দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিট কাটার পর আসন সংরক্ষিত হল কি না, তা টিকিটেই উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু সাঙ্কেতিক ভাবে। ইংরেজি শব্দগুলির আদ্যক্ষর দিয়ে তৈরি করা হয় ওই সঙ্কেত।
গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে ফেললে অবশ্য সব সঙ্কেতেরই পাঠোদ্ধার করা যায়। তবে যাত্রীদের সেই পরিশ্রম করতে দিতে চান না পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তাই তাঁরা নিজেরাই টিকিটে উল্লিখিত সেই সঙ্কেতগুলির ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
রেলের এই উদ্যোগের ফলে যাত্রীরা এ বার টিকিটের উপরে থাকা তিন বা চারটি ইংরেজি বর্ণ দেখেই বুঝতে পারবেন, তাঁদের টিকিট সংরক্ষিত কি না।
অনলাইন কিংবা অফলাইন— কোনও যাত্রী যে মাধ্যমেই টিকিট কেটে থাকুন না, তাঁকে একটি ‘পিএনআর’ (প্যাসেঞ্জার নেম রেকর্ড) নম্বর দেওয়া হয়। ১০ সংখ্যার এই নম্বর দিয়েই জানা যায় সংশ্লিষ্ট যাত্রী সংরক্ষিত আসনে বসে ট্রেন সফর করতে পারবেন কি না।
তা ছাড়াও ওই যাত্রী কোন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠবেন, কোন স্টেশনে নামবেন, টিকিট কাটার সময় যাত্রীর টিকিটটি সংরক্ষিত ছিল কি না, বর্তমানে অপেক্ষমানদের তালিকায় ওই যাত্রী কত নম্বরে রয়েছেন, এই সব কিছুই জানা যায় ‘পিএনআর’ নম্বর দেখে।
কোনও যাত্রীর টিকিটে যদি ‘সিএনএফ’ লেখা থাকে, তবে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। ইংরেজি ‘কনফার্মড’-এর তিনটি শব্দ নিয়ে লেখা হয় ‘সিএনএফ’। এটি লেখার অর্থ সংশ্লিষ্ট যাত্রী তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করা সংরক্ষিত আসনে বসেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
ট্রেনের টিকিটে থাকা আর একটি খুব সাধারণ সাঙ্কেতিক কোড হল ‘আরএসি’। এর পুরো কথাটি হল ‘রিজার্ভেশন এগেনস্ট ক্যানসেলেশন’। অর্থাৎ অন্য যাত্রী টিকিট বাতিল করলে তবেই অপেক্ষমান যাত্রী সংরক্ষিত আসনের অধিকারী হবেন।
অবশ্য ‘আরএসি’ কোড লেখা টিকিট নিয়ে কেউ ট্রেনে সফর করতেই পারেন। তবে তাঁর জন্য কোনও আসন নির্দিষ্ট থাকবে না। ‘আরএসি’ কোড সম্বলিত টিকিট নিয়ে সফর করা অন্য যাত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাত্রী আসন ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।
যদি কোনও যাত্রীর টিকিটে ‘আরজিএনডব্লিউএল’ লেখা থাকে, তবে বুঝতে হবে, তিনি আপাতত অপেক্ষমান যাত্রীদের তালিকায় রয়েছেন। ‘জিএনডব্লিউএল’, অর্থাৎ ‘জেনারেল ওয়েটিং লিস্ট’ বা সাধারণ অপেক্ষমান তালিকা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য টিকিট নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি।
এই তালিকায় নাম থাকার অর্থ সংরক্ষিত আসনের টিকিট থাকা কোনও যাত্রী টিকিট বাতিল করলে অনুক্রম অনুসারে অপেক্ষমান যাত্রীরা সংরক্ষিত আসনের টিকিট পাবেন। এটি দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিটের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ‘ওয়েটিং লিস্ট’গুলির মধ্যে অন্যতম।
টিকিটে ‘সিকেডব্লিউএল’ বা ‘টিকেডব্লিউএল’ লেখা থাকলে তার অর্থ তৎকাল কোটার অপেক্ষমান তালিকা। ইংরেজিতে এটি ‘তৎকাল কোটা ওয়েটিং লিস্ট’। জরুরি প্রয়োজনে কোনও যাত্রীর সংরক্ষিত আসনের টিকিটের প্রয়োজন হলে তিনি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তৎকাল টিকিট কাটতে পারেন। তৎকাল কোটার জন্য রেল ‘সিকে’ সঙ্কেত ব্যবহার করে।
আর তৎকাল কোটায় কাটা টিকিটগুলির জন্য যে অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশিত হয়, তাকে বলে ‘সিকেডব্লিউএল’। সাধারণত ট্রেন ছাড়ার এক দিন আগে এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়।
টিকিটে যদি ‘আরএসডব্লিউএল’ লেখা থাকে, তবে তার অর্থ হল মধ্যবর্তী স্টেশনগুলি থেকে কাটা টিকিটের অপেক্ষমান তালিকা। কোনও ট্রেনের যাত্রাপথের মাঝের কোনও স্টেশন থেকে যাত্রীদের আসন বুকিং করা হলে এবং সেই আসনগুলি যাত্রা শুরুর স্টেশন থেকে ভর্তি না-হলে এই অপেক্ষমান তালিকা দেওয়া হয়। এই তালিকায় টিকিট নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
একটি ‘আরএসি’ টিকিট নিয়ে যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু আসন পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয় না। যদি আপনার ‘আরএসি’ টিকিট থাকে, তা হলে এর অর্থ হল আপনাকে অপর এক যাত্রী, যার কাছে ‘আরএসি’ টিকিট আছে, তাঁর সঙ্গে আসন ভাগ করে নিতে হবে।
যদি টিকিটে ‘পিকিউডব্লিউএল’ লেখা থাকে, রেলের পরিভাষায় তার অর্থ ‘পুলড কোটা ওয়েটিং লিস্ট’। এই অপেক্ষমান তালিকাকে একাধিক ছোট রেল স্টেশনের মধ্যে ভাগ করা হয়। এই তালিকায় সেই সব যাত্রীদের নাম থাকে, যাঁরা ট্রেনের যাত্রা শুরুর স্টেশন থেকে শেষ স্টেশনের আগের কোনও স্টেশনে অথবা মধ্যবর্তী যে কোনও দুই স্টেশনের মধ্যে সফর করেন।
কোনও যাত্রীর টিকিটে যদি ‘আরএলডব্লিউএল’ লেখা থাকে, তার অর্থ হল দূরবর্তী অবস্থানের অপেক্ষমান তালিকা। কোনও ট্রেনের যাত্রাপথে যদি বিখ্যাত শহর থাকে, তা হলে সেই শহরে যাওয়ার জন্য মধ্যবর্তী স্টেশনগুলি থেকে আসন বুকিংয়ের ক্ষেত্রে এই অপেক্ষমান তালিকা দেওয়া হয়। এই অপেক্ষমান তালিকাভুক্ত টিকিটগুলিকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে টিকিট নিশ্চিত হবে কি না, তা নির্ভর করে সংরক্ষিত আসনের যাত্রীরা টিকিট বাতিল করছেন কি না, তার উপরে।
কোনও যাত্রীর টিকিটে যদি ‘আরকিউডব্লিউএল’ লেখা থাকে, তবে রেলের পরিভাষায় এর অর্থ হল অনুরোধের অপেক্ষমান তালিকা। কোনও ট্রেনের দু’টি মধ্যবর্তী স্টেশনের মধ্যে সফর করার জন্য টিকিট বুক করলে এবং সেই টিকিট সাধারণ অথবা পুলড কোটার অন্তর্ভুক্ত না হলে এই অপেক্ষমান তালিকা দেওয়া হয়।
যাত্রীদের উদ্দেশে পূর্ব রেলের আর্জি, ট্রেনে ওঠার আগে ১৩৯ নম্বরের মাধ্যমে পিএনআর স্টেটাসটা চেক করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিং মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীরা একটি বার্তা পাবেন। সেই বার্তার পর তাঁরা জেনে যাবেন, তাঁদের টিকিট সংরক্ষিত, না কি তা নয়। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারবেন যাত্রীরা।