ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখে শিখেছিলেন। এলাকার সব থেকে ‘খারাপ দেখতে বাড়ি’কে কয়েক মাসে পরিণত করেছিলেন সব থেকে সুন্দর বাড়িতে। বাড়ি মেরামতে খরচ করেছিলেন ১৫ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এখন তার দাম দ্বিগুণেরও বেশি।
হার্টফোর্ডশায়ারের সেন্ট অ্যালবানস শহরে রয়েছে সেই বাড়ি। ২০১৪ সালের জুন মাসে কিনেছিলেন লিজ়ি উইলিয়ামস এবং তাঁর স্বামী ফিলস। লিজ়ির বয়স ৩৭ বছর। ফিলের ৪০।
বাড়িতে ছিল চারটি বেডরুম। চার বছর সেই বাড়িতে কেউ বসবাস করেননি। এক ঝলক দেখলেই বোঝা যেত সে কথা। ছাদে ফুটো। বাড়ির সামনের বাগানে গাছপালা সব মরে গিয়েছিল। এক তলার মেঝেয় শ্যাওলা জন্মেছিল।
উইলিয়াম দম্পতির দাবি, ওই চত্বরে এর থেকে ‘কুৎসিত’ বাড়ি আর একটিও ছিল না। ন’বছর ধরে সেই বাড়ির হাল ফিরিয়েছেন তাঁরা। ২০২৩ সালে শেষ হয়েছে বাড়ির কাজ।
দম্পতির দাবি, সবটাই তাঁরা করেছেন নিজেদের হাতে। আর এ ভাবে নাকি বাঁচিয়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২১ কোটি টাকা।
বাড়িতে জলের কল বসানো, বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রান্নাঘরে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরির কাজ নিজের হাতে করেছেন ওই দম্পতি। কারও সাহায্য নেননি। বাড়িতে সুইমিং পুলও তৈরি করেছেন নিজেরাই। দম্পতির দাবি, সবটাই করেছেন ইউটিউব দেখে।
একমাত্র বাড়িটির ছাদ তৈরির জন্য লোক ভাড়া করেছিলেন উইলিয়ামস দম্পতি। ছাদের টালি ভেঙে পড়েছিল। ফুটো হয়ে জল পড়ত। সেই ছাদ এখন দেখলে আর বোঝা যাবে না।
লিজ়ি মার্কেটিংয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত। ওই দম্পতি তাঁদের সঞ্চয়ের সবটুকু ঢেলে দেন ভাঙাচোরা বাড়ির সংস্কারে।
লিজ়ি জানান তাঁর স্বামী ফিলস খুব খুঁতখুঁতে। কী ভাবে বাড়ির সংস্কার হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেন। ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ নেন।
২০১৪ সালে বাড়িটি কেনার ছ’মাস পর সেখানে উঠে যান লিজ়িরা। বাড়ির দু’টি ঘরে থাকতে শুরু করেন। বাকি বাড়ি সারানোর কাজে হাত দেন।
লিজ়ি জানান, দোতলার একটি ঘর নিজেদের শোওয়ার ঘরে পরিণত করেন ওই দম্পতি। পাশের ঘরটিকে বসার ঘর হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
গোটা বাড়িতে ছিল চারটি বেডরুম। সেগুলিকে আরও বড় করে নতুন করে গড়তে শুরু করেন ফিল আর লিজ়ি। গাড়ি রাখার গ্যারাজ ভেঙে চারটি ঘর তৈরি করেন। নতুন করে তৈরি করেন জিনিসপত্র রাখার ঘর, একটি শৌচালয়, পড়ার ঘর, জামা-কাপড় রাখার ঘর।
বাড়ির পিছনে তৈরি করেন বাগান। সেই বাগানে যাওয়ার জন্য সুন্দর একটি সিঁড়িও তৈরি করেন। বাড়ির নীচে অনেকটা ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানে গুদামঘর তৈরি করেন ওই দম্পতি।
বাড়ি সংস্কারের কাজ যত এগোতে থাকে, তত বৃদ্ধি পেতে থাকে খরচ। এক সময় সঞ্চয়ের টাকা শেষ হয়ে যায় উইলিয়ামস দম্পতির। তখন পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করেন।
লিজ়ি জানালেন, দিনগুলো খুব কঠিন ছিল। তবু কখনও হতাশ হননি তাঁরা। হাল ছাড়েননি।
লিজ়ির মতে, সব থেকে মন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রান্নাঘর। উচ্চতা প্রায় সাড়ে তিন মিটার, যা বেশির ভাগ বাড়িতেই থাকে না।
আর তাঁদের সব থেকে প্রিয় জায়গা স্নানঘর। সেখানে শাওয়ারের নীচে রয়েছে বেঞ্চ। যত ক্ষণ খুশি বসে বসে ভেজা যাবে। তার নাম দিয়েছেন দম্পতি ‘হ্যাংওভার বেঞ্চ’। স্নানঘরে টিভিও রয়েছে।