বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা করার পর থেকেই তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত ধরে নিয়েছিল রাজনৈতিক মহল। বৃহস্পতিবার তাতে সিলমোহর পড়ল। ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী মুর্মু।
রাষ্ট্রপতি হিসাবে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটমূল্য ছিল ৫,৪০,৯৯৬। সব রাউন্ডের গণনার শেষে দ্রৌপদী পেয়েছেন ৬,৭৩,৮০৩ মূল্যের ভোট। অন্য দিকে, বিরোধী জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হার ৩,৮০,১৭৭ মূল্যের ভোট প্রাপ্তি হল।
দ্রৌপদী প্রার্থী হওয়ায় এনডিএ শরিক না হওয়া সত্ত্বেও ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের শাসকদল যথাক্রমে বিজেডি ও জেএমএমের সমর্থন মিলেছে। এই রণকৌশলেই দেশের সর্বোচ্চ পদে প্রথম কোনও জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি আসীন হলেন।
ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের সাঁওতাল পরিবারের সন্তান দ্রৌপদীর অতীতে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসাবে সাংবিধানিক পদের দায়িত্বভার সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তবে রাইসিনা হিলের পথে এই যাত্রা খুব একটা সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্রৌপদীর জীবন। ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ময়ূরভঞ্জের বাইদাপোসি গ্রামে জন্ম তাঁর। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরোনোর পর শিক্ষকতা করতেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচনে লড়েছিলেন।
১৯৯৭ সালে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে ওড়িশারই রায়রংপুর পুরসভার কাউন্সিলর হন দ্রৌপদী।
২০০০ সালে রায়রংপুর পুরসভারই চেয়ারপার্সন হন দ্রৌপদী। ২০০৪ সালে ওড়িশার বিধানসভা নির্বাচনে এই রায়রংপুর কেন্দ্র থেকেই তিনি জিতেছিলেন। এক সময় বিজেপির তফসিলি উপজাতি মোর্চার ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন এই জনজাতি কন্যা।
২০০০ সালে নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বাধীন বিজেডি-বিজেপি সরকারের বাণিজ্য ও পরিবহণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হয়েছিলেন দ্রৌপদী। যদিও তার মেয়াদ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ওই বছরের মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্তই মন্ত্রিপদে থেকেছেন তিনি।
পরে ২০০২ সালে আবার মন্ত্রী হন দ্রৌপদী। ওই বছর অগস্ট মাস থেকে ২০০৪ সালের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মৎস্য ও পশুপালন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২০০৭ সালে ওড়িশার সেরা বিধায়ক হিসাবে ‘নীলকণ্ঠ পুরস্কার’ পান দ্রৌপদী।
২০০৯ সালে বিজেডির সঙ্গে বিজেপির জোট ছিন্ন হয়ে যায়। ওই বছর ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছিলেন দ্রৌপদী।
দ্রৌপদীর রাজনৈতিক জীবন সফল হলেও ব্যক্তিগত জীবন খুব মসৃণ নয়।
দ্রৌপদীর জীবনে এসেছে পুত্রশোক। দুই ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। হারিয়েছেন স্বামীকেও। এক মেয়ে রয়েছে তাঁর।