Lok Sabha Election 2024

২০২১-২০২৪: কেউ ‘উচ্ছিষ্ট’, কেউ ‘অভিমানী’, কেউ বা ‘অবহেলিত’! লোকসভার আবহে দল বদলালেন কারা?

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও দলবদলের হিড়িক দেখা গেল বঙ্গ রাজনীতিতে। কেউ দল বদলালেন প্রার্থী হওয়ার আশায়। কেউ প্রার্থী না হতে পেরে ‘অভিমানে’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ১১:২৪
Share:
০১ ১৭

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে দলবদলের হিড়িক দেখা গিয়েছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ছেড়ে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছিলেন অনেকে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর অবশ্য অনেক ‘ঘরের ছেলে’ ঘরে ফিরে এসেছিলেন। আগে বিজেপি করতেন, পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, এমন উদাহরণও দেখা গিয়েছিল।

০২ ১৭

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও দলবদলের হিড়িক দেখা গেল বঙ্গ রাজনীতিতে। কেউ দল বদলালেন প্রার্থী হওয়ার আশায়। কেউ আবার প্রার্থী না হতে পেরে ‘অভিমানে’।

Advertisement
০৩ ১৭

একনজরে দেখা যাক এ বারের নির্বাচনে দলের ঝান্ডা বদলে ‘দলবদলু’ হলেন কারা। তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন কুনার হেমব্রম। গত ১৯ মে রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে দু’টি জনসভা সেরে তখন তিনি মেদিনীপুরের পথে। সে সময়ই বিজেপিতে ধাক্কা! ঝাড়গ্রামের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ কুনার যোগ দেন তৃণমূলে। জনসভায় তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নিয়েছিলেন তিনি। বিজেপির তরফে অবশ্য জানানো হয়েছিল, তাদের ‘উচ্ছিষ্ট’ দলে নিচ্ছে তৃণমূল।

০৪ ১৭

এর পরেই আসবে বরাহনগরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের নাম। গত ৬ মার্চ বিজেপিতে যোগ দেন তাপস। তৃণমূল এবং বিধায়কের পদ ছাড়েন তার কয়েক দিন আগে। তৃণমূল ছাড়ার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তাপস। তাঁর দলত্যাগের প্রসঙ্গে আরও একটি নাম উঠে এসেছিল। তিনি কলকাতা উত্তর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে তাপসের সম্পর্ক তৃণমূলে বরাবর ‘মধুর’ই ছিল। দলত্যাগের কথা ঘোষণার সময়েই তাপস জানান, তাঁর বাড়িতে ইডি হানার নেপথ্যে সুদীপের ‘হাত’ রয়েছে। তাপস বিজেপিতে যোগদানের পর লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে সুদীপের বিরুদ্ধে কলকাতা উত্তরেই টিকিট দিয়েছে বিজেপি।

০৫ ১৭

তালিকায় পরের নাম ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ অর্জুন সিংহের। বহু বছর ধরে ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক থাকার পরে ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুরের সাংসদ হন অর্জুন। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তিনি আবার তৃণমূলে ফেরেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের টিকিট পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয়নি। এর পর ‘অভিমানে’ আবার দল বদলান তিনি। গত ১৫ মার্চ তৃণমূল ছেড়ে আবার বিজেপিতে যান বিক্ষুব্ধ অর্জুন। টিকিটও পান।

০৬ ১৭

তিনি তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ। তবে ২০২১ সালে পুত্র শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকেই শিশির অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব যোজন। নামেই ছিলেন তৃণমূলে। বাকি সবটুকু পদ্মশিবিরে সমর্পিত। গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে একের পর এক পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করা নিয়ে তাঁর দিকে আঙুল তুলেছিল রাজ্যের শাসকশিবির। লোকসভা ভোটের আগে তিনি পুরোপুরি বিজেপিতে। প্রার্থী ঘোষণার আগেই শিশিরের ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ ছিল, বাংলার ৪২ আসনের ৪২টিতেই জিতবে বিজেপি। পরে পুত্র সৌমেন্দু অধিকারীকে বিজেপি তাঁরই লোকসভা কাঁথি থেকে প্রার্থী করার পর শিশির জানান, অনেক আগে থেকেই অধিকারী পরিবার বিজেপিতে। তাঁর আর আলাদা করে বিজেপিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শিশিরের মতো তাঁর পুত্র দিব্যেন্দু অধিকারীও তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ। তিনিও তৃণমূল থেকে দূরে। পিতা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ না দিলেও গত ১৫ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন দিব্যেন্দু।

০৭ ১৭

বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসে লোকসভার প্রার্থী হয়েছেন মুকুটমণি অধিকারী। তৃণমূলের রানাঘাটের প্রার্থী তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট আসন থেকে ‘চিকিৎসক’ এবং ‘মতুয়া’ মুকুটমণি প্রার্থী হওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু তখন সরকারি হাসপাতালে চাকরি করার কারণে দরকার ছিল নবান্নের ছাড়পত্র। সেটি তিনি পাননি। ফলে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের সমর্থনে ভোটের কাজে নেমেছিলেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে চাকরি ছেড়ে বিজেপির বিধায়ক হন মুকুটমণি। পরের পটভূমি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। এ বারেও তিনি আশা করেছিলেন, রানাঘাটে তাঁকেই টিকিট দেবে বিজেপি। কিন্তু আগেই জগন্নাথের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দেয় পদ্মশিবির। টিকিটের শিকে না ছিঁড়তেই বেঁকে বসেন মুকুটমণি। গত ৭ মার্চ সকলকে বিস্মিত করে এবং জগন্নাথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে মুকুটমণি যোগ দেন তৃণমূলে। রানাঘাটে জগন্নাথের বিরুদ্ধেই তাঁকে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল।

০৮ ১৭

কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ক হরকালী প্রতিহারও দলবদল করেছিলেন বিষ্ণুপুর লোকসভার টিকিটের আশায়। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। যদিও তৃণমূল তাঁকে বিষ্ণুপুরের প্রার্থী করেনি। শাসকদল ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতাকে।

০৯ ১৭

বাম এবং কংগ্রেস জোটকে ধাক্কা দিয়ে গত বছরের ২৯ মে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস। সাগরদিঘির উপনির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জেতার তিন মাসের মধ্যে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দেন তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে পতাকা নেন বাইরন। বিধানসভায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক ছিলেন তিনি। ফলে তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতাতেও পড়েননি।

১০ ১৭

গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিজেপি পরিষদীয় দলেও ভাঙন ধরে। কলকাতায় এসে তৃণমূলে যোগ দেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে সুমনকে উত্তরীয় পরিয়ে দলে আনুষ্ঠানিক যোগদান করান।

১১ ১৭

তৃণমূল গঠনের সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’ মুকুল রায় বাংলার রাজনীতিতে এগিয়েছিলেন উল্কার গতিতে। মমতা তাঁকে রেলমন্ত্রীও করেছিলেন। রাজ্যে তৃণমূল সরকার গড়ার পর দলের অলিখিত ‘দ্বিতীয়’ শীর্ষনেতা ছিলেন তিনিই। তবে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের পর থেকে দলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয় মুকুলের। ২০১৬ সালে সেই ‘দূরত্ব’ কমলেও সে ভাবে আর তৃণমূলে জায়গা তৈরি করতে পারেননি মুকুল। ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৯-এর লোকসভা নি‌র্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ‘অভাবনীয়’ সাফল্যের কৃতিত্ব অনেকে তাঁকেই দিয়েছিলেন। বরাবরের রাজ্যসভা সাংসদ মুকুল ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে লড়ে কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে বিধায়ক হন। কিন্তু এক মাসের মধ্যে পুত্র শুভ্রাংশুর হাত ধরে তৃণমূলে ফেরেন। যদিও শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখন তিনি পুরোপুরি অন্তরালে।

১২ ১৭

২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র টিকিটে আসানসোল থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। সেখানে জিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও হন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আরও বড় ব্যবধানে জেতেন তিনি। সে বারও মোদীর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। কিন্তু পরে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে বাদ পড়েন। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার পরেই বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন। তার পরে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে বিধায়ক হন বাবুল। এখন তিনি রাজ্যের মন্ত্রী।

১৩ ১৭

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। রায়গঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট পেয়ে জিতেও যান তিনি। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই রায়গঞ্জের বিদায়ী সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় তাঁর। তার পরেই বিজেপি ছেড়ে ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় কৃষ্ণের। কৃষ্ণকে এ বার রায়গঞ্জ লোকসভা আসন থেকে প্রার্থীও করেছে তৃণমূল।

১৪ ১৭

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জিতেও কয়েক মাসের মধ্যেই বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর তৃণমূলে আসা নিয়ে গুঞ্জন উঠতে শুরু করে মল্লভূমে। সেই জল্পনা উস্কে দেয় তন্ময়ের রাজনৈতিক কার্যকলাপও। দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন তিনি। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এর পর জল্পনা সত্যি করে তৃণমূলে যোগ দেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক।

১৫ ১৭

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। পরে অবশ্য আবার ‘পুরনো দল’ তৃণমূলে যোগ দেন। রাজ্যের শাসকদল তাঁকে এ বার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীও করেছে।

১৬ ১৭

তন্ময় এবং বিশ্বজিতের মতোই কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়ও ২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেন। তবে তিনি তন্ময়-বিশ্বজিতের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী। লোকসভা ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে আবার বিজেপিতে ফিরেছেন সৌমেন। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজের পরামর্শেই সেই ‘প্রত্যাবর্তন’ বলে খবর।

১৭ ১৭

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মন্ত্রিত্ব এবং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নিজের কেন্দ্র ডোমজুড়ে হারেন। তার পর বেশ কয়েক দিন বাংলার রাজনীতি থেকে ‘উধাও’ ছিলেন! বিজেপির সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে। ২০২১ সালেই ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফেরেন। দায়িত্ব পান ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠন পোক্ত করার। তবে খুব দাগ কাটতে পারেননি। এই লোকসভা ভোটে কাঁথি এবং তমলুক কেন্দ্রে ভোটের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই দিয়েছে তৃণমূল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement