আশির দশকের শেষের দিকে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন আমির খান। দুই থেকে তিন বছর পর অভিনয় শুরু করেন অক্ষয় কুমার। হিন্দি ফিল্মজগতে ত্রিশ বছরের বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির এবং বলিউডের ‘খিলাড়ি’ অক্ষয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে কখনও একই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি দুই অভিনেতাকে। এর নেপথ্যকারণ জানেন কি?
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, আমিরের সঙ্গে কোনও ছবিতে কাজ করতেই চান না অক্ষয়। এবং তার জন্য আমিরই দায়ী বলে দাবি তাঁদের। আমিরই নাকি অক্ষয়ের সঙ্গে ছলচাতুরি করেছেন বলে অনুমান বলিপাড়ার একাংশের।
অক্ষয় এবং আমিরের একসঙ্গে অভিনয় না করার নেপথ্যকাহিনি জানতে হলে ফিরে যেতে হয় নব্বইয়ের দশকের গোড়ায়। ১৯৯২ সালে মনসুর খান পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিটি। আমিরের সঙ্গে এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় দীপক তিজোরি, আয়েশা জুলকা এবং পূজা বেদীকে। কিন্তু গোল বাধে শেখর মলহোত্রের চরিত্রকে ঘিরে।
‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে শেখরের চরিত্রে অভিনয় করেন দীপক। কিন্তু এই চরিত্রের জন্য প্রথমে অক্ষয়কে নির্বাচন করেন ছবি নির্মাতারা। নির্দিষ্ট চরিত্রের জন্য অডিশনও দেন অক্ষয়।
কিন্তু অডিশনের পর অক্ষয়কে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অক্ষয় বলেছিলেন, ‘‘আমি ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বাদ দিয়ে দেন ছবি নির্মাতারা। আমাকে জানানো হয় আমি নাকি ভীষণ বাজে অডিশন দিয়েছি, খারাপ অভিনয় করেছি।’’
শেষ পর্যন্ত শেখরের চরিত্রে অভিনয় করেন দীপক। বলিপাড়ার অন্দরমহল থেকে জানা যায়, অক্ষয়কে বাদ দিতে চাননি নির্মাতারা। আমিরই নাকি ছবি নির্মাতাদের অনুরোধ করেছিলেন দীপককে এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিতে।
বলিপাড়া সূত্রের খবর, তৎকালীন সময়ে আমিরের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল দীপকের। ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে সহ-অভিনেতা হিসাবে দীপককেই চেয়েছিলেন আমির। সেই অনুযায়ী ছবিনির্মাতাদের অনুরোধ করেন তিনি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, আমিরের কথামতো দীপককে ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হত বলে অক্ষয়কে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। অজুহাত হিসাবে অক্ষয়কে জানানো হয় যে তিনি অডিশনে খারাপ অভিনয় করেছেন।
‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিটি মুক্তির পর বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা না করলেও দর্শকের কাছে সকলের অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ছবি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছবি আমিরের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা।
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, যে চরিত্রে অক্ষয়ের অভিনয়ের কথা ছিল সে চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ অভিনেতা হারিয়ে ফেলেন আমিরের কারণে।
আমির যদি দীপকের নাম সুপারিশ না করতেন তা হলে ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে আমিরের সঙ্গে অভিনয় করতেন অক্ষয়।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, ছলচাতুরি করে অক্ষয়কে ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেন আমির। সেই কারণেই তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমিরের সঙ্গে আর অভিনয়ই করেননি অক্ষয়। যদিও এই বিযয়ে অক্ষয় কোনও মন্তব্য করেননি।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘একে ভার্সেস একে’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রের জন্য আমির এবং অক্ষয়কে পছন্দ ছিল ছবির পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের। কিন্তু সেই ছবিতে শেষ পর্যন্ত অভিনয় করেন অনুরাগ কাশ্যপ এবং অনিল কপূর।
২০১৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অক্ষয় অভিনীত ‘রুস্তম’ ছবিটি। শোনা যায়, ‘রুস্তমের’ আগে এই ছবির মূল কাহিনির উপর ভিত্তি করে বলি পরিচালক রাম মাধবনী একটি হিন্দি সিনেমা বানানোর চিন্তাভাবনা করেছিলেন। সেই ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমিরকেও প্রস্তাব দেন রাম।
কানাঘুষো শোনা যায়, রামের কাছে ছবির বিষয়বস্তু শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নেন আমির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বিষয়ে রামকে কিছুই জানাননি তিনি।
পরে বলি পরিচালক টিনু সুরেশ দেশাই ওই কাহিনির উপর ভিত্তি করে ‘রুস্তম’ ছবিটি তৈরি করেন। মুখ্যচরিত্রের জন্য অক্ষয়কে প্রস্তাব দেন তিনি। মুক্তির পর এই ছবি ভাল ব্যবসাও করে। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, এক সময় অক্ষয়কে ছবি থেকে বাদ দিয়েছিলেন আমির। তাই অভিনয়ের সুযোগ হাতছাড়া করে কর্মফল পেলেন আমির।