Europa mission of NASA

ভিন্‌গ্রহের চাঁদে প্রাণ খুঁজতে ‘সমুদ্রমন্থনে’ নাসা! হেডিসের রাজ্যে পা রাখল ‘অর্ফিউস’

পৃথিবীর প্রাণের স্বরূপকে বুঝে নিয়ে ভিন্‌গ্রহে তার সন্ধান করতে চাইছে নাসা। কারণ নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রাণের সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য যে রাসায়নিক উপাদানগুলির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে সমুদ্রের গভীরে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৯
Share:
০১ ১৯

পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বে প্রাণের অনুকূল গ্রহের সন্ধান চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। পৃথিবীর প্রাণের স্বরূপকে বুঝে নিয়ে ভিন্‌গ্রহে তার সন্ধান করতে চাইছে নাসা। কারণ নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রাণের সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য যে রাসায়নিক উপাদানগুলির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে সমুদ্রের গভীরে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবীর সমুদ্রের গভীরে থাকা পরিবেশের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকতে পারে আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য অংশেও।

০২ ১৯

আর সেই কারণে সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা রহস্যের অন্দরে উঁকি দিয়ে মহাকাশকেই খুঁজছে নাসা। ভিন্‌গ্রহে প্রাণের উৎস খোঁজার সেই অনুসন্ধান পর্বে নাসার তালিকায় এ বার যুক্ত হয়েছে পৃথিবীর সমুদ্রের গভীর তলদেশ। অনন্ত মহাকাশের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টায় নাসার নজরে অতল সমুদ্রের রহস্যময় জগৎ।

Advertisement
০৩ ১৯

পৃথিবীপৃষ্ঠের ৭০ ভাগ সমুদ্রের ৮০ শতাংশই এখনও অজানা ও অধরা রয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। মানুষের পাঠানো কোনও যান পৌঁছতে পারেনি পৃথিবীর সেই দুর্ভেদ্য অঞ্চলে।

০৪ ১৯

সমুদ্র বিজ্ঞানীরা প্রায়শই বলে থাকেন চাঁদ বা মঙ্গলের পৃষ্ঠ সম্পর্কে আমাদের হাতে যে পরিমাণ তথ্য রয়েছে তার থেকেও কম রয়েছে সমুদ্রের তলদেশ সম্পর্কে। তাই অন্ধকার রহস্যময় সমুদ্রের গভীরে এ বার আলো ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে নাসা।

০৫ ১৯

মহাকাশ সংক্রান্ত রহস্যের কিনারা করার জন্য যে সংস্থাটির জন্ম হয়েছে সে হঠাৎ করে ‘সমুদ্রমন্থনে’ কেন আগ্রহী হয়ে উঠল? যেখানে সমুদ্রের গভীরে নানা রহস্য নিয়ে উন্মোচন করার জন্য ‘ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নামের একটি পৃথক সংস্থা রয়েছে আমেরিকার হাতে। তা হলে কেন আলাদা এই অভিযান? কেনই বা সেই অন্ধকার জগতের বাসিন্দা কারা, কেমনই বা তাদের জীবন সেই রহস্য উদ্‌ঘাটনে গবেষণা চালাচ্ছে নাসা?

০৬ ১৯

সমুদ্রের গভীরতম অংশে ভয়, ঝুঁকিতে ঘেরা এই অভিযানের জন্য ফ্লরিডায় সমুদ্রের নীচে তৈরি হয়েছে আস্ত একটি গবেষণাগার। যার নাম ‘অ্যাকোয়ারিয়াস রিফ বেস’। সেখানে প্রতি বছর নাসার কয়েক জন বিজ্ঞানী ও নভোচরেরা গবেষণা চালান। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি। এই নভোচরদের একটি বিশেষ নামে ডাকা হয়— ‘অ্যাকোয়ানটস’। এঁদের নিয়ে নাসার একটি প্রকল্প চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। নাম ‘নাসা’জ এক্সট্রিম এনভায়রনমেন্ট মিশন অপারেশনস’। ছোট করে যাকে ডাকা হয় ‘নিমো’ নামে।

০৭ ১৯

সমুদ্রের তলদেশে যাতায়াতের উপযোগী একটি বিশেষ যান তৈরি করেছেন নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবের ইঞ্জিনিয়ারেরা। এর নাম ‘অর্ফিউস’। নাসার মঙ্গলযান রোভারের মতো অত্যাধুনিক নেভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সমুদ্রযানটিতে। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে শক্তিশালী ক্যামেরা, যা সমুদ্রের তলদেশের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে।

০৮ ১৯

সমুদ্রের কোন অংশে তন্নতন্ন করে খোঁজ চালাচ্ছে নাসা তা জানলে চমকে উঠতে হবে। খোঁজ চলছে সমুদ্রের গভীরতম দুর্ভেদ্য অংশে। সমুদ্রপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটারের বেশি গভীরে পৌঁছে গিয়েছে ‘অর্ফিউস’। সমুদ্রের গভীরে এই অংশে একাধিক গিরিখাত রয়েছে। সেই খাত এত গভীর যে, গোটা এভারেস্ট ধরে যাওয়ার পরেও জায়গা থাকবে।

০৯ ১৯

এই অঞ্চলের আয়তন অস্ট্রেলিয়ার সমান। এই গভীরতায় জলের চাপ প্রবল। ফলে কোনও মানুষের পক্ষে এখানে যাওয়া অসম্ভব। গভীরতম এই অংশটির নাম হেডাল জ়োন। গ্রিক পুরাণের দেবতা হেডিসের নামে এর নাম। হেডিসকে মাটির নীচে থাকা অন্ধকার জগতের দেবতা বলে মনে করা হয় গ্রিক পুরাণে।

১০ ১৯

সেই হেডিসের রাজ্যে পা পড়েছে ‘অর্ফিউস’-এর। সমুদ্রের এই অংশে প্রাণের সঞ্চার কী ভাবে হল তা জানতেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশের আশ্চর্য জগৎকে। তবে এই অভিযানের আসল উদ্দেশ্য হল সৌর পরিবারের অন্য কোনও গ্রহে যদি সমুদ্র থাকে, তা হলে তাকে বোঝার আগে নিজেদের গ্রহটিকে পরীক্ষা করে নেওয়ার চেষ্টা। প্রাণের জন্য অনুকূল বলে যে পরিবেশ ধরা হয় তার সত্যতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতেই এই পরীক্ষা চালাচ্ছে নাসা।

১১ ১৯

মঙ্গলের রহস্যভেদ করতে পড়শি গ্রহের মাটিতে নেমেছে রোভার। এমনকি বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের কাছেও চলে গিয়েছে মহাকাশযান। ১৯৯৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে বৃহস্পতির দু’টি চাঁদ ইউরোপা আর গ্যানিমিডের পুরু বরফে মোড়া পিঠের নীচে জলের সাগর ও মহাসাগর থাকার প্রমাণ মিলেছে ইতিমধ্যেই।

১২ ১৯

সেই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১০ অক্টোবর ইউরোপার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে নাসার মহাকাশযান ইউরোপা ক্লিপার। ইউরোপা আকারে চাঁদের থেকে একটু ছোট। তাতেই রয়েছে পৃথিবীর চেয়ে বহু গুণ বড় প্রকাণ্ড সমুদ্র।

১৩ ১৯

বিজ্ঞানীদের অনুমান, জলসমৃদ্ধ একাধিক খনিজ রয়েছে এই উপগ্রহে। তার থেকেই জলের সৃষ্টি। উপগ্রহের পৃষ্ঠে উপস্থিত তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলির বিকিরণে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, তাতে হয়তো ওই জলসমৃদ্ধ খনিজগুলো থেকে জল বেরিয়ে আসে। এ ভাবেই হয়তো বহু বহু সময়কাল আগে তৈরি হয়েছিল সমুদ্র। এখন সেটি লুকিয়ে রয়েছে মোটা বরফের স্তরের নীচে।

১৪ ১৯

এই বরফের চাদর দেখেই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নজরে পড়েছিল ইউরোপা। সেই সংক্রান্ত অনুসন্ধানই নাসার ইউরোপা ক্লিপার মিশনের উদ্দেশ্য। পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের সাহায্য নিয়ে বৃহস্পতি পর্যন্ত পৌঁছতে হবে নাসার মহাকাশযানকে। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী বৃহস্পতি পর্যন্ত পৌঁছতে ছ’বছর লাগবে নাসার ইউরোপা ক্লিপারের। অর্থাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ বৃহস্পতির চারপাশে পাক খাবে এই মহাকাশযান।

১৫ ১৯

আমেরিকার অস্টিনে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্ক হেসি ইউরোপা নিয়ে একটি গবেষণা চালান। তিনি জানিয়েছেন, আকারে খুব বড় ও ভারী গ্রহ বৃহস্পতির অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে ইউরোপার পৃষ্ঠ সঙ্কোচন ও প্রসারণ হতে থাকে ক্রমাগত। যার ফলে এটির কেন্দ্র থেকে প্রভূত পরিমাণে ভূ-তাপীয় শক্তি নির্গত হয়।

১৬ ১৯

সেই তাপই পুরু বরফে মোড়া পিঠের নীচে থাকা ইউরোপার অন্দরকে উষ্ণ থাকতে সাহায্য করে। যার জন্য পুরু বরফে মোড়া পিঠের নীচে থাকলেও ইউরোপার মহাসাগরগুলির জল কনকনে ঠান্ডায় জমে গিয়ে বরফে পরিণত হয় না। শুধু তা-ই নয়, ইউরোপার পুরু বরফে মোড়া পিঠের উপর প্রচুর পরিমাণে রয়েছে অক্সিজেন, যা প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য অন্যতম প্রধান উপাদান বলে মনে করা হয়।

১৭ ১৯

পুরু বরফে মোড়া পিঠের নীচের লবণাক্ত জলের প্রবাহই সেই অক্সিজেনকে টেনে নিয়ে গিয়ে মেশায় উপগ্রহটির অন্দরে থাকা তরল জলের মহাসাগরে। কারণ পুরু বরফের চাদর ভেদ করে সরাসরি সেই অক্সিজেন মহাসাগরগুলিতে মিশতে পারে না।

১৮ ১৯

নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের ধারণা, ইউরোপার সমুদ্রের জল সামান্য অম্ল। এতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কিছু সালফেট লবণ রয়েছে। যে সব মাইক্রোবসের জীবনধারণের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড অনুকূল, তাদের অস্তিত্ব অতীতে এখানে থাকতেই পারে বলে করছেন বিজ্ঞানীরা। সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ মিলবে ইউরোপা ক্লিপার সফল ভাবে কাজ শুরু করলে।

১৯ ১৯

তবে ইউরোপা মানুষের বাসযোগ্য কি না অথবা সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা আছে কি না তা জানার অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক বছর।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement