। সেই ঘটনায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। ভেসে যাওয়া ছ’জনকে প্রশাসনের তরফে উদ্ধার করা হয়েছে।
রাত পোহাতে না পোহাতেই বিপর্যয়ের আর এক দৃশ্য দেখা গেল হিমালয়ের শিমলা শহরে। সোমবার সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিমলার সামার হিলের একটি শিবমন্দিরে জড়ো হয়েছিলেন কমপক্ষে ৫০ জন পুণ্যার্থী। ধূপ, ধুনো, ফুল, মালা দিয়ে শিবের পুজো করছিলেন পুরোহিত। হঠাৎ হালকা ফাটল দেখে গেল মন্দিরে।
পুণ্যার্থীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে মাটির নীচে ধসে গেল মন্দিরের একাংশ। কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে যান মন্দিরের ভিতরে থাকা পুণ্যার্থীদের অনেকে। সেই ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রায় ২০ জন এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুরু হয়েছে উদ্ধার কাজ। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রশাসনের। অন্য দিকে, ফাগলি এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ধসের কারণে মাটির নীচে বসে গিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
হিমাচলে ভূমিধসের কারণে সাতশোর বেশি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাস্তার উপরেই ভেঙে পড়েছে বড় বড় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। বেশ কয়েকটি রাস্তায় ভাঙন ধরেছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে অনেক গাড়ি।
শিমলা এবং চণ্ডীগড়ের সংযোগকারী শিমলা-কালকা জাতীয় সড়কে ধসের কারণে গত দু’সপ্তাহ ধরে যান চলাচল ব্যাহত। ধস নেমেছে হৃষিকেশ-চম্বা জাতীয় সড়কেও।
গত কয়েক দিন ধরেই হিমাচলে অবিরাম বৃষ্টিপাত চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর জলস্তর। ফুঁসছে খরস্রোতা বিপাশা নদী। মাঝে মধ্যেই জল উঠে আসছে রাস্তায়।
তার ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে হিমাচলের বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। খাবার এবং জলের অভাবে বহু এলাকায় হাহাকার শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এবং পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হিমাচলের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
প্রকৃতির রুদ্ররূপ কবে শান্ত হবে? এই প্রশ্নই এখন পাহাড়ি রাজ্যের জনগণের মনে। যদিও মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, হিমাচলে বৃষ্টিপাত এখনই থামছে না। বৃষ্টিপাত চলতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
প্রকৃতির রুদ্ররূপ কবে শান্ত হবে? এই প্রশ্নই এখন পাহাড়ি রাজ্যের জনগণের মনে। যদিও মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, হিমাচলে বৃষ্টিপাত এখনই থামছে না। বৃষ্টিপাত চলতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়া হিমাচল বর্তমানে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য। বর্ষার প্রকোপে ভেসে গিয়েছে একাধিক রাস্তাঘাট, বাড়ি, দোকানবাজার, স্কুল, চাষের জমি। রবিবার প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, বর্ষার তাণ্ডবে হিমাচলে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশের পরিস্থিতি এবং মৃত্যু নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু। মুখ্যমন্ত্রী সুখু হিমাচলের সাধারণ মানুষকে বাড়ির ভিতরে থাকার এবং নদীর ধারে না যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’র সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী সুখু জনগণকে ভূমিধসপ্রবণ এলাকাগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি এই সঙ্কটসময়ে পর্যটকদের সে রাজ্যে প্রবেশ না করার অনুরোধও তিনি করেছেন।