সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না গৌতম আদানির। মাস তিনেক আগেও তিনি শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন। ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছিলেন প্রথম স্থানটির দিকে। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন হয়।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট আদানি গোষ্ঠীকে যেন আকাশ থেকে টেনে নামিয়ে দিয়েছে একেবারে মাটিতে। জানুয়ারি মাস থেকে তাদের শেয়ার ক্রমেই পড়তির দিকে। বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ধনকুবের গৌতম।
বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় এখন আর আদানিকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। ২৫ নম্বরে নেমে গিয়েছেন তিনি। তাঁকে টপকে ভারত তথা এশিয়ার ধনীতম শিল্পপতি এখন মুকেশ অম্বানী।
চলতি অর্থবর্ষের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন আদানি। তাঁর গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার ঘাড়ে চেপেছে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা। আদানিদের ঋণের পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে আদানিদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গৌতমের সম্পত্তি কয়েক মাসের ব্যবধানে ৫০ শতাংশ কমে গিয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলিতে আদানি গোষ্ঠীর ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে শুধুমাত্র দেশীয় ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকেই ধার নিতেন তাঁরা। বিদেশে ঋণের বোঝা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়েনি।
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদেশে একাধিক আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কে আদানির ঋণ প্রায় এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ পর্যন্ত তাঁদের মোট ঋণের ২৯ শতাংশই বিদেশের মাটিতে। গত সাত বছরেও আদানি গোষ্ঠীকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।
আদানিদের ঋণের রেখচিত্র অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৯ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে এই গোষ্ঠীর ঋণ জমেছে। দ্রুত গতিতে প্রসার লাভের ফলেই এই ঋণের প্রাচুর্য বলে মনে করছেন অনেকে।
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশীয় ব্যাঙ্কে আদানি গোষ্ঠীর ঋণের পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৩২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কে ঋণ ২০১৬ সালের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে আরও ১৪ শতাংশ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে আদানিদের মোট ঋণ জমেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। তবে ঋণ যতই হোক, আদানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র চলতি মাসেও দাবি করেছেন, তাঁদের কোনও সংস্থাই বড়সড় কোনও ঝুঁকির মুখে নেই।
আশির দশকে ব্যবসা শুরু করেছিলেন গুজরাতের গৌতম। বন্দর এবং কয়লার ব্যবসায় নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিলে তিলে। সময় যত এগিয়েছে, তাঁর বাণিজ্যের শিকড় আরও দৃঢ় হয়েছে। শাখাপ্রশাখাও ডালপালা মেলেছে নানা দিকে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। যা ভারতে তো বটেই, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতেও তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। আদানিদের শেয়ার হু হু করে নেমে গিয়েছে।
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তারা কারচুপি করে নিজেদের শেয়ারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। এ ভাবে লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক বড় ঋণ সময়ের আগেই শোধ করে দিয়েছেন আদানিরা। বিনিয়োগকারীদের ভরসা ফেরানোর জন্য নানা পদক্ষেপ করেছেন। বড় প্রজেক্টের কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছেন।
শেয়ার বাজারের সিংহাসন পুনরায় ফিরে পেতে মরিয়া গৌতম। তবে ঋণের বোঝা তাঁর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষতিও হয়েছে বিপুল। যদিও জানুয়ারি মাসে যে ভাবে তাঁর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা থেকে কিছুটা সামলে উঠেছেন আদানি।
এক সময় বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় তিনি নেমে গিয়েছিলেন ৫০-এরও নীচে। সেখান থেকে এপ্রিলে আবার ২৫ নম্বরে উঠে এসেছেন, যা ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।