কাজের চাপে বা অন্য কোনও কারণে এক রাত জেগে থাকলেই পরের দিন গা ম্যাজম্যাজ করে, ঘুম ঘুম পায় সারা দিন, বিরক্তিকর লাগে। এ বার কল্পনা করা যাক, কেউ ৪৫৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, অর্থাৎ প্রায় ১৯ দিন টানা না ঘুমিয়ে থাকলেন! তাঁর কী হতে পারে!
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই নজির তৈরি করেছিলেন রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড। ১৯৮৬ সালে ৪৫৩ ঘণ্টারও বেশি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন তিনি।
সব থেকে দীর্ঘ সময় জেগে থাকার কারণে সেই সময় গিনেস বুকেও নাম তুলেছিলেন রবার্ট।
রবার্টের পর তাঁর সেই রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন আরও অনেকে। তবে তাঁদের কেউ সফল হননি। অনেকের পরিণতি হয়েছে ‘ভয়ঙ্কর’।
সেই ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা ভেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ১৯৯৭ সালে সেই চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
গিনেসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, রবার্টের দীর্ঘ সময় না ঘুমিয়ে কাটানোর রেকর্ড এখনও পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি।
গিনেসের তরফে সাধারণ মানুষকে সেই নজির তৈরির চেষ্টা না করার অনুরোধ করা হয়েছে। না ঘুমোনোর কারণে জীবনে ‘বড় বিপদ’ ঘটে যেতে পারে বলেও উল্লেখ রয়েছে ওয়েবসাইটে।
সংবাদমাধ্যম ইউনিলাডের মতে, ১৯৬৩ সালে দুই কিশোর তাদের স্কুলের বিজ্ঞান প্রজেক্টের জন্য দীর্ঘতম সময় জেগে থেকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার চেষ্টা করে। তবে তার পরিণতি হয়েছিল ভয়ানক।
সেই সময়ে সব থেকে বেশি ক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকার নজির ছিল হনলুলুর এক ব্যক্তির । তিনি প্রায় ১১ দিন না ঘুমিয়ে ছিলেন।
ওই দুই পড়ুয়া র্যান্ডি গার্ডনার এবং ব্রুস ম্যাকঅ্যালিস্টার পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিল যে দীর্ঘ সময় না ঘুমোলে মস্তিষ্কের উপর কী প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে না ঘুমিয়ে থাকার রেকর্ডও ভাঙতে চেয়েছিল তারা।
তবে তারা সেই সময় জানত না যে, নিজেদের সিদ্ধান্তের জন্য বাকি জীবন তাদের অনুশোচনা করে কাটাতে হবে।
ম্যাকঅ্যালিস্টার ২০১৮ সালে সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা বোকা ছিলাম। কম বয়সে অত ভেবেচিন্তে কাজ করিনি।’’
ম্যাকঅ্যালিস্টার আরও জানিয়েছেন, তিনি এবং বন্ধু গার্ডনার ঠিক করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক জন না ঘুমিয়ে থাকবেন এবং অন্য জন ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন।
এর পর কয়েন ‘টস’ করে তাঁরা ঠিক করেন গার্ডনার যত ক্ষণ সম্ভব তত ক্ষণ জেগে কাটাবেন। তাঁর উপর নজর রাখবেন ম্যাকঅ্যালিস্টার।
ম্যাকঅ্যালিস্টারের কথায়, ‘‘আমি ওর উপর নজর রাখার জন্য নিজেও জেগে ছিলাম। তিন দিন না ঘুমিয়ে দেখলাম যে, আমি কাগজের বদলে দেওয়ালে নোট লেখা শুরু করেছি।’’
গার্ডনার প্রকৃতপক্ষেই সেই সময় সব থেকে বেশি ক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকার নজির গড়েছিলেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক উইলিয়াম ডিমেন্টকে সে কথা জানিয়েওছিলেন তাঁরা।
তবে তত ক্ষণে গার্ডনারের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে গার্ডনার সময়-অসময়ে মেজাজ হারাতে শুরু করেন। তাঁর স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। মনঃসংযোগ নষ্ট হতে থাকে। পাশাপাশি, অজানা কারণে ভয় গ্রাস করতে থাকে তাঁকে। দৃষ্টিভ্রম হতে থাকে তাঁর।
গার্ডনারের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তার মস্তিষ্কের কিছু অংশ ঘুমিয়ে রয়েছে এবং কিছু অংশ সক্রিয় রয়েছে।
এর অনেক বছর পর ২০০৭ সালে, রেকর্ড ভাঙার আশায় টানা ১১ দিন না ঘুমিয়ে কাটান টনি রাইট নামে এক ব্যক্তি। ২৬৬ ঘণ্টা না ঘুমোনোর কারণে টনির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে।
টনি স্বীকার করেছিলেন, না ঘুমিয়ে দীর্ঘ সময় কাটানোর বহু বছর পরেও তিনি বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন-তখন রেগে যেতেন তিনি। অযৌক্তিক কথা বলতে শুরু করেছিলেন।
বিশ্বে আরও অনেকে বিভিন্ন সময়ে না ঘুমিয়ে নজির গড়়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কেউই রবার্টের নজির ভাঙতে পারেননি।