দু’দফায় রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে মোট ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান! এমনটাই দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির।
ইডির দাবি, বাকিবুরের সঙ্গে তাঁর কর্মীদের হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাটে এই টাকা লেনদেনের কথা উঠে এসেছে। তিনি যে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীকে টাকা দিয়েছিলেন, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় তেমনটা নাকি স্বীকারও করে নিয়েছেন বাকিবুর।
ইডি জানিয়েছে, বাকিবুরকে গ্রেফতারির সময় যে মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তা ঘেঁটেই লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছে ‘এমআইসি’ নামক এক ব্যক্তিকে একাধিক বার টাকা দেওয়ার তথ্যও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই ‘এমআইসি’-র অর্থ ‘মিনিস্টার ইন চার্জ’ এবং সেই মন্ত্রী আর কেউ নন, খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়।
ইডির অভিযোগ, রেশন বণ্টন ‘দুর্নীতি’তে সরাসরি যুক্ত ছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালু। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। পরে ২০২১-এ তাঁকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইডির দাবি, বালু খাদ্যমন্ত্রী থাকার সময় বাকিবুরের ‘দুর্নীতি’তে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছিলেন তিনি।
ইডি জানিয়েছে, তদন্তে বাকিবুর এবং এক ব্যক্তির হোয়াট্সঅ্যাপে কথাবার্তা প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানেই মন্ত্রীকে টাকা দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি। ইডির দাবি, ২০২০ সালে ‘এমআইসি’কে ৬৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল।
‘এমআইসি’কে যে টাকা পাঠানো হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত কথা বাকিবুর এবং তাঁর এক কর্মীর হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তায় উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরও জানিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা ফোনের হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তায় ‘এমআইসি’কে আরও ১২ লক্ষ টাকা দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।
যে ব্যক্তির ওই ফোন, তিনি ইডিকে জানিয়েছেন যে, বাকিবুরের নির্দেশেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, ইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন জ্যোতিপ্রিয়কে ১২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাকিবুরও। তবে বাকিবুর জানিয়েছেন, তিনি জ্যোতিপ্রিয়কে ১২ লক্ষ টাকা ঋণ হিসাবে দিয়েছিলেন।
ইডি জানিয়েছে, তদন্তে বাকিবুর এবং এক ব্যক্তির হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তায় মল্লিক পরিবারের টিকিট বুকিং সংক্রান্ত তথ্যও উঠে এসেছে।
সেই তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রী-পরিবারের উড়ানের টিকিট কেটেছিলেন বাকিবুর। তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি, পরে ওই টিকিট বাতিল হয়ে যায়। টিকিট বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে নাকি টিকিট বাতিলের টাকা গুনতে হয়েছিল বাকিবুরকেই।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া ব্যবসায়ী বাকিবুরের সঙ্গে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের ‘পারিবারিক সম্পর্ক’-এরও হদিস পেয়েছে ইডি।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমে যে সকল তথ্য ইডির হাতে এসেছে, তা থেকেই এই যোগাযোগ স্পষ্ট হয়েছে।
ওই সূত্রের দাবি, দুই পরিবারের সদস্যেরা একযোগে একাধিক সংস্থা চালাতেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই সব সংস্থা আবার বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থায় কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগও করত!
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রেশন বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ১৪ অক্টোবর ওই দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগে ব্যবসায়ী বাকিবুরকে গ্রেফতারের পরে উঠে আসে বালুর নাম।
তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, হেফাজতে নিয়ে বাকিবুরকে জেরা করতেই তিনি বহু তথ্য দেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদের। যার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মন্ত্রীকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বালুকে গ্রেফতার করে ইডি।