জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার কন্ডোম। সঙ্গমের সময় তা ব্যবহারের নিদান দেন সকলেই। বহু দেশে কন্ডোম ব্যবহার এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা প্রচার করে খোদ সরকার।
দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ডোমের দাম কমিয়ে দেওয়া হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কোনও কোনও দেশে তো কন্ডোম বিনামূল্যেই বিক্রি করা হয়। সরকারি উদ্যোগে এই জন্মনিরোধক বস্তুটিকে সহজলভ্য করে তোলা হয়।
কিন্তু কন্ডোম নিয়ে উল্টো নীতিও আছে। কোনও কোনও দেশে কন্ডোম ব্যবহারের পক্ষপাতী নয় সরকার। সেখানে নারী-পুরুষের মিলনের ক্ষেত্রে স্থির করে দেওয়া হয়েছে কঠোর কিছু নিয়ম।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর প্রান্তে মাঝারি আকারের দেশ ভেনেজ়ুয়েলা। এই দেশে কন্ডোম ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি রয়েছে। সরকারের তরফে কন্ডোমের ব্যবহার সহজসাধ্য করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ভেনেজ়ুয়েলায় এক একটি কন্ডোমের দাম আকাশছোঁয়া। একটি কন্ডোমের পরিবর্তে ভারতের বাজারে ওই দামে দু’টি টেলিভিশন সেট কিনে ফেলা সম্ভব। এমনকি, ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এসির দামও এত বেশি নয়।
ভেনেজ়ুয়েলায় একটি কন্ডোমের ন্যূনতম দাম ৬০ হাজার টাকা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। সাধারণ কন্ডোম এই দামেই কিনতে হয় সে দেশের নাগরিকদের। উন্নত ব্র্যান্ডের আরও ভাল মানের কন্ডোম কিনতে চাইলে খরচ আরও বেশি।
গর্ভনিরোধক ওষুধও ভেনেজ়ুয়েলায় আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি করা হয়। সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারেন না। ফলে পরিকল্পনা ছাড়াই সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হন তাঁরা।
কন্ডোম বা গর্ভনিরোধক বড়ির দাম কেন এত বেশি দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে? এর নেপথ্যে জড়িয়ে আছে দীর্ঘ অর্থনৈতিক সঙ্কটের ইতিহাস।
২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভেনেজ়ুয়েলার জনসংখ্যা ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ এবং মহিলার অনুপাত ২.৪৩ শতাংশ এবং ০.৯৯ শতাংশ।
গত কয়েক বছর ধরে প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে ভেনেজ়ুয়েলা। দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও সাধারণের সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে।
ভেনেজ়ুয়েলায় গর্ভপাত বেআইনি। আইনের বিচারে গর্ভপাতে কঠিন শাস্তি হতে পারে। বেআইনি ভাবে গর্ভপাত যাঁরা করাতে চান, ভেনেজ়ুয়েলার আইনের চোখে তাঁরা অপরাধী।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে গর্ভপাত যদি আবশ্যিক হয়, সরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে সেই পরিষেবা মেলে না। অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে তার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হয় মহিলাদের।
সরকারের এই নীতির কারণেই দেশটির দারিদ্র কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে বলে মত একাংশের। গর্ভপাত বেআইনি হওয়ায় সময়ে অসময়ে সে দেশের মহিলারা সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য হন। এর পর পরিবারের সেই নতুন সদস্যের খরচ বহনে নাভিশ্বাস ওঠে দম্পতির।
ভেনেজ়ুয়েলা সরকারের এই কড়া নিয়মকানুনের কারণে সেই দেশে নাবালিকাদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায় না থাকায় সঙ্গমে কোনও সুরক্ষা থাকে না।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৫ সালের একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, নাবালিকা এবং কমবয়সি তরুণীদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা ভেনেজ়ুয়েলাতেই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের আর কোনও রাষ্ট্রে সন্তানসম্ভবা কিশোরীর সংখ্যা এত বেশি নয়।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাঝে কন্ডোমের দাম উত্তরোত্তর বেড়েছে ভেনেজ়ুয়েলায়। সরকারের তরফে সে বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ না করার অভিযোগ উঠেছে। এতে সে দেশের নাগরিকেরা মোটেই খুশি নন। বরং সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন নাগরিকদের একাংশ।
শুধুমাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণ নয়, যৌনরোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কন্ডোম। তা ব্যবহার করতে না পারায় ভেনেজ়ুয়েলাবাসীর একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সরকারের নীতি সমালোচিত হচ্ছে সমাজমাধ্যমেও।
২০২০ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ভেনেজ়ুয়েলায় প্রতি এক জন মহিলা দুই বা তার বেশি সংখ্যক সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। দেশের জন্মহার মহিলা প্রতি ২.২৩, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে অন্যতম সর্বোচ্চ। জন্মহারে ভেনেজ়ুয়েলার আগে আছে প্যারাগুয়ে, বলিভিয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশ।