যে বিষয়ে ঝোঁক, সাধারণত তা নিয়েই পড়াশোনা করতে সন্তানকে পরামর্শ দেন বেশির ভাগ মা-বাবা। তবে পঞ্জাবের এক তরুণীর সঙ্গে এমন হয়নি। স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান শাখায় প়ড়াশোনা করার পর এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়েছেন বটে। ডাক্তারিও শুরু করেছিলেন। তবে তার পরেও সব ছেড়েছুড়ে পুলিশে চাকরি করছেন তিনি।
’৭৩-এর ব্যাচের আইপিএসে প্রথম হয়েছিলেন পঞ্জাবের দর্পণ অহলুওয়ালিয়া। তবে শিক্ষাজীবনের গো়ড়া থেকেই পুলিশ আধিকারিক হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেননি তিনি।
২৭ বছর বয়সি দর্পণের কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল চিকিৎসক হিসেবে। ২০১৭ সালে পাটিয়ালার সরকারি মেডিক্যাল কলেজে থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
স্নাতক হওয়ার পর সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ শুরু করেছিলেন দর্পণ। সেখানে মূলত স্থানীয় মহিলাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনা প্রসারের সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে জনসচেতনার প্রসার।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে স্তন ক্যানসারের পরীক্ষা শিবিরেরও আয়োজন করেছিলেন দর্পণ। সেই শিবিরের অঙ্গ হিসেবে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা মহিলাদের সঙ্গে কথাবার্তার পর পেশাবদলের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। চিকিৎসক নন, পুলিশ আধিকারিক হিসেবেই সমাজে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন দর্পণ।
ডাক্তারি ছেড়ে এ বার ইউপিএসসি (সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন দর্পণ। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশে চাকরি করার পিছনে তাঁর ঠাকুরদা নরেন্দ্র সিংহেরও ‘হাত’ ছিল। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ইউপিএসসি-র তোড়জোড় শুরু করেন।
পঞ্জাব পুলিশে দীর্ঘ দিন কর্মরত ছিলেন দর্পণের ঠাকুরদা নরেন্দ্র। অবসরের সময় ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি তথা চিফ ল’ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন তিনি।
দর্পণ বলেন, ‘‘বহু কাল আগেই পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন ঠাকুরদা। তবে তাঁর বহু কথা কানে আসত। ঠাকুরদা বহু বার বলতেন, কী ভাবে পুলিশের লোকেরা সমাজে বদল ঘটাতে পারে। এর পর আমিও পুলিশ অফিসার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় দফার প্রচেষ্টায় ইউপিএসসি-তে সফল! সেটি দর্পণের জীবনের একটি মোড়ঘোরানো ঘটনা বটে। তবে দর্পণের জীবনে আরও একটি মোড় এসেছিল পুলিশের ট্রেনিং চলাকালীন।
পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া বহু মেয়ের জীবনের কাহিনি জানতে পারেন দর্পণ। সে সবই হয়েছিল শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সময়— জানিয়েছেন তিনি।
দর্পণের দাবি, শিক্ষানবিশ থাকাকালীনই পুলিশের উর্দি গায়ে চাপানোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।
দর্পণের মতে, ‘‘এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়াটা আমার কাছে শুধুমাত্র পেশাবদল নয়। ডাক্তারি করা ছেড়ে পুলিশ অফিসার হওয়াটা কেরিয়ার বদলানো নয়। বরং আমার মনে হয়, আগে যা করছিলাম, সে কাজটারই পরিধি বেড়েছে। এই নতুন ভূমিকায় মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের আরও কাছে আসতে পেরেছি। কারণ বিপদে পড়লে প্রথমে পুলিশের কাছেই ছোটে মানুষজন।’’